বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

‘এনকাউন্টার-রাজ’

‘ঠোক দো’। বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের প্রিয় শব্দবন্ধ। অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জেরবার উত্তরপ্রদেশের গুন্ডা দমনে এই ‘ঠোক দো’ বা গুলি চালিয়ে দেওয়ার কথা একাধিকবার শোনা গিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের কণ্ঠে। তাঁর পুলিস যে সেকথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে সেই তথ্যই উঠেছে রাজ্য সরকারের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে। হাড়হিম করা সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ছ’বছরে পুলিস-দুষ্কৃতীর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭৮ অপরাধীর। মারা গিয়েছেন ১৩ জন পুলিসকর্মীও। সংঘর্ষে দু’পক্ষের মোট ১ হাজার ৪২৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের লক্ষ্য ছিল তাঁর সরকার অপরাধমূলক কাজ ও দুষ্কৃতীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবে। তাই রাজ্যকে অপরাধমুক্ত করতে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয় পুলিসকে। বাধ্য ছাত্রের মতো ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পুলিস তারপর থেকে গো-বলয়ের এই রাজ্যে ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ হয়ে উঠেছে। গোটা উত্তরপ্রদেশে এই ‘এনকাউন্টার-রাজ’-কে ‘সাফল্য’ হিসেবেই দেখছে যোগীর প্রশাসন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনকাউন্টার বা সংঘর্ষের ঘটনা যে আসলে যোগীর পুলিসের সাজানো চিত্রনাট্য তা বিভিন্ন ঘটনার অনুসন্ধানেই উঠে আসছে। তথ্যভিজ্ঞ মহলের একাংশের মতে, এ হল একতরফা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে, এনকাউন্টার কি আইনসিদ্ধ? আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, জীবনের অধিকার মৌলিক অধিকার। কোনও ব্যক্তির জীবনধারণের অধিকার একমাত্র আইনি পথে হরণ করতে পারে সরকার। সংবিধানেও আইনের শাসনের কথা বলা আছে। অর্থাৎ কোনও অভিযুক্তকে একমাত্র আদালতই দোষী সাব্যস্ত করতে পারে। আদালত সেই অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডও দিতে পারে। তাই যোগীর পুলিস যে কাজ করে আত্মসুখ অনুভব করছে তা আদৌ আইনসিদ্ধ কি না সেই প্রশ্নও বড় হয়ে উঠে এসেছে।
আসলে মামলা চলাকালীন গুলি চালিয়ে অভিযুক্তকে হত্যা করা, মহিলা নির্যাতন সহ নানা ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতায় বিরল ‘কৃতিত্ব’ দেখিয়ে চলেছে যোগী সরকার! এটি বিজেপির ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্য। দেখা যাচ্ছে, অপরাধের সবক্ষেত্রে এই রাজ্য দেশের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ধরা যাক, মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় যোগীরাজ্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ধর্ষণকাণ্ডে তৃতীয় স্থান উত্তরপ্রদেশের। দলবদ্ধ ধর্ষণে এই রাজ্য এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পাশাপাশি ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর মহিলা খুনের ঘটনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে যোগীর রাজ্য। উত্তরপ্রদেশের হাতরাস ও উন্নাও-এ ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সংখ্যালঘু নির্যাতনেও এই রাজ্য নজির তৈরি করেছে।
কিন্তু এসবকে বোধ হয় ছাপিয়ে গিয়েছে যোগীর ‘এনকাউন্টার- রাজ’-এর ‘সাফল্য’! যোগীর পুলিসের দাবি, সংঘর্ষে যেসব দুষ্কৃতী মারা গিয়েছে তাদের মাথার দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে মেরঠ জোন। ৩০ শতাংশই সংঘর্ষ হয়েছে সেই জোনে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আগ্রা। সেখানে ১ হাজার ৮৪৪টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ জন দাগী অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে। জখম ৫৫ জন পুলিসকর্মী। বোঝাই যাচ্ছে, ডাবল ইঞ্জিন এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী শোচনীয় হাল। যোগীর পুলিসের এনকাউন্টার নীতি যে গোটা রাজ্যে যথেষ্ট ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে তার প্রমাণ এক প্রাক্তন বিধায়কের আদালতে করা আর্জির ঘটনা। গোটা উত্তরপ্রদেশ এখন উমেশ পালের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব। এই ঘটনায় অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতীকে নাকি এনকাউন্টারে ইতিমধ্যে মেরে ফেলেছে পুলিস। এই ঘটনাতেই আতঙ্কে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন আর এক অভিযুক্ত ওই প্রাক্তন বিধায়ক। উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের আরও এক অভিযুক্ত সমাজবাদী পার্টির এক বাহুবলী নেতা আবার একই আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, অভিযুক্তকে পুলিস মেরে দিলে আর তদন্ত চলবে কী করে? আসলে গুন্ডাদমন করতে গুন্ডামির পথই বেছে নিয়েছে পুলিস। ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার এহেন পরিস্থিতি হলেও সেখানে নীরব থাকেন বিজেপি নেতৃত্ব! অথচ ছুতোয়-নাতায় বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে বঙ্গের বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। তারই ভিত্তিতে আবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্টও চেয়ে পাঠানো হয়। বাংলার পুলিস ‘দলদাসে’ পরিণত হয়েছে বলে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের নিত্য অভিযোগ। তাঁরা যদি ডাবল ইঞ্জিনের যোগীরাজ্যের সঙ্গে বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনা করেন তাহলে প্রকৃত সত্যটাই সামনে আসবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পশ্চিমবঙ্গে অভিযুক্তদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এমন কোনও ঘটনা এখানে ঘটে না বললেই চলে যেখানে পুলিসকে এনকাউন্টারের তত্ত্ব সাজিয়ে অভিযুক্তকে প্রাণে মেরে দেওয়া হয়। তাই বলতেই হয়, ধন্য ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যের সুশাসনের মহিমা!

19th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ