বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

সত্য

প্রায় দু’হাজার বৎসর আগে ন্যাজারেথবাসী যীশু জগৎ-সমক্ষে ঘোষণা করেছিলেনঃ ‘সত্য উপলব্ধি কর, সত্যই তোমাকে মুক্তি দান করবে।’ সত্যের উপলব্ধিই মানবাত্মাকে বন্ধনমুক্ত করে; সমস্ত খ্রীষ্টান-সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁকে ঈশ্বরের একমাত্র প্রিয়পুত্র রূপে পূজা করেন সেই মহান ব্যক্তিই ধর্মের এই সারমর্মটি প্রচার করেছিলেন। যীশুখ্রীষ্টের আবির্ভাবের পাঁচশত বৎসর আগে গৌতম-বুদ্ধ ভারতবর্ষে ঘোষণা করেছিলেনঃ ‘সত্যদ্রষ্টা ব্যক্তিমাত্রই সুখী। সত্য সুন্দর ও মহান এবং সত্যই দুষ্কৃতি থেকে রক্ষা করতে পারে। সত্য ব্যতীত পৃথিবীতে আর কোনকিছুই মুক্তি দান করতে পারে না।’ আবার বুদ্ধের আবির্ভাবেরও বহু শতাব্দী আগে বৈদিক ঋষি ও মহাত্মাগণ প্রচার করেছিলেন যে, সত্যলাভই জগতে সকলের লক্ষ্য। সত্য হতে আমরা জন্মেছি, সত্যেই আমাদের অধিষ্ঠান এবং পরিশেষে সত্যেই আমরা প্রত্যাবর্তন করব। যে-কোন সত্যদ্রষ্টা পুরুষ মুক্তি এবং পরমাশান্তি ও আনন্দ লাভ ক’রে থাকেন। একদিকে পৃথিবীর অতীত যুগের সকল ধর্ম ও তার শ্রেষ্ঠ আচার্যগণ এই শিক্ষাই দান করেছিলেন যে, সত্যের উপলব্ধিই শ্রেষ্ঠ আদর্শ এবং ইহাই মানুষকে মুক্তি দান করে। অপরপক্ষে সকল দেশের ও সকল যুগের ধর্মশাস্ত্রী, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকরা সর্বপ্রযত্নে সত্যানুসন্ধানের পর এই বাণীই প্রচার করেছিলেন যে, সত্যানুভূতিই সকল জ্ঞানের চরম-সার্থকতা। সত্যকে জানা বা সত্যের উপলব্ধিই সম্রাট, ভিক্ষুক, ধর্মনেতা এবং প্রাচীন ও বর্তমান ভারতের মহাত্মাগণের একমাত্র উদ্দেশ্য। সমস্ত দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্মের লক্ষ্যই হ’ল মানব-মনের বিবিধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সত্যকে উপলব্ধি করা এবং শাশ্বত সত্যকে জানা। বর্তমান যুগের বৈজ্ঞানিকরাও ঐ একই আদর্শের ধারক। এযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আর্নেস্ট হেকেল বলেনঃ ‘প্রকৃত বিজ্ঞানের প্রচেষ্টাই হল সত্যের জ্ঞানলাভ করা।’ যদি সত্যোপলব্ধিই আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হয়, তবে আমাদের মনে কেবল এই প্রশ্নই জাগেঃ ‘যাঁকে জানলে মানবাত্মা মুক্ত হয় এবং শান্তি লাভ করে সেই সত্যের স্বরূপ কি এবং কি উপায়েই বা সেই জ্ঞান লাভ করা যায়?’ প্রথমত যদি আমরা ‘সত্য’ এই শব্দটির বিভিন্ন ব্যাখ্যাসম্বন্ধে বিশ্লেষণ করি তাহলে জানতে পারব যে, সূক্ষ্মার্থের দিক দিয়ে ‘সত্য’ এই শব্দটি যা কিছু বিশ্বজনীন তারই নির্দেশক। কিন্তু ধর্ম যখন সাম্প্রদায়িকভাবে ও বিশেষ কতকগুলি আচার ও মতবাদের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তখন সে তার মৌলিক সর্বজনীন অর্থটি হারিয়ে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সত্যকে জানো এবং সত্যোপলব্ধি করলেই মুক্ত হবে’—এই অংশটির ব্যাখ্যাপ্রসঙ্গে প্রাচীনকালের শাস্ত্রবেত্তাগণ বলেছিলেনঃ ‘যীশুখ্রীষ্টই ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র যিনি জগতে মানবের ত্রাণকর্তারূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন—এটিই প্রকৃত সত্য এবং এতে অবশ্যই বিশ্বাস করবে। এই সত্যে বিশ্বাসের বলেই মানুষ সকল প্রকার পাপ হতে মুক্ত হবে এবং ঈশ্বরও তাকে ক্ষমা করবেন।’ বহু ধর্মশাস্ত্রী-কর্তৃক উপরি-উক্ত ব্যাখ্যাটিই দেওয়া হয়েছিল। আবার অন্য অনেকে একটু ভিন্নরূপ ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। যেমন, যীশুখ্রীষ্ট পৃথিবীতে উচ্চতম সত্যের প্রচারকল্পে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং তাঁর জীবনই ছিল সত্যের মানদণ্ডস্বরূপ। যদি তাঁর জীবন ও বাণীতে আমাদের বিশ্বাস থাকে তবে তা-ই সত্যোপলব্ধি করতে সাহায্য করবে এবং সত্যের স্বরূপ কি তা আমরা জানতে সক্ষম হ’ব ও পরিণামে মুক্তিলাভ করব। এজাতীয় চিন্তাশীল ব্যক্তিদের কাছে অন্য কোন ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে এইসব ব্যক্তিরা তাঁদের সংকীর্ণ মতবাদ ও ধারণার বহির্ভূত কোনকিছুই গ্রহণ করবেন না। এরূপে যদি আমরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে যাই এবং জিজ্ঞাসা করি ‘সত্য’ বলতে তাঁরা কি বোঝেন, তার উত্তরে তাঁরা বলবেনঃ ‘সত্য হ’ল বুদ্ধেরই সারধর্ম এবং সত্যই সকল বস্তুর চরম-মানদণ্ডস্বরূপ যার দ্বারা আমরা সত্য ও মিথ্যা এই মতবাদদুটির মধ্যে পার্থক্য বিচার করতে পারি।
স্বামী অভেদানন্দের ‘ঈশ্বরদর্শনের উপায়’ থেকে 

26th     May,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ