বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ঝড়ের পূর্বাভাস

ঝড়ের পূর্বাভাস। অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। পদ্ম কাঁটা উপড়ে ফেলে বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা আসনটি যেভাবে পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল, তাতে নিঃসন্দেহে চাপে পড়ল কেন্দ্রের শাসক দল। কারণ, দিন যত গড়াচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ততই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তারও প্রমাণ মিলেছে ছয় রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে। বিরোধীদলগুলির সম্মিলিত জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম দেশে সাতটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে তাদের অগ্নিপরীক্ষা হল। সাতটির মধ্যে চারটিতেই জয় পেয়েছেন বিরোধীরা। ’২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে এই ফল বুঝিয়ে দিচ্ছে শাসক বিজেপিকে একমাত্র টক্কর দিতে পারে এই ‘ইন্ডিয়া’ জোটই। সামনের নভেম্বর ডিসেম্বরেই আছে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই ভোটের আগে এই ফল কেন্দ্রের শাসকজোটকে যথেষ্ট চাপে ফেলল। পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়ি আসনটি বিজেপির হাতছাড়া হওয়া ছাড়াও অন্যত্র যেসব আসনে বিজেপি জিতেছে সেখানেও জয়ের মার্জিন বেশি নয়, বা কমেছে। অর্থাৎ ইন্ডিয়া জোটের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি বিজেপির জনসমর্থনও যে কমছে তা স্পষ্ট। বলা যায়, বিধানসভা উপনির্বাচনে সাতটির মধ্যে চারটি আসন ছিনিয়ে নিয়ে প্রথম লড়াইয়ে এগিয়ে রইল ‘ইন্ডিয়া’। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অঘটন হল বিজেপির পোস্টারবয় যোগী রাজ্যের প্রেস্টিজ ফাইটে ঘোসি আসনে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী ধরাশায়ী হয়েছেন।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠিত হওয়ার পর তাদের প্রথম পরীক্ষাতেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য এল। বাংলা সহ ছয় রাজ্যে সাতটি বিধানসভা ভোটে তারা কেমন পারফর্ম করে সেদিকে নজর ছিল গোটা দেশবাসীর। দেখা গেল ‘ইন্ডিয়া’ বনাম এনডিএ-র মিনি ম্যাচে ৪-৩ গোলে টেক্কা দিয়েছে এই বিরোধী জোট। নিঃসন্দেহে এই জয় বিরোধীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আশাব্যঞ্জকও। সত্যিই যদি তারা একজোট হয়ে লড়াই চালাতে পারে তাহলে বিজেপিকে হারানো যে আদৌ অসম্ভব নয় সেটা স্পষ্ট হয়েছে। ইন্ডিয়া জোট দেখিয়ে দিল বিজেপির নিজেদের গড় বলে পরিচিত যোগী রাজ্যেই গেরুয়া প্রার্থীকে হারানো সম্ভব হল। একদিকে বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরছে, অন্যদিকে পায়ের নীচের জমি শক্ত হচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’র। সঙ্গত কারণেই তাই ‘ইন্ডিয়া’ আতঙ্ক মোদিবাহিনীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। হয়তো বা রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার উপক্রম।
আসা যাক বাংলার প্রসঙ্গে। কেবলমাত্র জাতপাত, ধর্মান্ধতা, বিভেদের রাজনীতি আর হিন্দুত্বের তাস খেলে যে বাংলায় নির্বাচনী বৈতরণী পেরনো যাবে না, বিজেপির মুখের উপর সেই জবাব দিয়েছে বঙ্গবাসী। শুধু রাজবংশী আর মতুয়া অঙ্ক কষে যে বাংলায় জেতা যায় না তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ধূপগুড়ির মানুষ। ধূপগুড়ির ভোটার উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে শাসক তৃণমূল। বিজেপির স্বঘোষিত এই গড়ে পর্যুদস্ত তারা। অন্যদিকে জোড়াফুল শিবির যত মজবুত হচ্ছে ততই ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে। ২৪-এর মহারণে বিজেপিকে হারাতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা মেনে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ে যে শরিক হতে হবে, বাম-কংগ্রেসেরও সেই শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। ধূপগুড়ি বুঝিয়ে দিল তা নাহলে তারা আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। সামনেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তারপরই বেজে যাবে লোকসভা ভোটের দামামা। স্বাভাবিকভাবেই উপনির্বাচনের ফল ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। ফলাফল বুঝিয়ে দিচ্ছে বিজেপির অপশাসনে মানুষ তিতিবিরক্ত। মুখ ফেরাচ্ছে বিজেপির দিক থেকে। উত্তরপ্রদেশে পর্যন্ত তারা ধরাশায়ী হয়েছে। তাই চিন্তা, উদ্বেগ বাড়ছে পদ্মশিবিরের। হাওয়া যে ঘুরছে তা বেশ বুঝতে পারছে গেরুয়াবাহিনীর অন্দরমহলও। কমেছে তাদের জনসমর্থন। আগের মতো কাজ করছে না মোদি ম্যাজিক। বিজেপির বিকল্প হিসেবে যে দেশের মানুষ ‘ইন্ডিয়া’কে গ্রহণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে এ যেন তারই বার্তা দিচ্ছে। তাই ২০২৪-এর ভোট মরশুম শুরুর আগে জি২০-র যাবতীয় কৃতিত্ব নিতে মোদি সরকার যতই মরিয়া বা তৎপর হয়ে উঠুক, বাস্তব কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে। দিল্লিময় মোদির ফ্লেক্সে ও পদ্মফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি ঘটিয়ে যতই এই সম্মেলনকে মোদির ভোট প্রচার মঞ্চে পরিণত করা হোক না কেন, গেরুয়াবাহিনী আঁচ পাচ্ছে হাওয়া ঘুরছে। ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। মোদি জমানার দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আম জনতা চাইছে পরিবর্তন। আর ধীর গতিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট তাদের প্রতি বিশ্বাস অর্জনের রাস্তাটিও মসৃণ করছে।

10th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ