বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

গুরুত্ব বাঙালির ভাবাবেগে

কথায় বলে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। বঙ্গ কাঁটায় বিদ্ধ কেন্দ্রের শাসক দলের ভূমিকাটা অনেকটা সেরকমই। দেশে হাজারো জ্বলন্ত সমস্য থাকা সত্ত্বেও সেসব নিয়ে মাথা-ব্যথা নেই বিজেপি সরকারের। তাদের ভাবনায় কেবলই বাংলাকে জব্দ করার ফন্দি! বাংলা ও বাঙালির ভাবাবেগে আঘাত করতেও পিছপা নয়। এরাজ্যে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কবে পালিত হবে তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্যোগকে ঘিরেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশেই ১৯৪৭ সালের ২০ জুন অবিভক্ত বাংলার আইনসভায় হওয়া বাংলাভাগের উপর ভোটাভুটির ঘটনাকে সামনে রেখে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় পদ্মশিবির। যে রাজ্যের বিষয়ে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সেই রাজ্য সরকারের মতামত না নিয়েই সিদ্ধান্তটি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র! সেইমতো চলতি বছরেই ২০ জুন রাজভবনকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনও করিয়েছে তারা। রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত এখানেই। অখণ্ড বাংলাকে ভাগ করার একটা বেদনাদায়ক দিনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালনের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও। বিচ্ছেদের স্মৃতিবহনকারী দিনটিকে উৎসবের দিনের মাত্রা দেওয়ার পিছনে বিচ্ছিন্নতাবাদের মানসিকতাও প্রকাশ পেয়েছে। আঘাত করা হয়েছে বাঙালির ভাবাবেগে। এই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সবর হয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। রাজনৈতিক এজেন্ডা পূরণই যাদের মূল লক্ষ্য, তাদের কাছে বাঙালি এবং বাংলা কী চায়, সেই বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ কোথায়? বারবার সে প্রমাণই দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। আর তাই আরএসএসের এজেন্ডা মতোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে এবং বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে ২০ জুনকে স্বীকৃতি দিতে মরিয়া তারা। কিন্তু আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কি এমন তথ্য জানে? ইতিহাসের বইতেও কি এসব লেখা আছে? দেশভাগের স্মৃতি উস্কে দিতে চেয়ে কেন্দ্রের শাসক দলের এমন চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তকে সঙ্গত কারণেই মানতে নারাজ মমতার সরকার। তাই বাংলার ঐতিহ্য, বাঙালির ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকার ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালনের জন্য এমন একটি দিনকে বেছে নিয়েছে যে দিনটিকে বঙ্গবাসী শুভ দিন বা কাজ শুরুর দিন বলেই মনে করে। পয়লা বৈশাখ। সারা দেশ, এমনকী বিশ্বও জানে দিনটি বাঙালির নববর্ষের দিন। বাঙালির আনন্দ উৎসব, গণেশ পুজো, হালখাতার ইত্যাদির দিন। তাই যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলা বছর শুরুর প্রথম দিনটিকেই ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্তে অনড় রাজ্য সরকার। আর তাই বঙ্গভঙ্গের চূড়ান্ত বিরোধী রবি ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘রাজ্য সঙ্গীত’ হিসেবেও। বিধানসভায় এব্যাপারে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন ও রাজ্যের সঙ্গীত ঠিক করার বিষয়টি জরুরি ছিল কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক জ্যাঠামশাইদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের অবগত থাকা উচিত, অন্যান্য কোনও কোনও রাজ্যে কিন্তু এমন দিবস পালিত হয়। আর যা ছিল না তা যে কোনও দিন হবে না, এটা ভাবাও সঙ্গত নয়। একসময় তো চন্দ্র-সূর্য অভিযানের কথা ভাবাই যেত না। বিজ্ঞান প্রযুক্তির জয়যাত্রার দৌলতে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে বিক্রম। সফল হয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর অভিযান। তাই অতীতে যা হয়নি, ভবিষ্যতেও যে তা হবে না, এটা ভাবার সঙ্গত কারণ আছে কি? যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন ক্ষমতায় আসার ১২ বছর পরে কেন মমতা সরকার এব্যাপারে এত তৎপর হল? জবাব দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। বলেছেন, এতদিন তো রাজভবন ২০ জুন পালন করেনি। একটা বিধ্বংসী দিনকে বাংলার মানুষ গ্রহণ করবেন না। এটা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতেই স্পষ্ট, এই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারই। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস ২০ জুন বলে দাগিয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ক্যালেন্ডারও তৈরি করেছে। তাই বলতেই হয়, অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে যদি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠা দিবস থাকে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য রাজ্য সরকার পয়লা বৈশাখ দিনটিকে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করলে সমস্যাটা কোথায়? আপত্তিটাই বা উঠছে কেন?
আসলে বাংলার উপর খবরদারি করার মানসিকতায় ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবসের জন্য বেছে নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে গেরুয়া শিবির, যা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরলে অবাক হওয়ার নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে যে দলের তেমন কোনও ভূমিকাই ছিল না, তারাই এখন দেশভক্তির নামাবলি চাপিয়ে তাদের মনগড়া ইতিহাসের পাঠ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানেই বাদ সেধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনও সিদ্ধান্তের জেরে পরবর্তী প্রজন্ম যাতে একটি ভুল দিনের সাক্ষী হয়ে না-থাকে, সেই চেষ্টাই করেছে তাঁর সরকার। বলা বাহুল্য, পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করার বিষয়টিও ঝুলিয়ে রেখেছে মোদি সরকার। এই পদ্ম শিবিরই এখন পশ্চিমবঙ্গ দিবস প্রসঙ্গে রাজনৈতিক তরজায় নেমেছে। মানতে নারাজ বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য পরম্পরার কথা। কিন্তু আপামর বাঙালির দিন হল ১ বৈশাখ—‘বাংলা দিবস’।

9th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ