বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ভীষণ দামি ড্যামেজ 

বার বার দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে ভারতীয় রেল। স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮১ সালে। বিহারে মানসী ও সারসার মধ্যবর্তী স্থানে। আটশোর বেশি যাত্রী বোঝাই একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে বাগমতী নদীতে পড়ে যায়। সে-সময় প্রবল ঝড়ও বইছিল সেখানে। ওই ঘটনায় সাড়ে সাতশোর বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়। গত শতকের শেষদিকে ফিরোজাবাদ (১৯৯৫), পাঞ্জাবের খান্না (১৯৮৮) এবং বাংলায় গাইসাল (১৯৯৯) রেল দুর্ঘটনাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়। রেল দুর্ঘটনায় লাগাম পড়েনি বর্তমান শতকেও। গত দু’দশকে বড় রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা অন্তত ১৩। তাতে এক একটিতে প্রাণহানির সংখ্যা ৫০ থেকে কয়েক শত। যেমন সদ্য ঘটে যাওয়া বাহানাগার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে পৌনে তিনশো। তবে বেসরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন নানা বয়সি সহস্রাধিক নরনারী। এই চিত্র এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, রেল পরিষেবার উন্নতি নিয়ে মোদি সরকার যতই লম্বা-চওড়া দাবি করুক না কেন, তা বাস্তবিকই ফাঁকা বুলি মাত্র। অতীতের একের পর এক দুর্ঘটনা থেকে রেল কর্তৃপক্ষ যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, তাও পরিষ্কার হয়। 
ড্যামেজ? হ্যাঁ, তা তো হয়েইছে, তবে একটু আধটু নয়, বিরাট বিশাল, অপরিমেয়। আর সংশয়ের অবকাশ নেই যে, এক বাহানাগাই মোদি সরকারের হাঁড়ি হাটের মাঝেই ভেঙে দিয়েছে। শুধু কয়েক হাজার চাকরি দিয়ে এত বড় ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে না। সব পুরনো শূন্যপদে নিয়োগ করতে হবে দ্রুত। এই‌সমস্ত পদের অনুমোদন যখন দেওয়া হয়, তখন সব মিলিয়ে কত রেলগাড়ি চলত? কত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণের ভার নিত ভারতীয় রেল? আজকের ভারত জনসংখ্যায় চীনসহ সব দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। স্বভাবতই অনুমান করা যায়, এই দুই ক্ষেত্রে রেল পরিবহণ ব্যবস্থা কী ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে। সেখানে অনেক বছর আগে অনুমোদিত পদগুলির মধ্যেই শূন্য তিন লক্ষাধিক! ভাবতেই শিউরে ওঠেন সবাই। কারণ সময়ের দাবি মেনে যখন আরও তিন লক্ষ নতুন পদ সৃষ্টি করাই ছিল যুক্তিযুক্ত, তখন পুরনো পদের মধ্যে তিন লক্ষাধিক শূন্য! শূন্যপদগুলি পূরণের দাবিতে রেলের শ্রমিক সংগঠনগুলি বহুবার দাবিপত্র দিয়েছে এবং সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হয়েছেন বিরোধী এমপিরা। রেলের অন্দরের কঙ্কালসার ছবিটা বাইরে বেরিয়ে এসেছে অনেক আগেই। তবু নির্বিকার শুধু দু’জন—‘ভারতেশ্বর’ নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তাঁরা জানেন শুধু প্রসাধনের কৌশলী ব্যবহার। তাঁরা ভাবেন—বুলেট, বন্দে ভারত প্রভৃতি গালভরা নামের কিছু নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করে দিলেই ভারতীয় রেল আধুনিক ও উন্নত হয়ে যাবে এবং মন গলে যাবে যাত্রী সাধারণের। কিন্তু এসব গাড়ি কোন ট্র্যাকে চলবে, কী তার হাল, সিগন্যাল সিস্টেমে ‘জং’ ধরে রয়েছে কি না, পর্যাপ্ত সংখ্যায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মিবাহিনী আছে কি না—তার খোঁজখবর রাখেন কি কর্তৃপক্ষ? 
কোনও সন্দেহ নেই, সরকার বাহাদুর একটাই দাবি করবেন, ‘সব ঠিক হ্যায়!’ কিন্তু বাহানাগা দুর্ঘটনা থেকে আমরা যে তার সম্পূর্ণ বিপরীত বার্তা পাই। তাই, সংগত দাবি, এই একটিমাত্র ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শত শত পরিবারের বিপন্নতার দায় সরকার এখনই মাথা পেতে নিক এবং চালাকির পথ ছেড়ে উঠে আসুক বাস্তবের মাটিতে। মেনে নিক যে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সমস্তরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা করতে তারা সত্যিই ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্য যে আন্তরিক প্রয়াস দরকার, সরকার সেটাই নিয়েছে—দেখতে চায় দেশবাসী। রেল নিছক একটি পরিবহণ শিল্প নয়, ভারতের ঐক্য, অখণ্ডতা ও অগ্রগতিরও প্রতীক। কিছুদিন অন্তর মৃত্যুমিছিল উপহার দিয়ে ভারতীয় রেল স্বাধীন ভারতের সেই সত্য ও স্বপ্নটাকেই চুরমার করে চলেছে।

9th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ