বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ধ্যান

ধ্যান কি কথার কথা, যার তার হবার নয়। জগৎ শুদ্ধ লোকেরই ঐ কথা; কেউ ফুটে বলে ফেলে, কেউ বা চেপে রাখে মাত্র। ঠাকুরকে মনে মনে ডাকবে, প্রার্থনা কর্‌বে ও আপনার ভেবে আব্‌দার কর্‌বে। সময়ে ঠিক হবে, ভাবনা নাই, তিনি পরম দয়াল। ঠাকুরের কথা—“মন্ত্র নয়, মন তোর”। যদি ভগবানে মন দিতে পার তাঁকে লাভ কর্‌঩বে। দীক্ষা দরকার। একটা পথ ধ’রে গমন কর্‌তে হয়, দীক্ষা সেই পথ, গুরু ঐ পথ-প্রদর্শক। গুরুকরণ আবশ্যক, ইহা শাস্ত্র-বাক্য। শাস্ত্র মান্‌তে হয় স্বাধীন চিন্তা ক’রে সবাই ভূঁইফোঁড় হয় না। ব্যাকুলতাই এক মন্ত্র, ইহা মহা ভাগ্যের বিষয়; যার তার হয় না। ভারতে আছে—একলব্য নামে এক ভক্ত দ্রোণের মৃন্ময় মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করে ধনুর্ব্বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। কিন্তু ঐ এক মাত্র একলব্যের কথাই শুন্‌তে পাওয়া যায়। যার নিকট হ’তে দীক্ষা নিতে ইচ্ছা করেছ, পুনঃ পুনঃ তার কাছেই শিক্ষা কর্‌তে চেষ্টা কর।
ঠাকুরের কথা পড়েছ?—“খান্‌দানি চাষা” হতে হবে। এক বছর ধান ভাল হল না বলে যে হাল গরু বিক্রী করে বসে থাক্‌তে হবে তার মানে কি? লেগে থাক্‌঩তে হবে। ধ্যান জম্‌বে না বলে একেবারে হতাশ্বাস হওয়া ভক্তের লক্ষণ নয়। ভক্ত প্রভুকে সুখে দুঃখে, রোগে শোকে, শান্তি অশান্তিতে, সকল সময়েই ধরে থাকে। “মানুষ গুরু মন্ত্র দেয় কানে, আর জগৎ গুরু মন্ত্র দেন প্রাণে”—একথা ঠাকুর বল্‌তেন। সেই জগৎগুরুকে ধরে থাক্‌তে পারলে তিনি শুদ্ধা বুদ্ধি দেন, তাঁহার পাদপদ্মে অনুরাগ, প্রেম প্রভৃতি দান করে থাকেন। অতএব যে সর্ব্বদা তাঁর স্মরণ মনন রাখে তার আর কিসের দরকার। সর্ব্বদা মনে রাখিয়া চলিও যে তুমি প্রভুর সন্তান, তাঁর দাস। তোমার মধ্যে যেন হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষ্যা স্থান না পায়। সহ্য করাই যেন তোমার জীবনের একমাত্র মূল-মন্ত্র হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন এই সহ্য গুণের এক অপূর্ব্ব আদর্শ। ঠাকুর তাঁর সহিষ্ণুতার কত কথাই শুনাইয়াছেন। শেষে কহিতেন “শ, ষ, স,—যে সয় সেই রয়, যে না সয় সে নাশ হয়। তিনটে শ, ষ, স, কেন জানিস? হে জীব, সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর, আর না সইলে নাশ নিশ্চয়।” আমরা ঠাকুরের সংসারে শিখ্‌঩তে এসেছি এই—
“বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”
নারায়ণ-বোধে জীবের সেবা কত্তে আমাদের জন্ম; এই আমাদের সাধন, ভজন, ত্যাগ, তপস্যা। লোকের ভাল মন্দ দেখবার আমাদের সময় কই? উহা আমাদের ধর্ম্মবিরুদ্ধ। সকলের সুবিধাজনক স্থান একটা চাই, দরিদ্র, দুর্ব্বল, পতিত, মূর্খ—এদেরই আপনার কর্‌তে হবে। এও বলি, এক দলকে ভালবাস্‌তে গিয়ে, অন্য বড় লোকদের ঘৃণা না করিয়া বসি। এদিকেও দৃষ্টি রাখিবে। “ব্রহ্ম হ’তে কীট পরমাণু সর্ব্বভূতে সেই প্রেমময়।”
সকলের সঙ্গে মিলে মিশে চলতে হবে বাবা, এই শ্রীশ্রীপ্রভুর ও বিবেকানন্দ স্বামীর শিক্ষা। স্থায়ী স্থান দেখে যেতে তোমার ইচ্ছা, ইহার নাম দৃঢ় নিষ্ঠা। এই নিষ্ঠা না থাকলে মানুষ নিজের ও দেশের উন্নতি করতে পারে না। আমাদের দেশ কি রকম হবে জান? “স্বদেশো ভুবনত্রয়ম্‌।” এই একটা দেশ আমাদের নয়, সারা পৃথিবীই আমাদের দেশ জান্‌তে হবে। সমস্ত জীবের জন্য প্রার্থনা কর্‌তে হবে, কাজ কর্‌তে হবে। ‘আমি’ ‘আমার’—অজ্ঞান, মোহ, ইহা দূর করা চাই। প্রভু তুমি, তোমার জগৎ, আমি তোমার একজন সেবক মাত্র! কথায় উদার নয় কাজে দেখাতে হবে। আবার ঠাকুরের পাত্‌কো কাটার নিষ্ঠা চাই—এক জায়গায়। তুমি সাধনায় সিদ্ধ হও ইহা আমার অন্তরের প্রার্থনা জান্‌বে। 
‘স্বামী প্রেমানন্দের পত্রাবলী’ থেকে

22nd     December,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ