বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বৃহত্তম চ্যালেঞ্জের মুখে গণতন্ত্র

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে যে সংবিধান কার্যকর রয়েছে, তাতে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এটি এমন একটি সংবিধান যেটি গণপরিষদের মাধ্যমে তৈরি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত। ফলে এই সংবিধান সংসদের আধিপত্য স্বীকার করেনি, তার বদলে ভারত নামক ‘ইউনিয়ন অব স্টেটস’ সাংবিধানিক আধিপত্যে পরিচালিত হওয়ার কথা। সংবিধান ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার, সাম্য, স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতার আশ্বাস দেয়। ভারতীয় সংবিধান জাতি ধর্ম ভাষা অঞ্চল নির্বিশেষে সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ তুলে ধরে। সংবিধানই হল ভারত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান নামক নথিটি এমন একটি কাঠামো গড়ে দিয়েছে, যার ভিতরে স্পষ্ট রয়েছে সরকার ও প্রশাসন, আইনসভা এবং বিচারবিভাগের এক্তিয়ার। ভারত যেহেতু সংসদীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলির দায়িত্ব-কর্তব্য, অধিকার, এক্তিয়ার ইত্যাদি নির্দিষ্ট রয়েছে। এই সংবিধানে সুস্পষ্ট হয়েছে নাগরিকের কর্তব্য ও মৌলিক অধিকার এবং নির্দেশমূলক নীতিগুলি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লিখিত এই সংবিধান বহু দলীয় গণতন্ত্রের উপর আস্থা স্থাপন করেছে। তাই কেন্দ্রীয় শাসকরা কখনও বিরোধী দলের রাজ্যসরকারগুলির সঙ্গে কোনওরূপ বৈষম্যের নীতি নিয়ে চলতে পারে না। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের অবনতির নেপথ্যে বেশিরভাগ সময়েই থাকে কেন্দ্রের তরফে সাংবিধানিক নির্দেশ লঙ্ঘন এবং ‘দাদাগিরি’র মানসিকতা। 
কংগ্রেস জমানা থেকেই এই অভিযোগ উঠছে। নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি অনুশীলনের কথা বলে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কিন্তু খুব দ্রুত মোহভঙ্গ হয়েছে মানুষের। ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকারগুলিকে অপদার্থ প্রমাণ করার জন্য মোদি সরকার যে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আমদানি করেছে তাতে একইসঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানুষের এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে, এটাই প্রবাদ। কিন্তু এই সরকার দিনের পর দিন এমনসব দৃষ্টান্ত সামনে আনছে তাতে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে, এই সরকারের বোধবুদ্ধি পাগলের চেয়েও খারাপ। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলির একটি অন্যটির উপর কোনওভাবেই কর্তৃত্বের মনোভাব দেখাতে পারে না। প্রত্যেকে নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কাজ করবে। তবে একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যের সম্পর্কও বজায় রাখবে, যাতে দেশের স্বার্থে অন্যের কাছ থেকে সবসময় কিছু শিখতে পারে। শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বার কাউন্সিলের এক আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আইনমন্ত্রী অর্জুন মেঘওয়ালও। এদিনের আলোচনা আবর্তিত হয় সুবিচার প্রদান প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সামনে প্রারম্ভিক ভাষণে বিচারপতি চন্দ্রচূড় পরিষ্কার করে দেন, সুবিচারের একমাত্র পথ আলোচনা এবং  পারস্পরিক মতদান।  বিচার ব্যবস্থার হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা নিশ্চিত করার উপরেও গুরুত্ব দেন তিনি। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়া বিচার ব্যবস্থা অর্থহীন। আবার বিচারহীন ক্ষমতা প্রদর্শনের নাম স্বৈরতন্ত্র।’ 
প্রধানমন্ত্রীও মেনে নেন, ‘ভারতের এখন প্রয়োজন একটি শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা।’ কিন্তু বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যে ধরনের সংঘাতে সরকার আজ লিপ্ত তাতে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তার সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখনও পর্যন্ত তাঁদের যে মনোবাঞ্ছা প্রকট হয়েছে, তাতে এটাই বোঝা গিয়েছে যে বিচার বিভাগের ‘নিরপেক্ষতা’ বলতে তাঁর সরকার শাসকের আধিপত্যই বুঝে থাকে। এই সরকারের ভাবনাচিন্তা নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও একই। এই সত্যটি সরকার আর গোপন রাখতে পারছে না যে, তারা আরএসএসের এজেন্ডা দ্রুত পূরণের দায়িত্ব নিয়েই এগচ্ছে। নির্বাচন এবং বিচার ব্যবস্থার উপর প্ল্যান মাফিক কর্তৃত্ব ছাড়া সঙ্ঘের স্বপ্ন সাকার হওয়া অসম্ভব। তাই তারা সংবিধানের নয়, সংসদের আধিপত্য কায়েম করতে মরিয়া। স্বভাবতই, বিরোধীরা তো বটেই বিশেষজ্ঞদেরও অনেকে এই শাসকের হাতে সংবিধান পাল্টে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন। ভারতের গণতন্ত্র এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আর কখনও পড়েনি।

25th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ