বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অবািঞ্ছত তরজা

অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগকেও। পূর্ব মেদিনীপুরে এগরা থানার খাদিকুল গ্রামে একটি বেআইনি বাজি কারখানার মালিক তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখমও হন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভানুও। গ্রামের এক প্রত্যন্ত এলাকায় কারখানাটি চলছে বহুবছর ধরে। সেখানে ওই এলাকার ৫০-৬০ জন কারিগর কাজ করতেন। অভিযোগ, বাজি কারখানার আড়ালে বোমাও বানানো হতো। এনিয়ে গ্রামবাসীদের প্রবল আপত্তি ছিল। সেই আপত্তি ভানু যেমন পাত্তা দেননি, তেমনি বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি স্থানীয় পুলিসও। তার প্রমাণ একাধিক। ভানুর বিপজ্জনক কারখানাটিতে বিস্ফোরণ এই প্রথম নয়, ২০০২ সালেও একবার হয়েছিল। ২১ বছর আগের ওই ঘটনায় ভানুর এক ভাইসহ তিনজন নিহত হন। তারপরও ভানু একই পাপের কারবার ফের শুরু করেন। সেটা রমরমিয়েই চলছিল। তার মধ্যে গত ১৯ অক্টোবর ভানুকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে জামিনও পেয়ে যান তিনি। এই ব্যাপারে স্থানীয় মানুষ পুলিসকেই দুষছে। তাঁদের অভিযোগ, ফৌজদারি আইনের উপযুক্ত ধারা দেওয়া হলে ভানু জামিন পেতেন না। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিসের ভূমিকায় নবান্নও অসন্তুষ্ট। তাই মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে এগরা থানার আইসির জবাব তলব করা হয়েছে। 
ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে সেদিন গোটা এলাকা কেঁপে উঠেছিল। কারখানার ভিতরে যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদের কয়েকজনের পোড়া লাশ অকুস্থলের পাশে পুকুর পাড়ে এবং অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ে। কারও কারও হাত-পাও ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমনই ভয়াবহ ছিল সেই বিস্ফোরণ, ভিকটিমরা আর্তনাদ করারও সুযোগ পাননি। তার আগেই মারা যান কিংবা অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় লোকজন সেখানে পৌঁছনোর আগে পোড়া মাংসের গন্ধে হতভম্ব হয়ে যান। কয়েকটি দেহ এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল এবং ঝলসে গিয়েছিল যে তাঁদের শনাক্ত করা সহজ ছিল না। মৃতদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা এবং চারজন পুরুষ। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভানুর কারখানায় বস্তুত প্রাণ হাতে নিয়েই কাজ করতে হয়, জানতেন সংশ্লিষ্ট কারিগররা। তাই বেশিরভাগ লোকই সেখানে কাজে যেতে চাইতেন না। কিন্তু গ্রামে অন্য কাজ খুবই কম বলে কেউ কেউ পেটের দায়ে ভানুর কারখানায় যেতেন। অন্যদিকে, সেখানে কাজ করার ব্যাপারে কারখানার মালিকের তরফেও নাকি প্রচণ্ড চাপ আসত—মোটা টাকার লোভ দেখানোর পাশাপাশি দেওয়া হতো মারাত্মক সব হুমকিও। সেসব পুলিসকে বার বার জানিয়েও সামান্য সুরাহা মেলেনি। বাজির আড়ালে বোমা তৈরির কারখানাটি পুলিসের নাকের ডগায়, পুলিস-প্রশাসনের পরোক্ষ মদতেই অবাধে চলছিল। গ্রামের বহু নারী-পুরুষ সাংবাদিকদের পেয়ে এই অভিযোগই করেন। সবমিলিয়ে গ্রামবাসীদের মনটাই হয়ে উঠেছিল বারুদের স্তূপ। 
ফলে মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর দমকল ও পুলিস বাহিনী সেখানে পৌঁছতেই গ্রামবাসীরা ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিসকে বেধড়ক পেটাতেও ভয় পাননি তাঁরা। পুলিসকে এইভাবে একতরফা মার খেতে ইদানীং কমই দেখা গিয়েছে। বুধবার গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং এমপি’ও। ঘটনার পর থেকে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে, দু’দিন পরও তা অব্যাহত। তরজা চলছে ভানু কার লোক তা নিয়ে। কিন্তু তাঁর রাজনীতির গতিপথের মানচিত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ভানু বস্তুত সকলের। ডান-বাম-তৃণমূল কাউকেই তিনি নিরাশ করেননি। এই দলগুলি নিরাশ করে তাঁকেও। ভানু নির্দল হিসেবেও পঞ্চায়েতে জয় হাসিল করেছেন একবার। সবমিলিয়ে গ্রামে তাঁর প্রভাব প্রশ্নাতীত। রহস্যটা এখানেই যে, পুলিস-প্রশাসন তাঁকে দেখতে পেয়েও কেন চোখ উল্টে থেকেছে বার বার। মঙ্গলবারের ঘটনাটি যে এসবেরই পরিণতি তাতে সন্দেহ কী। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন জাগে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে। যাই হোক, রাজনৈতিক তরজায় ধুনো দেওয়ার সময় এটা নয়। পুলিস, সিআইডি, এনআইএ—তদন্ত যারাই করুক, সকল দোষীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তার মধ্যে পুলিস-প্রশাসনেরও কেউ চিহ্নিত হলে তাঁদেরও রেয়াত করা অনুচিত। একইসঙ্গে খোঁজ নিতে হবে, রাজ্যে আরও কত বেআইনি বাজি ওরফে বোমার কারখানা সক্রিয়। সংখ্যাটি জেলায় জেলায় শতাধিক হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট রক্তপাতহীন করে তোলার চ্যালেঞ্জটি আন্তরিক হলে এই গণশত্রুদের নির্মূল করতেই হবে।

19th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ