বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অতিক্রান্ত সঙ্কীর্ণতার সব সীমা 

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর নিজের নামের পাশে ‘নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ’ কথাটি লিখতে সমর্থ হয়েছে ভারত। তার আগে পর্যন্ত ভারতকে ‘গরিব’ ওরফে ‘উন্নয়নশীল’ তকমা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। ভারতের উন্নয়নচিত্র পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আইএমএফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, আগামী একদশকেও আমরা ‘উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ’ হয়ে উঠতে পারব না। সব ঠিকঠাক থাকলে বড়জোর ‘মধ্য আয়ের দেশ’-এর পংক্তিভুক্ত হব আমরা। কোনও সন্দেহ নেই, ‘উন্নত দেশ’ হয়ে উঠতে ভারতের একাধিক প্রজন্মকে অপেক্ষায় অপেক্ষায় থাকতে হবে। অথচ, এটা কোনওভাবেই হওয়ার কথা ছিল না। প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যশালী দেশগুলির একটি। সুপ্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকারী এই দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি সারা দুনিয়ার ঈর্ষার কারণ। ভারতের মানবসম্পদ যেকোনও দেশকে টেক্কা দিতে সক্ষম। তাই ‘উন্নত’ বিশ্বের শীর্ষে ভারতেরই থাকার কথা ছিল। 
কিন্তু এই অপারগতার জন্য পরাধীন ভারত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশকে দুষত। যাঁদের স্বাধীনতার ভগীরথ মানা হতো, তাঁরাও আশা দিয়েছিলেন—স্বাধীনতার সঙ্গেই দূর হবে সমস্ত গ্লানি—ভারত আবার জগৎসভায় তাঁর শ্রেষ্ঠ আসন ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু তাঁদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়েছে, দেশবাসীকে হতাশায় ডুবিয়েছে পরবর্তীকালের ভ্রান্ত রাজনীতি। যখন যে দল—কী রাজ্যে, কী কেন্দ্রে—ক্ষমতা দখল করেছে ভুলে গিয়েছে সংবিধানের মর্মবাণী, নির্দেশ। বহু দলীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নস্যাৎ করে একদলের আধিপত্যবাদ বা স্বৈরশাসন কায়েম করাই হয়েছে তাদের ধ্যানজ্ঞান। এও একধরনের ঔপনিবেশিক চিন্তা। তার ফলে বিরোধী দলের শাসনে চলা রাজ্যগুলি নির্বিচারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার ইতিহাস গড়ে বিদায় নিয়েছে কংগ্রেস। সমস্ত বঞ্চনা, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা নির্মূল করার অঙ্গীকার করে ন’বছর আগে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করেন নরেন্দ্র মোদি। ন্যায়প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতি গেরুয়া শিবিরের নেতাটি দিয়েছিলেন তার সর্বাগ্রে ছিল গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার। প্রথমে ভাবা হয়েছিল অন্য অনেকের মতোই কথা রাখায় অপারগ বিজেপির সর্বময় কর্তা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তিনি অপারগ নন, তিনি যা-সব করেন না তার সবটাই নিখুঁত পরিকল্পনার অঙ্গ। যেমন পশ্চিমবঙ্গকে ভাতে মারার কৌশল নিয়ে চলেছে মোদি সরকার। বিশেষ করে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলে তাতে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ দৃষ্টিকটুভাবে কমানো হয়েছে। জিএসটির ক্ষতিপূরণ প্রদানে টালবাহানা চলেছে দীর্ঘকাল। এখন চলছে আবাস যোজনা এবং মনরেগা প্রকল্প নিয়ে নিত্যনতুন খেলা। 
প্রকল্পরূপায়ণে বেনিয়ম খুঁজে বের করার নামে কেন্দ্রীয় সরকার পরের পর অগ্নিপরীক্ষার আয়োজন করে চলেছে। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য মেটানো হচ্ছে না। বঞ্চনার সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে মনরেগার ক্ষেত্রে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩০ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির পরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আগামী অর্থবর্ষও শুরু হতে যাচ্ছে একসপ্তাহ বাদে। সব রাজ্যের নতুন বছরের বরাদ্দ অনুমোদন করা হলেও একমাত্র বাংলার ক্ষেত্রেই তা আটকে দেওয়া হয়েছে। অথচ এবার ৩২ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। সব মিলিয়ে মোদি সরকারের যা মতিগতি তাতে বাংলার মানুষের সামনে থেকে দু’বছরে মোট ৬২ কোটি শ্রমদিবস কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা কেন? বাংলার মানুষের একমাত্র অপরাধ কি—তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে বসবাস করেন? গেরুয়া শিবিরের একুশের স্বপ্নভঙ্গের প্রতিশোধ নিচ্ছেন দিল্লিওয়ালারা—রাজ্যবাসী এবার এই স্বতঃসিদ্ধান্তে উপনীত হলে তাকে অন্যায্য বলা যাবে কি? কর্মসংস্থান এবং আয়ের সুযোগ বানচাল হয়ে যাওয়ার এই ঘটনার প্রভাব কি জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়বে না? নিজের পায়ে কুড়ুল মারার থেকেও মারাত্মক নির্বোধ এই রাজনীতি। এই সঙ্কীর্ণতার মধ্যে বিচ্ছিন্নতার প্ররোচনাও রয়েছে বইকি। পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে যে স্ফুলিঙ্গ কার্যকরী হয়েছিল সেটি আকারে কিন্তু এর চেয়ে বড় ছিল না।

24th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ