বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মোদির বাকসংযম প্রার্থনীয়

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র দক্ষিণ ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির রাজ্যপাট উবে গিয়েছে। তার মধ্যে মোদিবাবুদের জন্য সরকারিভাবে ঘোষিত দুঃসংবাদ, জয়ললিতার পার্টি এআইএডিএমকে আর কোনওভাবেই বিজেপির জোটসঙ্গী নয়। অর্থাৎ তামিলনাড়ুতেও এবার নিঃসঙ্গ হয়ে গেল গেরুয়া শিবির। এনডিএ-র ‘স্লিম’ হওয়ার প্রক্রিয়া অবশ্য এখানেই থেমে নেই, গেরুয়া আবির সর্বাঙ্গ থেকে ধুয়ে-মুছে ফেলার আগ্রহ সংক্রামিত উত্তর ভারতেও। হরিয়ানার বিজেপি-জেজেপি জোট সরকার শুরু থেকেই টলমল করে চলছে। সেখানে বৃহত্তম দল বিজেপির নেতা মনোহরলাল খট্টর মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ডেপুটি হলেন জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) নেতা দুষ্যন্ত সিং চৌতালা। কৃষক আন্দোলনের সময় থেকে একের পর ইস্যুতে প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী দেবীলালের প্রপৌত্র তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালার পৌত্র দুষ্যন্তের সঙ্গে বিজেপির ঝামেলা জারি রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের লাগাতার জোট-বিরোধী মনোভাবে বিরক্ত জেজেপি নেতা এবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, এই এনডিএতে থেকে কী লাভ? অকালি দল, নীতীশ কুমারের জেডিইউ-সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টি ইতিমধ্যেই মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে এনডিএ ছেড়ে গিয়েছে। দেশের প্রান্তে প্রান্তে এনডিএ ক্রমে যেন কাঁঠালের আমসত্ত্বের চেহারা নিচ্ছে। 
ফাইনাল ম্যাচ বা আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রয়েছে আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভার ভোট। সেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মিজোরাম নিয়েও কি বিজেপি স্বস্তিতে আছে? রাজনৈতিক মহলের কাছে এই প্রসঙ্গে মোদি-শাহদের জন্য কোনওরকম ইতিবাচক খবর নেই। তারা আরও মনে করে, দল এবং সাধের এনডিএর হাঁড়ির হাল বলেই জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা নির্বাচনে যাওয়ারও সাহস হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনীতির কারবারিরা মনের কথা মুখে আনেন না। তবে তাঁদের আস্ফালন বৃদ্ধির মধ্যে ভয়ের বৃদ্ধি যে প্রকট হয়, সেটা তাঁরাও জানেন। কিন্তু বিপৎকালে বুদ্ধির নাশই যে আগে হয়—মনের আতঙ্ক চোখে-মুখে প্রকাশ না-করে উপায় থাকে না তাঁদের! তাতে মুফতে সুবিধালাভ হয় বিরোধীদেরই। 
এই যেমন ‘চৌকিদার’ থেকে ‘গ্যারান্টার’-এ উন্নীত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। অবশ্য সবটাই তাঁর স্বঘোষিত। জনগণ এবং দেশের চৌকিদার হিসেবে তিনি কোন মহৎ কীর্তি স্থাপন করেছেন গত সাড়ে ন’বছরে? সীমান্তে পাকিস্তান এবং চীনের ‘তস্করি’ রুখতে পারেনি এই সরকার। ‘ডাবল ইঞ্জিন’ জমানাতেই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট সুন্দর রাজ্য মণিপুর! এত বড় সর্বনাশ ঠেকানো তো দূর, গোটা গ্রহ চষে ফেলা প্রধানমন্ত্রী সেখানে একদিনের জন্যও পা দিয়ে অসহায় মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়ে বলতে পারলেন না—‘আমি তোমাদের পাশে আছি।’ ঋণগ্রহণের নামে বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট চালিয়ে কয়েকটি লোক নিপাত্তা হয়ে গিয়েছে। বার বার কথা দিয়েও তাদের ধরে আনার মুরোদ এই সরকারের হয়নি। বেকার যুব সমাজ, মহিলা, গরিব কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসী প্রভৃতির জন্য হাজারো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘সঙ্কল্পপত্র’ বা ইস্তাহারে। মোদি অ্যান্ড কোম্পানিকে বিশ্বাস করে উপর্যুক্ত শ্রেণিগুলি কী পেয়েছে? এই দেশেই, ধনী থেকে রাতারাতি ধনাঢ্য বনে যাওয়া কিছু মানুষের ছবি এর পাশে রাখলে বৈষম্য ছাড়া আর কোনও কিছুরই বৃদ্ধির সত্য সামনে আসে না। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী কী অবলীলায় বলেন, ‘মোদি মানেই গ্যারান্টি। মোদি মানেই গ্যারান্টি পূরণ। প্রতিটি গ্যারান্টি পূরণ করার নামই মোদি। মোদি আজ পর্যন্ত যত গ্যারান্টি দিয়েছে, পূরণ করেছে তার সবই।’ যে মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সামনে রেখে অচিরেই ভারতের অর্ধেক আকাশ কেনার মতলবে আছেন মোদি, সেটিও যে কত বড় ‘জুমলা’ তা খোলসা করে দিয়েছেন সংবিধান এবং আইন বিশেষজ্ঞরা। তাই নিজের ঢাক এখন আরও বেশি করেই বাজাতে হচ্ছে তাঁকে—’মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। হায়, এটাই যে সবচেয়ে বড় অসত্য উচ্চারণ তা বহু পরম গেরুয়া ভক্তেরও আর অজানা নয়। এসব বালাই ভোটের হলেও—ভারত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদা রক্ষার্থে এবার নরেন্দ্র মোদির বাকসংযম প্রার্থনীয়। 

27th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ