বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শিক্ষা

স্বামীজী: ওরে, ধর্মকর্ম করতে গেলে আগে কূর্মাবাতারের পূজা চাই; পেট হচ্ছেন সেই কূর্ম। এঁকে আগে ঠান্ডা না করলে, তোর ধর্মকর্মের কথা কেউ নেবে না। দেখতে পাচ্ছিস না, পেটের চিন্তাতেই ভারত অস্থির! বিদেশীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বাণিজ্যে অবাধ রপ্তানি, সর্বাপেক্ষা তোদের পরস্পরের ভিতর ঘৃণিত দাসসুলভ ঈর্ষাই তোদের দেশের অস্থিমজ্জা খেয়ে ফেলেছে। ধর্মকথা শুনাতে হলে আগে এদেশের লোকের পেটের চিন্তা দূর করতে হবে। নতুবা শুধু লেকচার-ফেকচারে বিশেষ কোন ফল হবে না।
শিষ্য: তবে আমাদের এখন কি করা প্রয়োজন?
স্বামীজী: প্রথমতঃ কতকগুলি ত্যাগী পুরুষের প্রয়োজন—যারা নিজেদের সংসারের জন্য না ভেবে পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হবে। আমি মঠ স্থাপন করে কতকগুলি বাল-সন্ন্যাসীকে তাই এইরূপে তৈরি করছি। শিক্ষা শেষ হলে, এরা দ্বারে দ্বারে সকলকে তাদের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার বিষয় বুঝিয়ে বলবে, ঐ অবস্থার উন্নতি কিরূপে হতে পারে সে বিষয়ে উপদেশ নেবে, আর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের মহান সত্যগুলি সোজা কথায় জলের মতো পরিষ্কার করে তাদের বুঝিয়ে দেবে। তোদের দেশের mass of people (জনসাধারণ) যেন একটা sleeping (ঘুমন্ত) Leviathan! এদেশের এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, এতে শতকরা বড়জোর একজন কি দুইজন দেশের লোক শিক্ষা পাচ্ছে। যারা পাচ্ছে—তারাও দেশের হিতের জন্য কিছু করে উঠতে পারছে না। কি করেই বা বেচারি করবে বল? কলেজ থেকে বেরিয়েই দেখে সে সাত ছেলের বাপ। তখন যা তা করে একটা কেরানিগিরি, বড়জোর একটা ডেপুটিগিরি জুটিয়ে নেয়। ওই হলো শিক্ষার পরিণাম! তারপর সংসারের ভারে উচ্চকর্ম উচ্চচিন্তা করবার তাদের আর সময় কোথায়? তার নিজের স্বার্থই সিদ্ধ হয় না—পরার্থে সে আবার কি করবে?
শিষ্য: তবে কি আমাদের উপায় নাই?
স্বামীজী: অবশ্য আছে। এ সনাতন ধর্মের দেশ। এদেশ পড়ে গেছে বটে, কিন্তু নিশ্চয়ই আবার উঠবে। এমন উঠবে যে জগৎ দেখে অবাক হয়ে যাবে। দেখিসনি—নদী বা সমুদ্রে তরঙ্গ যত নামে, ঢেউটা তারপর তত জোরে ওঠে; এখানেও সেইরূপ হবে। দেখিসনি—পূর্বাকাশে অরুণোদয় হয়েছে, সূর্য ওঠবার আর বিলম্ব নেই! তোরা এই সময়ে কোমর বেঁধে লেগে যা—সংসার-ফংসার করে কি হবে? তোদের এখন কাজ হচ্ছে দেশে দেশে গাঁয়ে গাঁয়ে গিয়ে দেশের লোকদের বুঝিয়ে দেওয়া যে, আর আলিস্যি করে বসে থাকলে চলছে না। শিক্ষাহীন, ধর্মহীন বর্তমান অবনতিটার কথা তাদের বুঝিয়ে দিয়ে বলগে— ‘ভাই সব, ওঠ, জাগ। কতদিন আর ঘুমুবে?’ আর শাস্ত্রের মহান সত্যগুলি সরল করে তাদের বুঝিয়ে দিগ। এতদিন এ দেশের ব্রাহ্মণেরা ধর্মটা একচেটে করে বসেছিল। কালের স্রোতে তা যখন আর টিকল না, তখন সেই ধর্মটা দেশের সকল লোকে যাতে পায়, তার ব্যবস্থা করগে। সকলকে বোঝাগে ব্রাহ্মণদের ন্যায় তোমাদেরও ধর্মে সমানাধিকার। আচন্ডালকে এই অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত কর। আর সোজা কথায় তাদের ব্যবসায় বাণিজ্য কৃষি প্রভৃতি গৃহস্থজীবনের অত্যাবশ্যক বিষয়গুলি উপদেশ দিগে। নতুবা তোদের লেখাপড়াকেও ধিক, আর তোদের বেদ-বেদান্ত পড়াকেও ধিক।
শিষ্য: মহাশয়, আমাদের সে শক্তি কোথায়? আপনার শতাংশের একাংশ শক্তি থাকিলে নিজেও ধন্য হইতাম, অপরকেও ধন্য করিতে পারিতাম।
শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী ‘স্বামী শিষ্য সংবাদ’ থেকে

7th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ