বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মানুষ জানতে চায়

একটানা ন’বছর ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সবচেয়ে বড় ‘সাফল্য’ কী? উত্তরটা সকলেরই জানা, তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেন না। তাঁর যোগাযোগ ‘ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের’ মতো। এই সময়ে বারবার তাঁকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছে। জনসভায় ভাষণ দিতেও তাঁর দড়। রেডিও-তে প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি শততম এপিসোড অতিক্রম করেছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া—যেখানে তাঁকে মাঝেমধ্যে উঁকি মারতে দেখা যায়। কিন্তু এসবই একমুখী। তাঁর যা বলার তিনি শুধু বলেন, কোনও প্রশ্নের উত্তর দেন না। দেশ যখন যে বিষয় নিয়ে উত্তাল হয়, তাই নিয়ে প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়ার অধিকার রয়েছে প্রতিটি নাগরিকের। এবং এই উত্তর দেওয়ার মধ্যে বাধ্যবাধকতাও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি মৌন থাকার বিলাসিতা দেখিয়ে জনতা জনার্দনকে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। জনতার দরবারে তাঁর উপস্থিতি যেন ছলনা মাত্র! এই সুযোগে তিনি আসল প্রশ্নগুলি সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। প্রশ্ন এড়াতে সংসদে কথা বলেন কম, পছন্দের চলচ্চিত্র অভিনেতা না হলে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন না! আর ন’বছরে কেউ তাঁকে কোথাও সাংবাদিক সম্মেলন করতে দেখেনি। অনেকে মনে করেন, নরেন্দ্র মোদি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। অতীতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অপ্রিয় প্রশ্ন শুনে সাক্ষাৎকার ছেড়ে উঠে গিয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হতে যাঁর এত ভয় সেই নরেন্দ্র মোদি একবার ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে’ বলেছিলেন, তিনি ‘প্রকৃত সমালোচকের’ অভাব বোধ করছেন! তাঁর বক্তব্য ছিল অধিকাংশ শুধু অভিযোগ করেন, প্রকৃত সমালোচনা হাতে গোনা। অথচ মোদির রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস বলছে, নিজের দলের কেশুভাই প্যাটেল বা প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাঁদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুলে দল ছাড়তে হয়েছে যশবন্ত সিন্‌হা, শত্রুঘ্ন সিন্‌হা, অরুণ শৌরির মতো নেতাদের। এও দেখা গিয়েছে, তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দলে ব্রাত্য করে দেওয়া হয়েছে লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশির মতো শীর্ষস্থানীয় নেতাদের।
দিল্লির মসনদে ন’বছর কাটানো মোদির কাছে এবার ৯’টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। তাঁর রাজত্বকালকে সেবা, সুশাসন ও গরিব কল্যাণের সময়কাল বলে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। কিন্তু এই ‘সাফল্যের’ অসত্য দাবির আড়ালে ৯টি জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ‘ক্ষমা’ চাওয়া উচিত বলে মনে করে বিরোধীরা। ৩০ মে ন’বছর পূর্তির দিনটি ‘মাফি দিবস’ হিসাবে পালন করুক বিজেপি—এই সঙ্গত দাবি উঠেছে। ন’বছর সরকার চালানো নরেন্দ্র মোদির কাছে দেশ জানতে চায়, কেন তাঁর আমলে রান্নার গ্যাসের দাম ১৬৯, সর্ষের তেল ৫৮, আটা ৫৬, দুধের দাম ৫১ শতাংশ বেড়েছে? কেন ভারতে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে? কেন বাড়ছে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান? ন’বছরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হল না কেন? কেন তাঁদের দৈনিক গড় আয় মাত্র ২৭ টাকা? সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, কেন তাঁর জমানায় দলিত আদিবাসী, এসটি, এসসি, মহিলা ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে ২৩ শতাংশ? করোনায় মৃত ৪০ লক্ষ মানুষের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হয়নি! এলআইসি’র মতো একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে মোদির ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছে জলের দরে বেচে দেওয়া হল কেন? তার জবাব চায় মানুষ। প্রশ্ন রয়েছে, ভারত সীমান্তে দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অনুপ্রবেশ করা চীনের সঙ্গে ১৮টি বৈঠকের পরও কেন মিটল না সীমান্ত সমস্যা? কেন বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে—সে প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা।
গত ন’বছরে এমন আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। মোদি যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন যে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না তা প্রায় নিশ্চিত। আসলে এপর্যন্ত দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী যে কাজটি করতে সক্ষম হননি, মোদি সেটাই করে চলেছেন অবলীলায়। অর্থাৎ, তিনি শুধু একতরফা বলে যাবেন। প্রশ্ন করার কোনও সুযোগ দেবেন না। তাঁর এই মৌনতা, স্বনির্বাচিত নীরবতা আসলে সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাওয়া। সাফল্যের চড়া মেকাপের আড়ালেও যা তাঁর জমানার প্রকৃত স্বরূপ বেআব্রু করে দিয়েছে।

28th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ