বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

মনুষ্য-সমাজে ধর্ম
অপরিহার্য অঙ্গ কি না? 

আমরা মানুষ হইয়া জন্মাই এবং সুখে শান্তিতে নীরোগ স্বাস্থ্যসম্পন্ন হইয়া দীর্ঘদিন বাঁচিয়া থাকিতে চাই। দৈনন্দিন বাঁচিয়া থাকিবার উপকরণও বহু, যেমন খাদ্য, নিদ্রা, শয্যা, লেখাপড়া, মনের মতন কথা বলিবার বা মিশিবার যোগ্য নর-নারী, সেবা করিবার মতন আপনজন, খেলা-ধূলা, আমোদ-প্রমোদের জন্য সিনেমা, থিয়েটার, জামা-কাপড়, সর্বোপরি অর্থ এবং আরও কত কী। আমিই একক বাঁচিয়া থাকিব এবং আর কোনও নর-নারী যেন বাঁচিয়া না থাকে, ইহা ঠিক আমাদের কাম্য নয়। মনুষ্যেতর প্রাণীরা আমাদের বাঁচিয়া থাকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না যাহা মনুষ্যকুল করিতে পারে। পাছে মনুষ্যকুল আমাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেইজন্য মনুষ্যকুলকে সমূলে বিনাশ করিয়া ফেলিব, শত্রুপক্ষ রাখব না— ইহা পাগলের প্রচেষ্টা। আমরা তো পাগল নহি যে অসম্ভবকে সম্ভব করিতে যাইব। আমাদের যথেষ্ট বুদ্ধি আছে বলিয়াই ঘর- দোর- সংসার পাতিয়া আত্মীয়- স্বজন, স্বামী- দারা- পুত্র- পরিজন- পরিবৃত হইয়া ছোট ছোট পরিবার তথা পরিবেশ বা সমাজভুক্ত হইয়া বাঁচিয়া থাকিবার চেষ্টা করি। তাহা হইলে নিজেদেরকে বাঁচাইতে হইলে পরিবেশ বা সমাজকেও বাঁচাইতে হইবে। স্বাধীন স্বতন্ত্রভাবে কোনও মানুষেরই বাঁচিবার উপায় নাই। ইহাই মনুষ্য জীবনের আপেক্ষিকতা। পরমুখাপেক্ষী হইয়া বাঁচিয়া থাকিতেই হইবে। এইটাই তো সমাজ- জীবন। মনুষ্য সমাজের রীতি-নীতি, সামঞ্জস্য রক্ষা করিয়া চলিতেই হইবে। না চলিলেই সমাজ তাহা মানিবে না। কিন্তু এই সমাজ কে সৃষ্টি করিল? না, আমরাই। সমাজ আমাদের সৃষ্টি করে নাই, আমরাই সমাজ সৃষ্টি করিয়াছি এবং উত্তরোত্তর উন্নততর নিয়মনীতি আবিষ্কার করিয়া সমাজ-অন্তর্ভুক্ত করিতেছি। একটি কোনও নর বা নারীর বাঁচিয়া থাকিবার বুদ্ধি অনুসারে মনুষ্য-সমাজ নিয়ন্ত্রিত হইবে—ইহা তো ঠিক নয়। অতএব মানবিক বুদ্ধি বা মনুষ্যোচিত বুদ্ধিই সমষ্টি বা সমাজ নামের যোগ্য হইতে পারে। এইজন্য তো সমাজ গঠনের আবহমান কাল হইতে প্রচেষ্টা। বিভিন্ন নর নারীর বিভিন্ন প্রকৃতি— অতএব সর্বাঙ্গীন সামঞ্জস্যের চিন্তা করা স্বপ্নতুল্য। মিলিয়া মিশিয়া থাকিবার চেষ্টাকেই যদি ধর্ম আশ্রয় করিয়া থাকা বলি তো অনেকেই রুষ্ট হইয়া পড়িবেন। ধর্মের প্রসঙ্গ ইহার মধ্যে কী থাকিতে পারে। কিন্তু মূলেই আমাদের বুদ্ধির ভ্রংশতা-দোষ আসিয়া পড়িতেছে। ধর্ম বলিতে মানুষ কী বোঝে? ধর্ম বা ঈশ্বর কী কোনও অজানা জায়গায় বাস করিতেছেন যে আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বা সম্বন্ধ কোনওকালেই নাই বা হইতেও পারে না? এইটাই প্রধান বা মৌলিক ভুল। আমাদের প্রাথমিক দোষ হইতেছে ভুলকে ভুল বলিয়া স্বীকার করি না—তাহার কারণ অহমিকা। ভুলকে ভুল বলিয়া ধরিবার শুদ্ধতা অর্জন করিতে হইলে মহাজনবাক্যতে শ্রদ্ধাসম্পন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। গীতায় তাই উদ্ধৃত:
“তদ্‌বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।”
ধর্ম বা ঈশ্বর আমাদের মধ্যেই রয়েছেন। কোথাও যাইয়া সেই বস্তুকে খুঁজিতে বা পাইতে হইবে না। মানুষের ধর্ম কী—এই কথা না বলিয়া আমরা যদি প্রশ্ন করি মনুষ্যোচিত ধর্ম কী, তাহা হইলে আমরা কিঞ্চিৎ মনুষ্যত্বের বা বুদ্ধির প্রকৃত বিকাশের পথে অগ্রসরে সক্ষম হইব।
স্বামী পবিত্রানন্দের ‘এক ও একতা’ থেকে 

2nd     March,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ