বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

জনরোষের ভয়

কোনও রাখঢাক নেই। একেবারে খুল্লামখুল্লা বিরোধিতা। গণতন্ত্রের কথা সংবিধানের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকুক। নৈতিকতা নিয়ে যত খুশি প্রশ্ন তুলুক বিজেপির চোখে ছিদ্রান্বেষীরা। বিরোধী স্বর, বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে মোদি সরকার যে কোনও পদক্ষেপ করতে পারে, তারই যেন দৃষ্টান্ত রাখল রেল মন্ত্রক! সেইসঙ্গে মোদি সরকার বুঝিয়ে দিল দেশে বিরোধীদের তালিকায় তাদের এক নম্বর ‘শত্রু’ বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই ‘তৃণমূলকে হারাতে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। তাঁদের ঘোষণা ছিল, বাংলায় ২০০টি আসন পেয়ে মমতাকে গদিচ্যুত করবে বিজেপি। সাত মণ তেলও পোড়েনি, রাধাও নাচেনি। নির্বাচনী লড়াইয়ে পর্যুদস্ত হয়ে তারপর থেকেই কৌশল বদলে শুরু হয় ছুতোয়-নাতায় অর্থনৈতিক অবরোধের কর্মসূচি। একে একে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা বা বন্ধ করা শুরু হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির প্রকল্প। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই দুই প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এর ফলে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ বিরাট সঙ্কটে পড়েছেন। রাজ্যের দাবি, বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় প্রাপ্য ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু কেন্দ্র উপুড়হস্ত হচ্ছে না। ক্রমশই স্পষ্ট হয়েছে, এরাজ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পেরে হাতে না মেরে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র। এর জন্য সফ্ট টার্গেট করা হয়েছে সেই গরিব মানুষকেই।
বলা বাহুল্য, গরিবের রক্ত জল করা এই প্রাপ্য টাকা চেয়ে বারবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের সাংসদরা এই প্রসঙ্গ তুলেছেন সংসদেও। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। কোনও কিছুতে কাজ না হওয়ায় ৫০ লক্ষ বঞ্চিত মানুষের সই সংবলিত চিঠি প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে পাঠানোর কর্মসূচি নিয়েছে মমতার দল। সেইসঙ্গে রাজ্যের কয়েক হাজার বঞ্চিত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজনও করা হয়েছে। এই আন্দোলনে জনতাকে শামিল করার জন্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়মমাফিক বিশেষ ট্রেন চেয়ে ভাড়া ও সিকিউরিটি ডিপোজিটের টাকাও জমা করেছে রাজ্যের শাসকদল। সেইমতো প্রস্তুতিও তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে শনিবার সকালে যাত্রা শুরুর ঠিক আগের রাতে রেল মন্ত্রক ট্রেন দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। প্রশ্ন হল, একথা আগে জানানো হল না কেন? রাজনীতিবিদদের অনেকের মতে, এই ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। দিল্লিতে যেকোনও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য যেকোনও রাজ্যের রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নিয়ম মেনে ট্রেন ভাড়া করে। কিন্তু সেই ট্রেন ভাড়া পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা প্রায় বিরল। তাহলে বাংলার শাসকদলের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা না করার পিছনে কি অন্য কোনও রাজনৈতিক ছক কাজ করছে? সঙ্গতভাবেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রেন না দিলে অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছিল কেন? আবার সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথাই-বা বলা হচ্ছে কেন? অভিষেকের মতে, এটা পরিকল্পিত বাধাদান। হকের টাকা আদায়ের জন্য প্রতিবাদী বাংলার মানুষ যাতে দিল্লিতে আন্দোলনে শামিল হতে না পারেন—শেষ মুহূর্তে সেই চেষ্টাই করেছে কেন্দ্রের শাসকদল।
আসলে শুধু বাংলার প্রতি বঞ্চনা নয়, মমতা সরকার ও তৃণমূলকে আটকাতে সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে মোদি সরকার। দিল্লিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি আটকাতে যেমন শেষ মুহূর্তে ট্রেন না দেওয়ার বিষয়টি এসেছে, তেমনই ওই কর্মসূচি চলার দিনেই অভিষেককে জেরা করার জন্য ডেকেছে ইডি। এ কি একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা? অনেকেই ভাবছেন, তা নয়। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রেন না দেওয়ার পিছনে তাদের মতো করে যুক্তি খাড়া করেছে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সুস্পষ্ট পরিকল্পনার ছাপ। কারণ তৃণমূলের এই কর্মসূচির ঘোষণা হয়েছে গত জুলাই মাসে। অনেকেই বলছেন, সদিচ্ছা থাকলে ২, ৩ অক্টোবরের আগে বা পরের যেকোনও দিন অভিষেককে তলব করা যেত। আসলে গেরুয়া শিবিরের মূল উদ্দেশ্যই হল, হাজারো মানুষের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে বানচাল করা। তাদের বৃহত্তম পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই হয়তো এসেছে ট্রেন বাতিল অথবা ইডির তলব। এত কিছু করেও অবশ্য বিরোধীদের আটকানো যাচ্ছে না। বিকল্প উপায় বেছে নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের রোষ উত্তরোত্তর বাড়ছে। এতেই ভয় পেয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। তাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ছক। এভাবে আন্দোলন ব্যর্থ করার পরিকল্পনা থাকলেও এই জনরোষ কীভাবে আটকাবে পদ্মশিবির? মানুষগুলো যে পেটের জ্বালাতেই আন্দোলনে নেমেছেন।

1st     October,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ