বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

গোয়েন্দাগিরির নয়া কৌশল

যত দিন যাচ্ছে ততই যেন হিংস্র, বেপরোয়া হয়ে উঠছে মোদি সরকার। এতদিন দেখা গিয়েছে দেশের আইন ও বিচার বিভাগের উপর ছড়ি ঘোরাতে উঠে পড়ে লেগেছে এই সরকার। ক্যাগ, এনএসও, আরবিআই, নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে নানা অছিলায় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে সিবিআই, ইডি আয়করের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে নির্বিচারে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এমনকী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললে সাধারণ নাগরিকদেরও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় ফাঁসিয়ে মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসবই যেন বাহ্য। এবার শোনা যাচ্ছে, নির্বাচিত সাংসদদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি চালাতে ‘দলীয় লোক’ লেলিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করতে চলেছেন মোদি-অমিত শাহরা। আইনসভায় ‘ব্যক্তিগত সহায়ক’ বা ‘পার্সোনাল অ্যাসিসটেন্ট’ পেয়ে আসছেন লোকসভা ও রাজ্যসভার সব সাংসদ। সাংসদ তাঁর বিশ্বস্ত ও পছন্দসই ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ করবেন এটাই দস্তুর। এই ‘ব্যক্তিগত’ শব্দবন্ধের মধ্যেই আসলে লুকিয়ে আছে সাংসদের অধিকারের প্রশ্নটি। কিন্তু স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা মোদি সরকার সাংসদদের এই অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। দিল্লীশ্বররা ঠিক করেছেন, এখন থেকে সাংসদদের ব্যক্তিগত সহায়ক নিয়োগ করবে সংসদের সচিবালয়। এই পদক্ষেপ যে আসলে সব বিরোধী সাংসদদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো, তা না বোঝার কারণ নেই। সোজা কথায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিরোধী দলগুলি কী কী কৌশল নিচ্ছে তা জানাই মোদি সরকারের উদ্দেশ্য। সংসদীয় গণতন্ত্রে এই পরিকল্পনা আরও এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ।
২০১৯-এর সর্বশেষ লোকসভা ভোটে ৩০৩টি আসন পেয়ে একাই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি, এটা ঘটনা। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্যি যে, সেই নির্বাচনে দেশের মাত্র সাড়ে ৩৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে, ২০২৪-এর ভোটে বিরোধীরা এককাট্টা হতে পারলে মোদিবাহিনীর কপাল পুড়তে পারে। এই আশঙ্কার সঙ্গে দেশের আম জনতার চোখে যে ক্রমশ ‘ভিলেন’ হয়ে উঠছে এই সরকার তাও আর গোপন খবর নয়। কার্যত এই জোড়া আতঙ্কে বেপরোয়া মোদি সরকার এখন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার স্বাধীনভাবে কাজকর্মের ক্ষমতা ও সাংসদ থেকে সাধারণ মানুষের সব অধিকার কাড়তে চাইছে। এমনকী গণতন্ত্রের দুই স্তম্ভ আইন ও বিচারবিভাগও তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে পারছে না। এর সাম্প্রতিক নজির হল, দেশের মানুষ এখনও যার উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল, সেই আদালতের বিচারকদের নিয়োগের অধিকার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। বিচারপতি নিয়োগে ‘কলেজিয়াম’ নয়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার—বলছেন খোদ আইনমন্ত্রী! যা শুনে দেশের প্রধান বিচারপতির আক্ষেপ, ... আমরা জানি না সরকার ও আইনসভার সর্বগ্রাসী চিন্তার সামনে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা আর কতদিন অবশিষ্ট থাকবে। এছাড়াও বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি সরকারের নির্লজ্জতার আপাতত শেষ উদাহরণ হল, সংসদের ভিতরে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা। গত সপ্তাহেই দেখা গিয়েছে, লোকসভার অধিবেশন সম্প্রচারিত হচ্ছে টিভির পর্দায়। কিন্তু বিরোধী কোনও সাংসদ বলতে উঠলেই সেই টিভির পর্দা নির্বাক! কারণ ওই সময়ে নাকি মাইক ‘মিউট’ করে দিচ্ছে সরকারের লোকজন। সরকার অবশ্য যান্ত্রিক ত্রুটির তত্ত্ব খাড়া করেছে।
এবার সাংসদদের অধিকারই কাড়তে চলেছে সরকার। নিয়মমতো, একজন সাংসদ সর্বাধিক চারজন পর্যন্ত ব্যক্তিগত সহায়ক রাখতে পারেন। এই নিয়োগ তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের। সচিবালয় এজন্য মাসে ৪০ হাজার টাকা করে দেয়। সন্দেহ নেই, এই নিয়োগ হয় একেবারেই রাজনৈতিক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও ব্যক্তিগত সহায়ক পদে যেমন বিজেপি আরএসএসের লোকজন আছেন, বিরোধীরাও তেমনই নিজেদের দলের লোকেদেরই সহায়ক পদে নিয়োগ করেন। সাংসদদের কাজকর্মে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। আর মোদি সরকার নিজেদের ‘লোক’ বসিয়ে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের গতিবিধির উপর গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা করছে। তাদের যুক্তি, ব্যক্তিগত সহায়কদের টাকা দেয় সচিবালয়। তাই নিয়োগের অধিকারও তাদেরই। এই যুক্তিকে সামনে রেখে কৌশলে এমপিদের উপর নজরদারির পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথে এগচ্ছে সরকার। সেই উদ্দেশ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছে। বলা বাহুল্য, সেই তরুণদের তালিকায় অধিকাংশই বিজেপি আরএসএসের ঘনিষ্ঠরা ঠাঁই পেয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিরোধী সাংসদদের পক্ষে তা যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ তিনি কার সঙ্গে দেখা করছেন, কাকে চিঠি লিখছেন বা কী রাজনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন তা ব্যক্তিগত সহায়কের জানাটা অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের কাজকর্মে গোপনীয়তা বজায় রাখাটা কঠিন হবে। উল্টোদিকে বিরোধী সাংসদদের গতিবিধি, পরিকল্পনা সরকারের নখদর্পণে থাকার সম্ভাবনাই প্রবল আছে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের কাজ কি মানুষকে সুশাসন দেওয়ার পরিবর্তে ‘খোচরবৃত্তি’ করা?

21st     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ