বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বাংলাকে বঞ্চনা

দেশের নাম সরকারিভাবে পাল্টে যাক কিংবা না-যাক, ভারত বিশ্বায়ন পরিস্থিতির বাইরে নয়। বিশ্বায়নের বাধ্যবাধকতার ভালো, মন্দ দুটি দিকই আছে। সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একাংশ বাদ দিলে উন্নয়নশীল এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলির কাছে বিশ্বায়ন অংশত আশীর্বাদ হয়েছে। এসব দেশে বেড়েছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। দেশীয় অর্থনীতি এবং সমাজ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠার ছাড়পত্র পাওয়ার ফলে যোগাযোগ, প্রযুক্তি, রাজনীতি, কূটনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিময়ের সুযোগটিও হয়েছে প্রসারিত। তাতে ভারতকে কিছু ক্ষেত্রে হাত খুলে দিতে হলেও পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি—দু’-তিন দশক আগে এটি কল্পনাও করা যেত না। আজ ভারতকে যে সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনীতিগুলির একটি  দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতিকে শীঘ্রই তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিতে উন্নীত করার স্বপ্ন ফেরি করা হচ্ছে, তার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে বিশ্বায়নের ভাবনাকে এবং যাঁরা সাহসভরে দেশকে এই ভাবনার শরিক করেছিলেন তাঁদেরকে। বলা বাহুল্য, এর কৃতিত্ব দেশের কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা যেমন দাবি করতে পারে না, তেমনি পারে না গেরুয়া শিবিরও। 
বরং বলা যায়, এই দুই শক্তির প্রবল বিরোধিতা মোকাবিলা করেই ভারতকে বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত করেন পি ভি নরসিমা রাও। পরে তাতে আরও গতিসঞ্চার যিনি করেছেন তিনি নরেন্দ্র মোদিরই পূর্বসূরি মনমোহন সিং। কিন্তু মোদি জমানার বিভ্রান্ত অর্থনীতির সৌজন্যে বিশ্বায়নের সুযোগ ভারত পুরোপুরি নিতে পারেনি। সরকার এজন্য করোনা-পর্বের দু’-তিন বছরের দোহাই দিলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়, আসল দায়ী এই সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্কীর্ণতা। সবকা বিকাশের বুলি আওড়ে দেশের সব রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠার এক অনৈতিক কসরত করে গিয়েছে তারা। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ জুটির এমন ভয়াবহ ক্ষমতালিপ্সার বলি হয়েছে বিরোধী দল পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলি। অ-বিজেপি সরকারগুলিকে গায়ের জোরে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করার খেলায় নেমে সেখানকার নাগরিকদের সঙ্গেই লাগাতার অমানবিক আচরণ করে চলেছে দিল্লি। আর এই যুগপৎ অগণতান্ত্রিক এবং বৈষম্য নীতির সবচেয়ে বড় শিকারের নাম পশ্চিমবঙ্গ। এক বছরের বেশি হয়ে গেল, বাংলাকে মনরেগার (১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি প্রকল্প) টাকা দেওয়া হচ্ছে না। নবান্নের দাবি, এজন্য গত বছর ৩০ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির সুযোগ নষ্ট হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষেও বরবাদ হয়েছে ৩২ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির প্ল্যান। এর প্রতিবাদে ৫ এপ্রিল দিল্লিতে প্রতিবাদ আন্দোলন করে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এবং তাঁর রাষ্ট্রমন্ত্রীও সেদিন ২৫ জন তৃণমূল এমপিকে এড়িয়ে যান, দেখা করেননি। এই ঘটনার দিন কয়েক আগে একই দাবিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি পালন করেন। শুধু মনরেগা নয়, আবাস, গ্রাম সড়কসহ আরও কিছু প্রকল্পে রাজ্যের হকের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। নবান্নের দাবি, সম্প্রতি মোদি সরকার বাংলার মানুষের সঙ্গে বঞ্চনার যে নির্মম খেলায় নেমেছে তার অঙ্কটা অন্তত ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। 
টাকার সমস্ত শক্তি মানুষের হাত বদলের মধ্যে নিহিত। এই বিপুল পরিমাণ টাকা বাংলার মানুষের মধ্যে হাত বদলের সুযোগ পেলে অনেক সম্পদ সৃষ্টি হতো এবং বহু বেকার মানুষ কাজ পেতে পারতেন। মোদি সরকারের একচক্ষু নীতির কারণেই তা হল না। দিল্লির এই এক চোখামির প্রতিফলন এবার দেখা গেল মোদির রোজগার মেলাতেও। মঙ্গলবার ওই মেলা থেকে ৫১ হাজার চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি। কিন্তু বাংলার ক’জনকে দেওয়া হয়েছে এই মহার্ঘ সুযোগ? মাত্র ২৩৫ জনকে, শতাংশের হারে ০.৪৬—অর্থাৎ ১ শতাংশের অর্ধেকও নয়! পশ্চিমবঙ্গ কি জনবিরল কোনও রাজ্য? না, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ এই রাজ্যের বাসিন্দা। জনঘনত্বের বিচারে একেবারে প্রথম সারির রাজ্য এটি। মানবসম্পদ হিসেবেও বাংলার মানুষজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ। তাই এদিন যত চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তার মধ্যে ৪ থেকে ৫ হাজার বাংলার বেকার যুবক-যুবতীদের ন্যায্য প্রাপ্য ছিল। এখানেও চরম বঞ্চনা করা হল। এই সরকার একটি জিনিস ভুলে যাচ্ছে, বাংলার উন্নয়নের খতিয়ান ঊহ্য রেখে কিন্তু ভারতের সার্বিক উন্নয়ন রিপোর্ট তৈরি হবে না। বাংলাকে জবরদস্তি পিছিয়ে রাখার ছাপ জাতীয় রিপোর্টেও দগদগে হচ্ছে। হায়, একটি পিছড়ে বর্গীয় রিপোর্ট হাতে নিয়েই ‘বিশ্বগুরু’র আসন দখলে ঝাঁপাচ্ছেন ভারতের প্রতিনিধি!

28th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ