বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অনৈতিক কৌশল

এন বীরেন সিংয়ের সরকার মণিপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ বুধবার ঘুরিয়ে সেটাই মেনে নেওয়া হল। আর এটা একযোগে মেনে নিল নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকার। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের তরফে অবশেষে পুরো রাজ্যটিকেই ‘ডিসটার্বড এরিয়া’ (উপদ্রুত এলাকা) ঘোষণাসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হল। একইসঙ্গে সেখানে বলবৎ করা হল বহু বিতর্কিত আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (এএফএসপিএ বা সংক্ষেপে আফস্পা)। অবশ্য এই ঘোষণা থেকে বাদ রাখা হয়েছে রাজধানী ইম্ফলসমেত নির্দিষ্ট ১৯টি থানা এলাকাকে। সিদ্ধান্তটি ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। বস্তুত এই পদক্ষেপের ভিতরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবার কোনও অভিপ্রায় নেই। একটি অপদার্থ রাজ্য সরকারকে বাঁচাবার অনৈতিক কৌশল মাত্র—এর মধ্যে কেবল এটিই স্পষ্ট হয়। এন বীরেন সিং বিজেপির নেতা এবং তিনি মোদি-শাহের স্নেহধন্য বলেও রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। না-হলে দিল্লিওয়ালারা তাঁকে যে কোনওমতেই রেয়াত করতেন না, তা বিজেপির অন্দরমহলও জানে। বীরেন সিংয়ের মাথার উপর মোদি-শাহের হাত না-থাকলে অন্তত তাঁকে সরিয়ে বিজেপিরই অন্যকোনও নেতাকে কুর্সি এগিয়ে দেওয়া হতো। আর তিনি কোনও বিরোধী রাজনীতির লোক হলে এই রাজ্য সরকারের আয়ু ফুরিয়ে যেত অনেক আগেই। 
৩ মে থেকে মণিপুর দফায় দফায় জ্বলছে। দু-চার দিন থমথমে থাকার পর অশান্তি ফের ছড়িয়ে পড়েছে গত শুক্রবার থেকে। জাতিগত সংঘর্ষ, গোলাগুলি বর্ষণ, নারীধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট প্রভৃতি মানবতা-বিরোধী ঘটনা এই পাঁচমাসে সেখানে কত যে ঘটেছে তার হিসেব রাখা সহজ নয়। দু’শোর বেশি নারী-পুরুষের প্রাণ গিয়েছে। পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে ঘরবাড়ি। হাজার হাজার মানুষ ভিটে, এমনকী গ্রামছাড়া। মেইতেই সম্প‍্রদায়ের মানুষ কুকি অধ্যুষিত এলাকায় প‍্রবেশ করতে পারে না, উল্টোদিকে কুকিরাও প্রবেশ করতে পারে না মেইতেই অধ্যুষিত অঞ্চলে। অর্থাৎ একটি ক্ষুদ্র রাজ্য অঘোষিতভাবে দুটি ‘নিষিদ্ধ’ এলাকায় ভাগ হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মন্ত্রীরাও তাঁদের পাড়ার বাইরে পা রাখার সাহস হারিয়ে যেন স্বেচ্ছা বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। যথার্থই বলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, ‘বিউটিফুল’ একটি রাজ্য ‘ব্যাটল ফিল্ড’ হয়ে গিয়েছে! মণিপুরের ইতিহাসে এই বেনজির ঘটনায় সেখানকার জনজীবন চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। একটি রাজ্যজুড়ে নাগরিক পরিষেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সমগ্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড লাটে উঠেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। বেকারে ভরা ভারতের এই অঙ্গরাজ্যের রুটিরুজির সমস্যা আগামী দিনে তীব্রতরই হতে চলেছে। 
কাশ্মীর থেকে মণিপুর—দেশের কিছু অঞ্চল বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যাকে কেন্দ্র করে যেসব কারণে বারবার বারুদের স্তূপ হয়ে উঠেছে তার মধ্যে বেকার সমস্যাকে রাখতে হবে সবার আগে। তাই মণিপুর অদূর ভবিষ্যতের জন্য আরও ভয়াবহ কোনও সঙ্কেত রেখে যাচ্ছে কি না তা রাজনৈতিক মহলকে আরও গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে হবে। কেন্দ্রের সরকারগুলি বারবার ‘পুবে তাকাও’ নীতি ঘোষণা করার পরেও দেশের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত রাজ্যগুলির অবস্থান পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। মণিপুরের নাম আসে সেগুলির মধ্যেও সবার আগে। তবু সেখানকার যুবসমাজ নিজ নিজ উদ্যোগে ও যোগ্যতায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করার মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে। গত ওলিম্পিকস তার সাক্ষী। ভয়াবহ অশান্তির আগুনের মধ্যে দিয়ে এশিয়ান গেমসের আসর পর্যন্ত যিনি পৌঁছেছেন, তিনিও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যগ্র। ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না মানুষের এত আশা-আকাঙ্ক্ষা। একটি গণতান্ত্রিক পরিসরকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনা বাহিনীর হাতের পুতুল করে ফেলা কোনও সমাধান হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর অজুহাতে আফস্পা প্রয়োগের ফলও আগামীর জন্য আরও অশুভ ইঙ্গিতবাহী। মোদি সরকার এবং বীরেন সিং সরকার মিলে যে দুরমুশ নীতি নিয়েছে, তাতে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের বিবাদ উল্টে পোক্ত হতে পারে। আজকের ভয়াবহ পরিস্থিতির পিছনে যেসব নেতার ব্যর্থতা ও অন্ধ অহমিকা দায়ী তাঁদের এখনই ক্ষমতার আসন থেকে টেনে নামানো জরুরি। এই প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে এন বীরেন সিংয়েরই নাম আসে। সরকার বদলের পাশাপাশি বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের মতামত নেওয়া হোক এখনই। রাজনীতি করার সময় বয়ে যাচ্ছে না, যাবতীয় গেরুয়া মতলববাজি আপাতত মুলতুবি থাক। দেরি অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। এরপরও দেরি করলে কূল-কিনারা পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে, হলফ করে বলা যায়। 

29th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ