বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

শুধুই পশ্চিমী কুৎসা? 

এই নিয়ে দশবার। প্রকাশিত হল ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’। দশবছর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভা ২০ মার্চ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক সুখদিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তারপর থেকেই শুরু হয় বিশ্বজুড়ে মানুষ কোথায় কতটা সুখের সঙ্গে বসবাস করছে, তার সন্ধান ও পরিমাপ। ইউএন সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের এই রিপোর্ট প্রকাশের উদ্দেশ্য, নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের দিনযাপনকে সুন্দর করে তোলার জন্য সরকারগুলিকে উৎসাহিত করা। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিবেদন রচনা করেন। প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে বিভিন্ন দেশের জন্য র‌্যাঙ্কও বরাদ্দ করা হয়। র‌্যাঙ্কের দিক থেকে কিছুটা উন্নতি করার পরেও, জীবনমানের প্রশ্নে ভারত বস্তুত রয়ে গিয়েছে তিমিরেই—ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের পাশেও উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্রতর দেখাচ্ছে! 
করোনার তিনবছর আমাদের বহুকিছু কেড়ে নিয়েছে। বেশিরভাগ দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বজুড়ে যে ভয়াবহ উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে, তা এক ঐতিহাসিক বিপর্যয়। কিন্তু তার ভিতরেও মানুষ তার স্বভাবধর্ম অনুসারে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। প্রতিটি মানুষ সব ভুলে শুধু হাসতে চেয়েছে। অন্তত করোনা-পূর্ব যুগে ফিরে যাওয়াই তাদের প্রথম লক্ষ্য। সদ্য প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুসারে, লক্ষ্যপূরণে সবচেয়ে সফল দশটি দেশ হল, যথাক্রমে—ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইজরায়েল, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ ও নিউজিল্যান্ড। দেড়শোর বেশি দেশের মধ্যে সবচেয়ে অসুখী দেশ বলে চিহ্নিত হয়েছে তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান। তালিকার নীচের দিকের অন্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে লেবানন, জিম্বাবোয়ে, কঙ্গো, প্রভৃতি। দুর্নীতির প্রশ্নে এই দেশগুলির কুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। এইসব দেশের নাগরিকদের গড় আয়ুও বেশ নীচের দিকে। ২০২১ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৩৯। একটু এগিয়ে গতবছরও ভারত ১৩৬ নম্বরে ছিল। ভারতের এবারের পজিশন ১২৫। মাথাপিছু জিডিপি, নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও ভদ্রস্থ গড় আয়ু, ব্যক্তির স্বাধীনতা, উদারতার সঙ্গে জীবনযাপন এবং সরকারি ক্ষেত্রে কম দুর্নীতির মতো বিষয়গুলিকেই এই র‌্যাঙ্ক নির্ণয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানেই সাধারণ জিজ্ঞাসা, একবছরের বেশিকাল ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেন—তাদের জন্য কোন স্থান বরাদ্দ হয়েছে? রাশিয়া ৭০ এবং ইউক্রেন ৯২। অর্থাৎ তাদের দেশের নাগরিকদের সুখের পসার ভারতের চেয়ে ঢের বেশি বলেই মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এই রিপোর্ট প্রস্তুতকারীদের অন্যতম লারা আকনিনের প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য, ‘এবার অনেকগুলি লক্ষণীয় বিষয় আমাদের আকর্ষণ করেছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বহু মানুষ করোনা-পূর্বকালের চেয়ে অধিক সামাজিক হয়ে উঠেছে। আপদে-বিপদে অপরিচিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কিছু দানধ্যান করা এবং স্বেচ্ছাসেবার মনোভাব বেড়েছে তাদের মধ্যে।’ 
এই ধরনের আন্তর্জাতিক রিপোর্ট প্রকাশের সঙ্গে সরকারগুলির উদ্দেশে কিছু পরামর্শও থাকে। বিশেষজ্ঞরা আশা করেন, সরকারগুলি সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের আর একটু ভালো রাখার ব্যাপারে আন্তরিক হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, ভারত সরকার এই রিপোর্টগুলিকে কখনওই গুরুত্ব দিতে চায় না, বরং ভারতের প্রতি পশ্চিমী দেশগুলির কুৎসা হিসেবেই খারিজ করে দেয়। স্বভাবতই, সুন্দরের প্রতিযোগিতায় ভারতকে পাই না আমরা। বছর বছর মন খারাপের রিপোর্টই সঙ্গী হয় আমাদের। ভারতের এই তীব্র অনীহার কারণ খুব দুর্বোধ্য নয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে প্রথমেই কমাতে হবে বৈষম্য—আর্থিক, জাতপাত, ধর্ম, আঞ্চলিক প্রভৃতি সবধরনের বৈষম্য। আমরা জানি, বৈষম্যের এক ও একমাত্র কারণ সীমাহীন দুর্নীতি। দুর্নীতির আঁতুড়ঘর রাজনীতিকদের নীতিহীনতা—যা রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়নের কুচক্র ভাঙতে আগ্রহী নয়।

22nd     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ