বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

সামান্য ক্ষতি

আবার নোট ‘বাতিলের’ কোপে ভারতের কোটি কোটি নাগরিক। এবার বাতিল করা হল ২০০০ টাকার গোলাপি নোট। চালু করার মাত্র সাড়ে ছ’বছরের মধ্যে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আচমকা বাতিল ঘোষিত হয়েছিল পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। শোনা যায়, সেবার এত বড় সিদ্ধান্তগ্রহণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও ভূমিকা ছিল না। আরবিআই কর্তাদের না-ছিল পরামর্শ, না-ছিল সমর্থন। পুরো চমকটিই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একার ‘কৃতিত্ব’। দেশবাসী গত ন’বছরে দেখেছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজের চেয়ে চমকের উপরেই অধিক আস্থা রাখেন। ২০১৬-র কাণ্ডটি নিঃসন্দেহে এমনই এক মোদি-দর্শনের সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ। বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের এত বড় দৃষ্টান্ত ভারত তো বটেই, সারা পৃথিবী কমই দেখেছে। ১৩০ কোটি মানুষের দেশে নোটবন্দির সিদ্ধান্তটিতে চমকে গিয়েছিল সারা পৃথিবীর মিডিয়া এবং অর্থনৈতিক মহল। জিনপিংয়ের দেশের সরকারি সংবাদপত্র পর্যন্ত মন্তব্য করেছিল, ‘চীনের সরকারও এই দুঃসাহ দেখাতে পারত না!’ অন্যদিকে, দেশের মানুষ আর্তনাদ করে উঠেছিল। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল সমস্ত বিরোধী দল। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদে দেশকে ‘পুনরুদ্ধারের’ স্বপ্নে মশগুল প্রধানমন্ত্রী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াগুলিকে পাত্তা দেননি। বরং আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের প্রতিক্রিয়া তাঁর কাছে রীতিমতো উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। মোদি এসবের ভিতরে ব্যক্তিগত বীররসেরই সন্ধান পেয়েছিলেন নিশ্চয়। 
প্রধানমন্ত্রী না মচকালেও এই ক’বছরে অবশ্যই জেনে গিয়েছেন, তাঁর হাততালি কুড়নোর নিষ্ঠুর নেশা বহু মানুষের প্রাণ অকালে কেড়ে নিয়েছে। বিরাট আঘাত নেমে এসেছিল দেশীয় অর্থনীতির উপর। কালো টাকা এবং জঙ্গি তহবিল—এই দুটির কোনওটাই ধ্বংস, এমনকী সামান্যও সংকুচিত হয়নি। অথচ, অর্থনীতি, কালো টাকা ও জঙ্গি তহবিল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সদর্প ঘোষণাটি ছিল উল্টো। অতিদর্পের পরিণাম কি মেঘমুক্ত দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে আসছে সরকারের সামনে? নোট বাতিলের পর জাল নোটের দাপট উল্টে বেড়ে গিয়েছে। আর সেটা হয়েছে মোদিজির সাধের গোলাপি নোটের সৌজন্যে। নয়া ২০০০ টাকার নোটের মজুতদারিও হয়েছে মাত্রাছাড়া। অতএব, আতান্তরে সরকার। বছর চার আগেই এই নোট ছাপা এবং ক্রমে গণহারে বাজারে ছাড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাউন্টার এবং এটিএমগুলি থেকে দু’হাজারি নোট হাওয়া হয়ে যেতেই জনমানসে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, এবার কি তবে গোলাপি জাদুর পাততাড়ি গোটাবার পালা? জনগণের প্রশ্নের দ্রুত অবসান ঘটে গেল আরবিআইয়ের শুক্রবারের (১৯ মে, ২০২৩) এক ঘোষণায়: ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের যেকোনও ব্যাঙ্কে গোলাপি নোট জমা করা কিংবা বদলে নেওয়া যাবে—তবে একলপ্তে ১০টির বেশি নোট নয়। ২০১৬ সালের মতো এবার অবশ্য সরাসরি ‘নোট বাতিল’ বলা হয়নি। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে শব্দবন্ধটি পরিহারই করা হয়েছে, সযত্নে। 
মানুষ যেটাকে ইতিমধেই দু’হাজারি ‘নোট বাতিল’ বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সেটাকেই তাদের ‘ক্লিন নোট পলিসি’র অন্তর্গত সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে। গোলাপি নোটের বৈধতা বজায় থাকছে বলে আরবিআই জানালেও, ১ অক্টোবরের পরে তার ব্যবহারযোগ্যতা এখনও স্পষ্ট করেনি। তাহলে আগামী কাল, মঙ্গলবার থেকেই ফের ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়াবেন নানা বয়সি নাগরিক। ফিরছে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর-পরবর্তী ভয়াবহ স্মৃতি! গোলাপি নোট জমা বা বদলের যে শর্ত আরবিআই দিয়েছে, তাতে মানুষকে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হবে। কারও ঘরে জরুরি প্রয়োজনে গচ্ছিত এই নোটের ২ লক্ষ টাকা থাকলে তাঁকে ব্যাঙ্কে ছুটতে হবে ১০ দিন! এত বাড়তি সময় কার আছে? ব্যক্তিটি অতিবৃদ্ধ হলে কিংবা তিনি দেশের মধ্যে দূরে কোথাও অথবা বিদেশে থাকলে তো রীতিমতো বিপন্ন বোধ করবেন! যে-সরকার অহরহ ব্যয়সংকোচের বুলি আওড়ায়, এবার জানাক, গোলাপি নোট ছাপতে রাজকোষের কতটা হালকা হয়েছিল? সরকারের এমন নীতি আলবাত উন্নয়নের পরিপন্থী। রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাই এই সরকারের ধ‌্যানজ্ঞান, যার জন্য প্রতিদিন পদে পদে আপস চলে উন্নয়নের সঙ্গে। তাই সরকার নিশ্চয় এই ‘সামান্য ক্ষতিতে’ বিচলিত বোধ করছে না।

22nd     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ