বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মানুষের পাশে দাঁড়াবার রাজনীতি

ক্রবার বালশ্বেরের কাছে বাহানাগায় রেল দুর্ঘটনার বলি ঠিক কতজন? শনিবার রেলের তরফে ২৮৮ জন রেলযাত্রীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। পরদিন, রবিবার ওই কেন্দ্রীয় দপ্তরই দাবি করে, মৃতের সংখ্যাটি অত নয়, মারা গিয়েছেন ২৭৫ জন। অর্থাৎ, মৃতের তালিকা থেকে রাতারাতি উধাও ১৩ জন! অথচ, শনিবার রাতে বগির স্তূপ সরানোর সময়ও একাধিক নতুন মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা। তাই মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বদলে কমে যাওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে স্বাভাবিক বিতর্কও। অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক দায় গ্রহণের বোঝা কমাতেই এ এক কেন্দ্রীয় কৌশল। এই ব্যাপারে রেলের তরফে যে ব্যাখ্যা মিলেছে তা অতিদুর্বল। 
তবে মোদি সরকারের এই যুক্তিতর্কের বিষয়টি আপাতত সরিয়ে রেখে বাস্তবে দেখা যায় যে, ভুবনেশ্বর এইমস একসঙ্গে এত মৃতদেহ দেখেনি। ফলে, আচমকা এই ঘটনার কারণে ওই হাসপাতালে মৃতদেহ রাখার পরিকাঠামো সাময়িকভাবে বাড়াতে হয়েছে। জাহাজের তিনটি কন্টেনার আনা হয়েছে, যেখানে দেহগুলি প্রয়োজন মতো ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে আরও একটি মর্মান্তিক তথ্য হল, বাহানাগার দুর্ঘটনায় যতজন মারা গিয়েছেন এবং জখম হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ পশ্চিমবঙ্গের।  মৃতদের মধ্যে বাংলার মানুষ ১০৩ জন। শনাক্ত বাকি ১৮২টি দেহ। তাঁদের মধ্যে বাংলার বাসিন্দা থাকলে সংখ্যাটি পরে আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে এবং ওড়িশায় চিকিৎসাধীন বাংলার বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় তিনশো। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ৭৩ জনের চিকিৎসা চলছে কটক এবং ভুবনেশ্বরে। তিনদিনের পাহাড় সফর বাতিল করে মঙ্গলবার ওড়িশায় পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফে আরও গিয়েছেন দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং শশী পাঁজা। তাঁরা দুই হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নেন। রেল দুর্ঘটনার পর, শনিবার রাজ্যের তরফে কিছু আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দুর্ঘটনায় নিহত প্রতিটি পরিবার পাবে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি প্রতিজন পাবেন ১ লক্ষ টাকা। যাঁদের আঘাত কম, তাঁদের মাথাপিছু ২৫ হাজার টাকা হারে এককালীন অর্থসাহায্য দেওয়া হবে। ওইসঙ্গে দুর্গত পরিবারগুলির জন্য টানা তিনমাসের একটি আর্থিক প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর যেসব রেলযাত্রী মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন, নবান্ন থেকে তাঁরাও আর্থিক সাহায্য পাবেন। তাঁদের দেওয়া হবে এককালীন মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা অনুদান। তারপর তিনমাস ধরে মাসিক ২ হাজার টাকা হারে আর্থিক সহায়তা এবং খাদ্য ও কিছু জরুরি উপকরণ। দুর্গত পরিবারগুলিকে দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো হবে, তা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
বস্তুত এই বিরাট দায়ের পুরোটাই বর্তায় মোদি সরকারের উপর। এনিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপসৃষ্টির রাজনীতি করার সুযোগ ছিলই। মমতা সেই ‘সুযোগ’ গ্রহণের পরিবর্তে, তাঁর রাজ্য সরকারের সীমিত ক্ষমতা নিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই ভূমিকা প্রশংসনীয় এবং অনুসরণযোগ্য। পরিবর্তে, বাংলার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করছে। যেমন মঙ্গলবার বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ মমতার কটক যাত্রা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। দিলীপ বলেন, ‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কোথায় কী বলছেন ঠিক নেই, ওঁর উঠল বাই তো কটক যাই!’ বিজেপি একইসঙ্গে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দায়িত্বজ্ঞান এবং প্রশাসনিক দক্ষতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রেল দুর্ঘটনার আসল কারণ খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্তের যাথার্থ্য প্রমাণেও মরিয়া তারা। এরপরই সমালোচনার তির ঘুরে যাচ্ছে মমতার দিকে। বিজেপিসহ রাজ্যের একাধিক বিরোধী দল বলার চেষ্টা করছে, মমতা ভোটের রাজনীতি করছেন। বেশ তো, ভোটের রাজনীতি যদি মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়, মানুষের কল্যাণ হয়—তবে তা স্বাগত। সব দল এমন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হোক। কারণ এদেশে ভোট রকমারি—লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা, একাধিক স্থানে একাধিকবার উপনির্বাচন প্রভৃতি। অর্থাৎ পাঁচবছরে একাধিক বার ভোটের জন্য মানুষের সামনে করজোড়ে দাঁড়াতে হয় রাজনীতির কারবারিদের। ভোটের লোভেও যদি তাঁরা প্রতিবার মানুষের জন্য কিছু ভালো কাজ করেন, তা মন্দ কী!

7th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ