বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

সঙ্কল্প

তখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চলছে এবং আমরা সব বাঙালি যুবক ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর (ঐ দিনটিতে বঙ্গদেশ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়) অনশন সত্যাগ্রহ করার শপথ গ্রহণ করেছিলাম। ঐ একই দিনে বঙ্গভূমির প্রতি অবিচারমূলক এই কালাকানুন প্রত্যাহার করার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শনেরও সঙ্কল্প আমাদের ছিল। সঙ্ঘে যোগদানের পূর্বেই এই ব্যাপারে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম। সুতরাং নির্দিষ্ট দিনে উপবাসী থেকে আমি প্রতিজ্ঞা পালন করতে চাইলাম। বিষয়টি শশী মহারাজের গোচরে আসতেই তিনি রুখে উঠলেন এবং আমাকে প্রচণ্ড তিরস্কার করলেন ধর্মসঙ্ঘে যোগদানের পরেও রাজনৈতিক প্রবণতার জন্য। শশী মহারাজ তাঁর অভিমত ব্যক্ত করলেন যে, শুধুমাত্র রাজনীতির পথে চলে ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বাধীনতা কখনোই করায়ত্ত হতে পারে না। তিনি আরো বললেন যে, স্বদেশ ও সামগ্রিকভাবে মানবজাতির সেবা আমি আরো সফল ও সার্থকভাবে করতে পারব, যদি আমার আধ্যাত্মিক জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হয় শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামীজীর নির্দেশিত পথে। রাজনৈতিক বিক্ষোভ-সমাবেশ পাশ্চাত্য প্রভাবপুষ্ট এবং ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক ভাবধারার সঙ্গে তা সঙ্গতিহীন, ইত্যাদি আরো অনেক কথা তিনি সেদিন বলেছিলেন। ভারতবাসীর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি তাঁর তীব্র অনীহা ছিল লক্ষ্য করার মতো। অবশ্য, তাঁর সেদিনকার যুক্তিজাল আমার মনে তখন রেখাপাত করতে পারেনি এবং আমি উপবাসী থেকে ব্রত উদ্‌যাপনের জন্য জেদ করতে লাগলাম। তবে আজ আমি বুঝতে পারছি, তাঁর ঐ ধরণের মনোভাব ছিল কত যুক্তিপূর্ণ। তিনি এই মত পোষণ করতেন যে, যখন একজন তরুণ ব্রহ্মচারী গুরুজনদের কাছে উপস্থিত হয়, প্রশিক্ষণ ও উপদেশলাভের আশায় তখন গুরুজনদের নির্দেশপালনে তার তরফে থাকা চাই নিঃশর্ত তৎপরতা। ঐকান্তিক শরণাগতি ভিন্ন শিষ্যত্ব পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না এবং গুরু শিষ্যের মধ্যে মহৎ ও কল্যাণকর কিছু প্রকৃতপক্ষে সঞ্চারিত করতে পারেন না। হিন্দু আদর্শ অনুযায়ী এই হলো শিষ্যত্বের মর্মবাণী এবং শশী মহারাজ এই বিষয়ে কোনরূপ শিথিলতায় ছিলেন একেবারে নারাজ। আমার দুর্ভাগ্য, তাঁর ভাবধারা হৃদয়ঙ্গম করতে তখন আমি ছিলাম নিতান্ত অক্ষম। আধুনিকতাসুলভ বিপ্লবী-মনোভাব আমার হৃদয়কে তখন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তাই যখন আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, “তুমি যদি আমার নির্দেশ মেনে না চল তবে তোমাকে এস্থান ত্যাগ করে চলে যেতে হবে; কোন অবাধ্যতার প্রশ্রয় আমি দিতে পারি না”—আমি তৎক্ষণাৎ আমার অল্প জিনিসপত্র যা কিছু ছিল সব গুছিয়ে নিয়ে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। ঠিক তখনই এলো স্বামী বিমলানন্দজীর আহ্বান। তিনি আমাকে সমুদ্রতীরে নিয়ে গিয়ে প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে এই বিষয়ে আমার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করলেন। বিমলানন্দ ছিলেন প্রেমিক সন্ন্যাসী। তাঁর ছিল ক্ষুরধার বুদ্ধি ও দরদী হৃদয়। তিনি আমার হৃদয়াবেগ ঠিক ধরতে পেরেছিলেন।
‘স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের স্মৃতিমালা, তাঁর পত্র ও রচনাসংগ্রহ’ থেকে

4th     October,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ