বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

উলট পুরাণ

সাল ২০০৭। সে বছর সিঙ্গুর থেকে ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা গুজরাতের সানন্দে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন টাটা গোষ্ঠী। সাল ২০২৩। ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের তাদের একটি চালু কারখানা এরাজ্যের খড়্গপুরে তুলে এনেছে সেই টাটা গোষ্ঠী। মাঝখানে চলে গিয়েছে দেড় দশক। রাজ্যের শিল্পপরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মূলত দু’ধরনের অভিযোগ তুলত বিরোধীরা। এক, সিঙ্গুর থেকে ন্যানো প্রকল্প তাড়িয়েছে তৃণমূল। এর ফলে বাংলার শিল্প ভবিষ্যৎ অন্ধকার! দুই, টাটাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির প্রভাব পড়বে মমতা সরকারের আমলেও। সিঙ্গুরের ঘটনার জেরে অন্যান্য শিল্পসংস্থা রাজ্যে বিনিয়োগ করতে ভয় পাবে। কিন্তু ঘটনা হল, উৎপাদন পরিধি বাড়াতে টাটা গোষ্ঠীর আঁতুড়ঘর জামশেদপুর থেকে এরাজ্যের খড়্গপুরে নিজেদের কারখানা তুলে আনার সিদ্ধান্ত বিরোধীদের যাবতীয় আশঙ্কাজনিত ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, সিঙ্গুরে প্রস্তাবিত ন্যানো কারখানা রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে একটি মাইলফলক প্রকল্প হতে পারত। তা হয়নি তৎকালীন বাম সরকারের হঠকারিতায়। কৃষকদের কাছ থেকে তিনফসলি কৃষিজমি জোর করে নিয়ে সিঙ্গুর প্রকল্প করতে চেয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। চাষের জমিতে শিল্প করা যাবে না—এই যুক্তি দেখিয়ে মমতা তাতে বাদ সেধেছিলেন। এর জেরেই সিঙ্গুর থেকে সরে যেতে হয়েছিল টাটাদের। কিন্তু মমতার দাবি যে সঠিক ছিল, পরবর্তীতে আদালতের রায়েই তা প্রমাণিত হয়। কৃষকরা তাঁদের জমি ফিরে পান। যে প্রকল্পকে ঘিরে সেদিন বাংলা উত্তাল হয়েছিল, সিঙ্গুর থেকে সানন্দে সরিয়ে নেওয়া সেই ন্যানো কারখানা অবশ্য পরে বন্ধ করে দেয় টাটা গোষ্ঠী। উল্টো দিকে, যাবতীয় তিক্ততা দূরে সরিয়ে রেখে মমতার আমলে এরাজ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে টাটা গোষ্ঠী। টাটা-হিতাচি, টাটা মেটালিক্স এবং টিসিএস—টাটা গোষ্ঠীর এই তিন সংস্থা গত দশবছরে বিপুল বিনিয়োগ করেছে এরাজ্যে। এছাড়াও রয়েছে তাদের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ। এ যেন উলটপুরাণ। 
বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা হিসেবে যে বাংলা অচ্ছুৎ নয়, বরং এই রাজ্য এখন শিল্প স্থাপনের উপযুক্ত, টাটাদের কারখানা হস্তান্তরের ঘটনা সেই সত্যকেই তুলে ধরেছে। খবরে প্রকাশ, টাটা-হিতাচির জামশেদপুরের কারখানাটির জন্ম ১৯৬১ সালে। ছ’দশক সেটি চালানোর পর সংস্থার কর্তারা কারখানাটি অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেন। এবং, গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকেই তাঁরা বেছে নেন। রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে সেই কারখানা চালু হয়েছে খড়্গপুরের শিল্পতালুকে। উৎপাদন বাড়াতে সেখানে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে দু’হাজার লোকের। নতুন কারখানার জন্য শিল্পতালুকের ১০০ একর জমি কিনেছে টাটারা। মূলত খনিজ সামগ্রী খননের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি হবে এই কারখানায়। এখানে তৈরি সামগ্রী ভবিষ্যতে বীরভূমের দেউচা-পচামির কয়লা উত্তোলনে বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। জামশেদপুরের দেখানো পথে হাঁটতে চলেছে টাটা স্টিলও। ওড়িশার কেওনঝড়ের জোডায় সংস্থার স্পঞ্জ আয়রন কারখানাটিরও পরবর্তী গন্তব্য হতে চলেছে বাংলা। সংস্থার হেড অফিস ইতিমধ্যেই কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়েছে। সরকারের আশা, ভবিষ্যতে রাজ্যে টাটা গোষ্ঠীর বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
শুধু টাটা গোষ্ঠী নয়, সামগ্রিকভাবে রাজ্যের শিল্প নিয়েই মাঝেমধ্যে গেল গেল রব তোলে বিরোধীরা। মমতা সরকারের ঘোষিত নীতি হল, কোনও কারণেই জোর করে জমি নেওয়া হবে না। যেকোনও প্রকল্পের জন্যই জমি কিনে নিতে হবে। শিল্পের জন্য জমির প্রয়োজন মেটাতে খুব সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বেসরকারি যে জমিতে চাষ হচ্ছে না, সেই জমির মালিক রাজি থাকলে শিল্পের স্বার্থে তা কেনা যেতে পারে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে সরকার জানিয়েছিল, এবার শিল্প ও কর্মসংস্থানই হবে তাদের পাখির চোখ। সেই লক্ষ্যেই এক হাজার পাঁচশো কোটি টাকা খরচ করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরি হবে। এখানে নিয়োগ হবে ৩০ হাজার। রাজ্যে তিনটি শিল্প-করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। করিডর লাগোয়া আট হাজার একর সরকারি জমিকে শিল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। বিনিয়োগ টানতে প্রতিবারের মতো এবারেও বছর শেষে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববঙ্গ শিল্পসম্মেলন। বিনিয়োগের প্রচারে পাঁচ রাজ্যে ‘রোড-শো’ করা হবে। এইসব উদ্যোগকেই আসলে রাজ্যে বিনিয়োগ টেনে আনার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার।

18th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ