বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

‘বিশ্বগুরু’ বনাম ‘ইন্ডিয়া’

গেরুয়া শিবিরের নয়া নয়া ধুয়ো দেখলেই মালুম হয় ভোট এগিয়ে আসছে। এবার যেমন শুরু হয়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে ‘বিশ্বগুরু’ সাজাবার কসরত। অর্থাৎ চব্বিশের ফাইনাল ম্যাচ নির্ধারিত হতে চলেছে ‘বিশ্বগুরু’ বনাম ‘ইন্ডিয়া’। কিন্তু বাইডেন, পুতিন, জিনপিংসহ কয়েক ডজন বিশ্বনেতাকে পিছনে ফেলে মোদিজি কোন বিচারে ফার্স্টবয় হয়ে গেলেন? একটি শিশুরও জানা খতিয়ানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়: সমাজের প্রথম দিকের ১০ শতাংশের মধ্যে আজ বৈভবের ছড়াছড়ি। অন্যদিকে, নীচের দিকের অর্ধেক মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। ভারতীয়দের মধ্যে ধনাঢ্য (মিলিয়নেয়ার) ব্যক্তির সংখ্যা ২০০০ সালে ছিল ৯। সংখ্যাটি ২০২২-এ হয়েছে ১১৯। ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোদি জমানার দ্বিতীয় দফায় (২০১৮-২২)। ওই চার বছর ৭০ জন নতুন ধনাঢ্য ব্যক্তির সৃষ্টি করেছে। শোনা যায়, এঁদের বেশিরভাগই গেরুয়া শিবিরের স্নেহধন্য। অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে, ভারতের প্রথম দিকের ১০ শতাংশ মানুষের হাতে মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭ শতাংশ কুক্ষিগত রয়েছে। ২০১৭ সালে সৃষ্টি হওয়া জাতীয় সম্পদের ৭৩ শতাংশ কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে। অন্যদিকে, একই সময়ে দেশের ৬৭ কোটি মানুষের সম্পদ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ! অথচ, পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে ভারতের সাম্প্রতিক উত্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অহমিকার শেষ নেই। কিন্তু তিনি এই সত্যটি চেপে যান যে ভারতবাসীর মাথাপিছু আয়ের অঙ্কটি একজন বাংলাদেশির চেয়েও কম! 
ভারত একটি নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ মাত্র, মধ্য আয়ের দেশও নয়। হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পাঁচ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতিও হবে ভারত। কিন্তু তখন চীনের অর্থনীতির সঙ্গে ফারাকটা কী দাঁড়াবে? এই নির্মম সত্যটি উচ্চারণের দুঃসাহস মোদি সরকারের কারও নেই। প্রধানমন্ত্রী আপাতত এই স্বপ্ন ফেরিতে ব্যস্ত যে, ২০৪৭-এর আগেই ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু বার্ষিক রোজগারের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা হবে। সংগত প্রশ্ন রয়ে যাবে: মুদ্রাস্ফীতির বিচারে কতটা কমবে সেই টাকার ক্রয়ক্ষমতা? এই গড় আয়ের ভিতরে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অংশ বাদ দিয়ে আম জনতার জন্য বাস্তবে কয়টি টাকা অবশিষ্ট থাকবে? একই সময়ে আমেরিকা, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, চীন, এমনকী বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় বেড়ে কত হতে পারে? ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে (২০২৩) ভারতের স্থান ১০৮। ভি-ডেম ইনস্টিটিউট তাদের ডেমোক্রেসি রিপোর্টে (২০২৩) ভারতকে তানজানিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশেরও নীচে রেখেছে। গত দশ বছরে বিশ্বের ‘টপ ১০ অটোক্রেটাইজিং কান্ট্রি’র মধ্যে রাখা হয়েছে ভারতকে। ইডিআই’তে ভারতের পজিশন ১০০ থেকে ১০৮-এ নেমে গিয়েছে। একই সময়ে উদার গণতন্ত্র সূচকে ভারতের লজ্জার স্থানটি হল ৯৭। সাধারণ নির্বাচনটা এখনও হয়, তাই পুরোপরি ‘স্বৈরতন্ত্র’ বলেনি পশ্চিমি দুনিয়া। তারা ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’ পর্যন্ত বলেই থমকে রয়েছে। ২০২১ সালে দি ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট‍ থেকে প্রকাশিত গণতন্ত্র সূচকে ভারতকে ‘ফ্লড ডেমোক্রেসি’ আখ্যা দেওয়া হয় এবং দুই ধাপ নামিয়ে রাখা হয় ৫৩তম স্থানে। এমন রাষ্ট্র বিশ্ব সুখের সূচকেও যে পশ্চাৎপদ (১৩৬টি দেশের মধ্যে র‌্যাঙ্ক ১২৩) চিহ্নিত হবে তাতে সন্দেহ কী। গণতন্ত্রের নয়া মন্দিরে প্রবেশের পর শুরু হয়েছে গণতন্ত্রকেই যূপকাষ্ঠে চড়াবার ফন্দিফিকির। এমপিদের হাতে ‘আসল সংবিধানের প্রতিলিপি’ তুলে দেওয়ার বাহানার মধ্যে রয়েছে পরোক্ষ হুমকি—দেশের সাংবিধানিক পরিচয় থেকে ‘ধর্মনিরেপক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’-এর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ দুটি যেকোনও দিন মুছে যেতে পারে! 
মোদিযুগে ভারত জনসংখ্যায় সারা পৃথিবীতে ফার্স্ট হয়েছে। পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক গরিব, অপুষ্টির শিকার নারী ও শিশু, বেকার এবং বস্তিবাসী ভারতেই বাস করে। বৈষম্যে কলুষিত সমাজগুলোর প্রথম সারিতেই মোদির ভারত। প্রধানমন্ত্রীর পার্টিই দেশের মধ্যে ধনীতম। অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সম্পদের পরিমাণ বিজেপির ধারেকাছে নেই। দলীয় সম্পদের বার্ষিক বৃদ্ধির হারে দলটা সবাইকে চমকে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পদের প্রতিযোগিতাতেও হয়তো বিজেপি সবাইকে বলে বলে গোল দিয়ে চলেছে। নেতারা এমনিতেই তো দাবি করেন, তাঁদের পার্টিই পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ। যদি এই বিচারে ‘ভারতেশ্বর’ নরেন্দ্র মোদি ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে থাকেন তবে সবাই আসুন, এই মওকায় তাঁর জন্য হাততালির বন্যা বইয়ে দিই—এ তো আমাদের জাতীয় কর্তব্য।

22nd     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ