তোরা ভদ্রলোকের দুই একটা কথাটেই চটে অস্থির, আর আমাদের প্রভু দক্ষিণেশ্বরের একটা সামান্য দ্বারবানের কত মন্দ কথা, কত অসৎ ব্যবহারই সহ্য করেছেন—অম্লান বদনে, কোনও অনুযোগ না করে। সেগুলি কি আমাদের শিক্ষার বিষয় নয়? জগতের সাধারণের মত কি আমরাও কেবল ক্ষমতা চালাতেই এসেছি? এই যে দেওভোগের মহাত্মা কি করে গেলেন! এও কি তোমরা দেখতে চাও না! তবে কর্ম্ম সেবা কিছুই নয়, যদি উহার মধ্যে জীবন তৈয়ার কত্তে না পারলুম; এই যে কর্ম্ম ফর্ম্ম, সব ছাই ভস্ম! কে কার উপকার কর্বে মাঝে পড়ে নিজের কল্যাণ, চিত্তশুদ্ধি হয়ে যায়; অপূর্ব্ব সহিষ্ণুতা, ধৈর্য্য আসে। এই কি কম লাভ রে এই জীবন-সমস্যায়? আহা! কুলোর স্বভাব নে, দেখ্বি এতে কত মজা। আমাকে নিত্য ঠাকুর কত শিখাচ্ছেন, নানা অবস্থায় ফেলে। মনে করেছিলাম ঠাকুরের আশ্রয়ে এসে Examine এর হাত হতে নিষ্কৃতি পেলাম, কিন্তু এখন দেখ্ছি, পদে পদে পরীক্ষা। শেখা শেষ হলেই বোধ হয় ছেড়ে দেবেন। দেখ তুমি যা লিখেছ, তা ঠিক আমি খুব বুঝ্তে পাচ্ছি। কর্ত্তা হয়েও অকর্ত্তা ভাবে থাক্তে হয়। মহারাজ ব্রহ্মানন্দ স্বামী আমায় এইটি কতকটা ধারণা করিয়ে দিয়াছেন। অনেক সময় আমি ঐটে আওড়াই।
শ্রীশ্রীঠাকুর মহারাজ প্রভৃতিকে ভালবাসায় কিনে ফেলেছিলেন, মহারাজও ঐ ভালবাসায় পরের ছেলেকে আপনার করেছেন। সেজন্য তাঁর কথায় ছেলেরা যথাতথা যায় প্রাণপাত পরিশ্রম করে—কেবল ভালবাসায়! মহাশয়, স্বামীজির কথায় বলি, সর্দ্দার যদি হ’তে চান, আগে শির দান করুন। বড় বড় কাজ কেবল কথায় চলে না স্বার্থত্যাগই ঐ সব কার্য্যের বীজমন্ত্র। ভ্রাতৃভাবে করুন, আপনার সঙ্গে সঙ্গে সেও দেবে প্রাণ।
যে নিষ্কাম কর্ম্ম তোমরা কর্ছ ও তোমাদের নয়, আমাদেরও নয়, কেবল শ্রীশ্রীভগবানের। আর তোমরা ভাল মন্দ কোনরূপ কামনা রাখনা যখন, তোমরা নিশ্চয়ই দেবতা, না, দেবতারও উপর, তোমরা শুদ্ধ-নিত্য-ভক্ত। ঠাকুর তোমাদের মধ্যে অসীম ধৈর্য্য, অমানুষী ক্ষমা, অনন্ত সহিষ্ণুতা দিন, ইহাই প্রার্থনা। সত্য অবলম্বনে চল্বে অদম্য উৎসাহে। মানুষ, কেবল মানুষ কেন, দেবলোকও তোমাদের দেখে শিখুক সহিষ্ণুতা উদারতা তোমাদের কোমলতা। প্রভুর আশ্রয়ে এসে এক অভিনব আলোক ত পেয়েছ, আর লোক তোমাদের দেখে ঐ অপূর্ব্ব আলোক পাক্—তোমাদের আশ্চর্য্য জীবন দেখে। বক্তৃতা দিয়ে উপদেশ লিখে ঠাকুরের প্রচারের সময় এ নয়, এ হচ্ছে তাঁর ছাঁচে আদর্শ জীবন দেখানের সময়।
‘স্বামী প্রেমানন্দের পত্রাবলী’ থেকে