বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

দেশের মর্যাদায় জোড়া ধাক্কা

একদিনে দু-দুটি। সামনে এল ভারত সম্পর্কে বিরূপ রিপোর্ট। একটি সুখ এবং অপরটি মানবাধিকার বিষয়ক। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে (২০২৩) ভারতকে ফের অসুখী মানুষের দেশ বলা হয়েছে। শুধু অসুখী নয়, ওই তালিকার একেবারে তলার দিকেই ঠাঁই হয়েছে আমাদের দেশের। যেখানে ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের পাশে অন্যভাবে ক্ষুদ্রতরই দেখাচ্ছে ভারতকে। ইউএন সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের সুখচিত্র প্রকাশিত হয় ২০ মার্চ। ওই একই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ করে, ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস। এই রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে বস্তুত ভারতের মোদি প্রশাসনকে তুলোধোনা করা হয়েছে। 
মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বেআইনিভাবে ও নির্বিচারে হত্যা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত হিংসা বৃদ্ধির মতো গুরুতর অভিযোগগুলি। রিপোর্ট প্রকাশের পর বাইডেন প্রশাসনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব এরিন বার্কলের বক্তব্য, ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। মানবাধিকার রক্ষায় ভারতকে আরও যত্নবান হওয়ার জন্য তাঁরা আগেও বলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ফের জোরের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা আকস্মিক কিছু নয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা ভারত এবং আমেরিকার নাগরিকসমাজের সঙ্গে নিয়মিত মিলিত হন। একে অপরের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেন এবং দু’পক্ষের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখেনও তাঁরা। উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য ভারত সরকারও যাতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই ব্যাপারে ভারতকেও অনুপ্রাণিত করা হয়। ভারতে সরকারি কাজের সমস্ত স্তরে জবাবদিহির অভাব এতটাই যে দোষীদের রেহাই পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে পুলিস এবং সংশোধনাগার বিভাগের মাধ্যমে যে নির্যাতন চলে তা এককথায় অমানবিক। আটক এবং গ্রেপ্তারের অনেক ঘটনার সঙ্গেই যে আইন ও বিচারের কোনও সম্পর্ক নেই, এককথায়, বহু অন্যায় ঩নির্বিচারেই চলছে—তাও খোলাখুলি জানানো হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের তরফে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের দুর্দশা ও দুর্দিনের কথা। ইন্টারনেট ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা, সমাবেশ-জমায়েতের উপর খবরদারি, মানুষে-মানুষে মেলামেশায় বাধা, প্রতিবাদ আন্দোলনের স্বাধীনতাহরণ প্রভৃতি নিয়েও এই রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযোগ, লঙ্ঘিত হচ্ছে নাগরিকের দেশত্যাগ এবং শরণার্থীদের অধিকার। ভারতে সরকারি ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রশাসনের রিপোর্ট। তাদের আরও অভিযোগ, নানা অজুহাতে হয়রানি চলছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রমিকের অধিকার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য এই অধিকারগুলির অধিক সুরক্ষা জরুরি। 
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক কীরকম, বিদেশ দপ্তরের তরফে মার্কিন কংগ্রেসে তার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করা বাধ্যতামূলক। আর সেই রিপোর্টেই বেরিয়ে এসেছে ভারতে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের কঙ্কালসার চেহারা। এ থেকে কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে মোদি সরকারের দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি যে মোটেই অতটা হালকাভাবে নেওয়ার নয়। একটি নির্বাচিত সরকারের চূড়ান্ত পরিচয় কোনওভাবেই দলীয় নয়। যেমন ভারত সরকার এদেশের সব মানুষের—যাঁরা এনডিএ, বিজেপি বা মোদিকে ভোট দেননি তাঁদের ক্ষেত্রেও এই কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। সরকারের ভালো-মন্দ, উত্থান-পতন, খ্যাতি-অখ্যাতির ভাগ দেশের সবার। তাই এই বিষয়ে প্রতিটি নাগরিকের উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। এই অপমান তাঁদের সবার। একের পর এক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে, বছরের পর বছর ভারতের এই যে মলিন ছবি প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে এটাই প্রমাণ হয় যে ভারত ‘নামেই তালপুকুর ঘটি ডোবে না’। বৃহত্তম গণতন্ত্রের মর্যাদা উদ্ধার করতে ভারতকে আগামী দিনে বহু বহু অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সবকিছুকে পাশ্চাত্যের ঈর্ষা কিংবা অন্যায় সমালোচনা বলে ফের উড়িয়ে দিলে ভারতের বাস সেই তিমিরেই রয়ে যাবে।

23rd     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ