বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

গীতা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—“গীতা মে হৃদয়ং পার্থ, গীতা মে সারমুক্তমম্”—অর্থাৎ হে পার্থ, গীতাই আমার হৃদয়, গীতাই আমার সারসর্বস্ব। গীতাধ্যানে আছে–“সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ। পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।” অর্থাৎ সমস্ত উপনিষদ্ গাভীস্বরূপ, সে সকল গাভীর দোহনকর্তা শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন বৎসতুল্য, গীতার অমৃতস্বরূপ বাণী উৎকৃষ্ট দুগ্ধসদৃশ এবং বিবেকিগণ ও-দুগ্ধের পানকর্তা। গীতা সম্বন্ধে স্বামী বিবেকানন্দঃ ১৯০০ খ্রিঃ ২৮ মে সানফ্রান্সিস্কোতে গীতা সম্বন্ধে প্রদত্ত বক্তৃতায় স্বামীজী বলেছেন, ‘গীতার প্রথম দৃশ্যটি যুদ্ধক্ষেত্রের। উভয়দিকে আছেন আত্মীয়-স্বজন ও জ্ঞাতি-বন্ধুরা। একপক্ষে কৌরব ভ্রাতৃগণ, অপর পক্ষে পাণ্ডবেরা। একদিকে পিতামহ ভীষ্ম, অন্যদিকে পৌত্রগণ। বিপক্ষদলে তার জ্ঞাতিবন্ধু ও আত্মীয়দের দেখে তাঁদের বধ করবার কথা চিন্তা করে অর্জুন বিমর্ষ হলেন এবং অস্ত্রত্যাগ করাই স্থির করলেন। বস্তুত এখানেই গীতার আরম্ভ। ...‘হে ভারত (অর্জুন), ওঠ, হৃদয়ের এই দুর্বলতা ত্যাগ কর, ত্যাগ কর এই নির্বীর্যতা! উঠে দাঁড়াও, সংগ্রাম কর।’ —ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পাৰ্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে। ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।” এই তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোকটি দ্বারাই গীতার সূচনা। যুক্তিতর্ক করতে গিয়ে অর্জুন উচ্চতর নৈতিক ধারণার প্রসঙ্গ আনলেন প্রতিরোধ করা অপেক্ষা প্রতিরোধ না করা কত ভাল ইত্যাদি। তিনি নিজেকে সমর্থন করতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি কৃষ্ণকে ভুল বোঝাতে পারলেন না। কৃষ্ণ পরমাত্মা, স্বয়ং ভগবান। তিনি অবিলম্বেই অর্জুনের যুক্তির আসল রূপটি ধরে ফেললেন—তা হলো দুর্বলতা। অর্জুন নিজের আত্মীয়স্বজনকে দেখে অস্ত্রাঘাত করতে পারছেন না। অর্জুনের হৃদয়ে কর্তব্য আর মায়ার দ্বন্দ্ব। আমরা যতই পক্ষিসুলভ মমতার নিকটবর্তী হই, ততই ভাবাবেগে নিমজ্জিত হই। একে আমরা ভালবাসা বলি। আসলে এটি আত্মসম্মোহন। জীবজন্তুর মতো আমরাও আবেগের অধীন। অর্জুন এখন আবেগের অধীন। তাঁর যা হওয়া উচিত তিনি তা নন, প্রজ্ঞার অনন্ত আলোকে কর্মরত আত্মনিয়ন্ত্রিত জ্ঞানী ঋষি হতে হবে। হৃদয়ের তাড়না মস্তিষ্ককে বিচলিত করে, নিজেকে ভ্রান্ত করে; ‘মমতা’ প্রভৃতি সুন্দর আখ্যায় নিজের দুর্বলতাকে আবৃত করবার চেষ্টা করে তিনি শিশুর মতো হয়েছেন। কৃষ্ণ তা দেখছেন। অর্জুন সামান্য বিদ্যাবুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষের মতো কথা বলছেন, বহু যুক্তির অবতারণা করছেন; কিন্তু তিনি যা বলছেন তা অজ্ঞের মতো কথা। ‘জ্ঞানী ব্যক্তি জীবিত বা মৃত কারো জন্যই শোক প্রকাশ করেন না। তুমি মরতে পার না, আমিও না। এমন সময় কখনও ছিল না, যখন আমরা ছিলাম না। এমন সময় কখনো আসবে না যখন আমরা থাকব না। ইহজীবনে মানুষ যেমন শৈশবাবস্থা হতে আরম্ভ করে ক্রমে যৌবন ও বার্ধক্য অতিক্রম করে, তেমনি মৃত্যুতে সে দেহান্তর-গ্রহণ করে মাত্র। জ্ঞানী ব্যক্তি তাতে মুহ্যমান হবে কেন?’ 
স্বামী অপূর্বানন্দ অনূদিত ও সম্পাদিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা থেকে

28th     May,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ