বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

গঙ্গা 

গঙ্গার উৎস হিমালয়, উৎস থেকে বেরিয়ে গঙ্গা যেমন দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৃষিত-তাপিতদের মধ্যে জল সিঞ্চন করে তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে, তেমনি সমস্ত ভাবের উৎস শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারা আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ তৃষিত-তাপিত মানুষের মধ্যে তৃষ্ণার বারি বিতরণ করছে। শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারা আজ ব্যাপকতা লাভ করে একটি বিশাল আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে—একে আন্দোলন বলা হচ্ছে কেন? আন্দোলন বলতে সাধারণত যা বোঝায় এখানে তা নয়, আন্দোলন বলতে এখানে কোন বিক্ষোভকে বোঝানো হচ্ছে না। শ্রীরামকৃষ্ণ কখনও কোন বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেননি। তবে আমরা আন্দোলন বলতে কি বুঝব? আন্দোলনের এই বৈশিষ্ট্যগুলি শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে। কিছুক্ষণ আগে স্বামী আত্মানন্দ তাঁর সুললিত ভাষায় এ সম্বন্ধে আপনাদের কাছে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কবি ও শিল্পী, সুন্দর একটি ছবির মতো তাঁর বক্তব্য তিনি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এই আন্দোলনের পিছনে আছেন শ্রীরামকৃষ্ণ, তিনিই উৎস। ধর্মপ্রচার করার কথা শ্রীরামকৃষ্ণ কখনও চিন্তা করেননি, কখনও উপদেশ দিতেও চাননি। প্রথম থেকেই তিনি ভগবানের সন্ধান করেছেন। তিনি শুধু ‘মা’কেই জানতেন। এখানে ‘মা’ হলেন সর্বশক্তিময়ী পরমেশ্বরী, যিনি এই শ্রীরামকৃষ্ণ রূপ যন্ত্রের ভিতর দিয়ে মহত্তম ভাবধারা প্রচারিত করার জন্যই বিশেষ উদ্দেশ্যে তাঁকে চালিত করেছেন। সাধারণ মানুষের মতো অবয়ব নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ জগন্মাতার কাজ করতে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেক অনেক ঊর্দ্ধে ছিলেন তিনি। আমরা আমাদের সীমিত বুদ্ধি দিয়ে তাঁকে বুঝতে পারব না। স্বামী বিবেকানন্দের অনুপস্থিতিতে শ্রীরামকৃষ্ণকে বোঝা যায় না। শ্রীরামকৃষ্ণ এতই গভীর যে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি আবিষ্কার করার জন্য একজন নরেন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। সাধারণ লোকেরা শ্রীরামকৃষ্ণকে ঠিক ঠিক ভাবে চিনতে পারেনি। আপাত দৃষ্টিতে তাঁকে অতি সাধারণ বলে মনে হতে পারে, সহজ সরল শিশুর মতো তাঁর ব্যবহার। অথচ শিক্ষিত, বিদ্বান মনীষীগণও সহজ সরল কথার মধ্য দিয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানসম্মত তত্ত্ব-ব্যাখ্যা শুনে অবাক হয়ে যেতেন। আমরা এই ভেবে অবাক হই যে, স্বামীজীর মতো ব্যক্তি, যিনি একাধারে মহাপণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ, মস্ত বড় দার্শনিক, অসাধারণ বাগ্মী, যিনি সমস্ত পৃথিবীটাকে বদলে দিতে পারেন—সেই স্বামীজী কিভাবে শ্রীরামকৃষ্ণকে গুরু রূপে বরণ করে নিয়েছিলেন। বিবেকানন্দ বলেছেন—ইচ্ছে করলে শ্রীরামকৃষ্ণ ধূলিকণা থেকে হাজার হাজার বিবেকানন্দ তৈরি করতে পারেন।
পাকা জহুরি শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রনাথ রূপ রত্নকে খুঁজে বের করেছিলেন। রত্নপাথরকে বিশেষ আকৃতিতে কাটাই ও পালিশের পর তা যেমন মহামূল্যবান রত্ন হয়ে ওঠে, তেমনি শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রনাথকে সযত্নে অমূল্য রত্ন স্বামী বিবেকানন্দে উন্নীত করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ হলেন অমূল্য রত্ন, পৃথিবীর কোন রত্নের সঙ্গে এই রত্নের কোন তুলনা হয় না। শ্রীরামকৃষ্ণের পদপ্রান্তে বসেই নরেন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দ রূপ মহামূল্যবান রত্নে পরিণত হতে পেরেছিলেন।
স্বামী ভূতেশানন্দজীর ‘অমৃত সন্ধানের কথা’ থেকে 

26th     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ