বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মুক্ত দাক্ষিণাত্য, অপেক্ষায় ভারত

১৩ মানেই ‘আনলাকি’ নয়। শনিবারের বারবেলা মাত্রই বয়ে আনে না কিছু অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত। ১৩ মে, শনিবার বেরল কর্ণাটক রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলাফল। তাতে প্রত্যাশা ছাপিয়েই জয় পেল কংগ্রেস। একটিমাত্র রাজ্য বিধানসভায় জয়-পরাজয়ের ঘটনা এটি নয়। তার চেয়ে অনেক বেশি। এই ভোটের ফলাফল কংগ্রেস এবং বিজেপি-বিরোধী শক্তির পুনরুজ্জীবনের এক নিশ্চিত সন্দেশ। পরবর্তী লোকসভার ভোটের আগে এর চেয়ে মন ভালো করা সংবাদ আর কী চেয়েছিল বিরোধীরা। নরেন্দ্র মোদি দু’বার ক্ষমতা দখল করেছেন বিরোধী অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে। কর্ণাটকের ছবিটা দেখিয়ে দিয়েছে, মোদির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে রুখে দাঁড়াবার সাহস ও আন্তরিকতা থাকলে তাঁর পার্টিকে গোহারা করে দেওয়া সম্ভব। বিরোধী ঐক্যে ফাটলের চিহ্নই বার বার প্রকট হয়েছে। এবার কর্ণাটকই হয়তো পারবে সেই কালো দাগগুলি মুছে দিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা মেনে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানোর যে-কাজ দেশজুড়ে চলছে, এবার তাতেই যুক্ত হবে কর্ণাটকের বল। কংগ্রেসের কাণ্ডারী রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ফর্সা করার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছেন বলে মোদিরা যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, ঠিক তখনই উল্টো বার্তা দিল কর্ণাটক। 
আমরা কোনও কুসংস্কারের পক্ষে নই। তবু বলতে হচ্ছে—১৩ মে, শনিবারের বারবেলা মোদি বাহিনীর জন্য সত্যিই বিরাট দুঃসংবাদ এবং একরাশ উদ্বেগ বয়ে আনল। প্রথমেই নস্যাৎ হয়ে গেল, মোদিকে ঘিরে গড়ে ওঠা একের পর এক ‘মিথ’। মোদি ম্যাজিক, মোদি ঝড়, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় ইত্যাদির বাস্তব অস্তিত্ব নেই। কিছু তিলকে, মোদি ফ্যান ক্লাবের বানানো তাল এসব। কে না জানে, নিজের ঢাক নিজে পেটানোয় মোদির চেয়ে বড় ওস্তাদ এদেশে আর কেউই নেই। তাই কর্ণাটকে রাহুলের সঙ্গে কম্পিটিশনে অনেক বেশিবার ভোটের প্রচারে গিয়েও মোদির পার্টি বস্তুত মুখ থুবড়ে পড়েছে। গতবারের জেতা ৩৯টি আসন খুইয়ে বিজেপির সম্বল মাত্রই ৬৫। অন্যদিকে, কংগ্রেস প্রার্থীদের মধ্যে জিতেছেন ১৩৬ জন। গতবারের চেয়ে ৫৬ জন বেশি প্রার্থীর জয়ের ফলেই এই বিপুল সাফল্য। এই ফলাফলে বিশাল দাক্ষিণাত্য বিজেপি-মুক্ত হয়ে গেল। হায়, গেরুয়া শিবিরের গুরুঠাকুর নরেন্দ্র মোদির চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস-মুক্ত (পড়ুন, বিরোধী-মুক্ত) ভারত গড়ে দিয়ে যাওয়া। বস্তুত, শিকার করতে বেরিয়ে শিকারি নিজেই শিকার হয়ে গেলেন যে! হবে নাই বা কেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশের বুলি আউড়ে মোদি উগ্র হিন্দুত্বের গণ্ডির বাইরে বেরবার চেষ্টাই করেননি। মোদির নামে ভোট চাইতে বেরনো বিজেপির প্রচারের কয়েকটি বিপজ্জনক দিকও ধরা পড়ে এবার। প্রথমত, তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, ‘মুসলিমদের সমর্থন আমরা চাই না!’ মেরুকরণের যে নিশান নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির, সেটাই চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল এবার। ২০১২, ২০১৭ ও ২০২২ সালের গুজরাত ভোটে কোনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। অথচ ওই রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ৯.৭ শতাংশ। 
সংখ্যালঘুদের হিসেবের বাইরে বের করে দেওয়ার দুঃসাহসটা মোদির পার্টি সঞ্চয় করেছে গুজরাত থেকেই। ওই কৌশল প্রয়োগের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে তারা ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে। ৪০৩টি আসনের একটিতেও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি যোগী আদিত্যনাথের পার্টি। অথচ দেশের এই বৃহত্তম রাজ্যে জনসংখ্যার কমবেশি ২০ শতাংশ মুসলিম। কোনও সন্দেহ নেই, তাতেও বিপুল সাফল্য পায় গেরুয়া রাজনীতি। আর যায় কোথায়, দাক্ষিণাত্যের মাটির চরিত্র আঁচ না করেই বিজেপি ফের একই তাস খেলতে গিয়ে রাম গাড্ডায় পড়েছে কর্ণাটকে। শেষ আদমশুমারি অনুসারে, কর্ণাটকে মুসলিম জনসংখ্যা ১২.৯২ শতাংশ। খ্রিস্টান ১.৮৭ শতাংশ। সেখানে বিধানসভার ২২৪টি আসনে কোনও মুসলিম বা খ্রিস্টান প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। নিজেকে বার বার নকল করাও যে একটি বিপদ, সেটা নিশ্চয় জানে না মোদির পার্টি। সব মিলিয়ে গত পাঁচবছরে ১৫টি রাজ্যের নির্বাচনে পর্যুদস্ত হল তারা। ফাইনাল ম্যাচের আগে এর চেয়ে ভয়াবহ দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে গেরুয়া শিবিরের জন্য? প্রধানমন্ত্রিত্বে মোদির হ্যাটট্রিকের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাই প্রশ্ন জাগে, মোদি কি তাঁর রাজনৈতিক সন্ন্যাসগ্রহণের পথই প্রশস্ত করছেন? মন্দ কী, বৈদিক ভারত তো চতুরাশ্রমকেই বরণ করেছিল।

15th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ