বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মগের মুলুক

এতদিন তবু বাইরের জগৎ-এ শব্দগুলো ঘোরাফেরা করত। হুমকির কথা শোনা যেত রাস্তাঘাটে, জনসভার মঞ্চে বা রুদ্ধদ্বার কক্ষের বৈঠকে। এবার আর কোনও রাখঢাক নেই। নতুন সংসদ ভবনে রাতের বেলায় সাংসদদের উপস্থিতিতেই বেলাগাম কথা শোনা গেল বিজেপির দক্ষিণ দিল্লির এক সাংসদের মুখে। ‘ইয়ে উগ্রবাদী হ্যায়, ইয়ে আতঙ্কবাদী হ্যায়।’ আরও বললেন, বাহার ফেকো...। কুরুচিকর, অসাংবিধানিক কথাগুলো কার উদ্দেশে বললেন? একটি এক মিনিটের ভিডিওতে দেখা গিয়েছে বিএসপির সাংসদ দানিশ আলির দিকে এমন চোখা চোখা শব্দ, বাক্যবর্ষণ করছেন বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরি। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। মোদি জমানায় স্রেফ ধর্মের কারণে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ঘৃণা ছড়ানো নতুন কোনও ঘটনা নয়। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বজরং দলের অভিযুক্ত নেতা ধৃত মনু মানেসরের কণ্ঠস্বরই যেন এবার শোনা গেল সংসদের ভিতরে! এক সাংসদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ, হুমকির নিদান যেন বুকে ছুরির মতো বিঁধে ফালা ফালা করে দিচ্ছে! বিজেপি সাংসদ যখন একের পর এক ঘৃণা উগরে দিচ্ছিলেন তখন সংসদে পাশে বসে হাসছিলেন বিজেপির অন্য কোনও কোনও নেতা-নেত্রী! অভিযোগ এরকমই। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনার পর অবশ্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মৌখিক দুঃখপ্রকাশ করেছেন। বিজেপি ওই সাংসদকে ‘শোকজ’ করেছে। লোকসভার স্পিকার তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু শাসকদল এর দায় এড়াবে কীভাবে? যে সংসদে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘ঈশ্বরের বরপুত্র’ হিসাবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তিনি কিন্তু এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি! কোনও কঠোর মন্তব্যও শোনা যায়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখ দিয়েও। বস্তুত গোটা শাসক শিবিরেই যেন এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। যদিও সংসদের মতো পবিত্র স্থানে এমন অভব্য কটূক্তি, ধর্মকে ইঙ্গিত করে অসংসদীয় ভাষার প্রয়োগ, উস্কানিমূলক বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরে সঙ্গত কারণেই তোলপাড় হচ্ছে রাজনীতির ময়দান। ভারতের সংসদের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। আম আদমি পার্টি তো দিনটাকে ভারতের সংসদীয় ইতিহাসের কালো দিন হিসেবেই উল্লেখ করেছে। বিজেপি নেতৃত্ব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই ‘কুকথা’ ইস্যুকে হাতছাড়া করতে নারাজ বিরোধীপক্ষ। অস্বস্তি বেড়েছে শাসক শিবিরে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর বহু চর্চিত স্লোগান যে আসলে মুখোশ তা এতে পরিষ্কার। একদিকে তিনি বোঝাতে চাইছেন, দেশের সব ভাষা-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে চলা এবং তাদের উন্নতি করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য। অন্যদিকে আরএসএস বিজেপির দর্শনই হল হিন্দুরাষ্ট্র গঠন এবং এই লক্ষ্যপূরণে ঘৃণাভাষণ দিয়ে, কুরুচি ছড়িয়ে, নিধনযজ্ঞ চালিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করাই হল একটা পরিকল্পনা। গতবছর দিল্লিতে এক ধর্মগুরু সংখ্যালঘু মুসলিমদের রুখতে হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর মাস দুয়েক আগে হরিয়ানায় আরেক ধর্মগুরু পুলিসের উপস্থিতিতে রাইফেলের লাইসেন্স দাবি করেছেন যাতে অনেক দূর থেকে গুলি চালানো সম্ভব হয়। সংখ্যালঘুদের ‘গলা কেটে নেওয়ার’ নিদান দিয়েছিলেন আর এক জগৎগুরু। আর এই সেদিন হরিয়ানায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ‘কেউ আমাদের দিকে আঙুল তুললে তার আঙুল কেটে ফেলব।’ বিজেপি নেত্রীর নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্য নিয়ে অভিযোগ কিংবা এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ‘গোলি মারো শালে কো’ হুঙ্কারের কথাও কেউ ভোলেনি। আসলে এসবই হয়তো শাসকের পরিকল্পনারই অঙ্গ। সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটা আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করা, তাদের হেনস্তা করা, হিংসা ছড়ানো, একঘরে করে দেওয়া এবং এটা বোঝানো এরা যেন দেশের ‘গদ্দার’। যদিও প্রধানমন্ত্রী মুখে বলবেন সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস।’
এই আতঙ্ক দেখা গিয়েছে দানিশ আলির শরীরী ভাষাতেও। নিজে একজন সাংসদ হয়েও এই ঘটনায় আতঙ্কে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি চান এই ঘটনায় অভিযুক্ত সাংসদের কঠোর শাস্তি হোক। নাহলে তিনি লজ্জা ঘৃণা অপমানে নিজেই হয়তো সাংসদ পদ ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কে দেবে কঠোর শাস্তি? বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার হিম্মত আছে কি তাঁর দলেরই সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার? সুপ্রিম কোর্টের বারংবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদে দাঁড়িয়ে এমন গা ঘিনঘিনে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য কেন বিজেপি সাংসদকে গ্রেপ্তার করা হবে না, কেন তাঁর সাংসদপদ খারিজ করা হবে না, কেন তাঁকে সামাজিক বয়কট করা হবে না— সেই ন্যায্য প্রশ্নগুলি উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে, সব দেখে শুনেও কেন বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা ও সাংসদরা চুপ করে রয়েছেন? কিন্তু প্রশ্ন প্রশ্ন আকারেই থেকে যায়। একের পর এক ঘৃণাভাষণ বিজেপির ‘সংস্কৃতি’কে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। সবকা সাথ, সবকা বিকাশের ভাঁওতার আড়ালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোদির মতো হিন্দুত্ববাদী নেতারা স্থির লক্ষ্যে এগবেন, এটা ভবিতব্য। সুতরাং আগামী দিনে রমেশ বিধুরিদের শাস্তির বদলে কণ্ঠস্বর আরও চওড়া হবে—এটাই হয়তো দেখতে হবে দেশবাসীকে। কারণ মোদিবাহিনীর মগের মুলুক চলছে!

24th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ