বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

আপনা হাত জগন্নাথ!

৬৮ বছর বয়সি সুরেন্দ্র কুমার। ২০২২ সালে প্রতিমাসে হাতে পাচ্ছিলেন ২,২৩৪ টাকা। এটাই তাঁর পেনশন। এই বৃদ্ধের পরিচয় হল মধ্যপ্রদেশের ডেয়ারি ডিপার্টমেন্টে প্রাক্তন কর্মী। তিনি ওই দপ্তরে চাকরি করেছেন ৩৫ বছর। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি একদিনের জন্যও মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার সদস্যপদ (এমএলএ) পেয়ে গেলে, তিনি প্রতি মাসে অন্তত ২০ হাজার টাকা পেনশন ভোগ করার অধিকারী! ওইসঙ্গে তিনি আরও পাবেন চিকিৎসা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। ছবিটা নতুন কিংবা কেবলমাত্র মধ্যপ্রদেশের একমাত্র নয়, কমবেশি সারা দেশের। তবে এই ভয়াবহ বৈষম্যের ছবিটা সরকারিভাবে সামনে এনেছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি। তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্ন রেখে তিনি এই জবাব পেয়েছিলেন। ৩ মার্চ, ২০২২ আরটিআই আইনে প্রাপ্ত জবাব থেকে আরও জানা যায়, ২০২০-২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ২,৬৭৯ জন প্রাক্তন সাংসদকে পেনশন দিতে ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। মোটা অঙ্কের পেনশন প্রাপকদের মধ্যে শিল্পপতি, চিত্রতারকা এবং রাজ পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। একজন প্রাক্তন এমপি মাসে ২৫ হাজার টাকা পেনশন এবং কার্যকালের মেয়াদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ভাতাও পেয়ে থাকেন। এমপি এবং এমএলএ হিসেবে একজন একদিনের জন্যও আইনসভায় প্রবেশের মতো ভাগ্যবান হলে জীবনভর পেনশনের গ্যারান্টি পেয়ে যান! এমনকী, তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও কিছু বিশেষ সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী গণ্য হন। কিছু সদস্য রাজ্য বিধানসভা এবং সংসদ দুই ক্ষেত্রেই কাজ করেছেন। তাঁরা আবার দুই সদনের সদস্য হিসেবে পেনশনের অধিকারী হন। বঞ্চিত প্রাক্তন সরকারি কর্মী হিসেবে এই ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের সুরেন্দ্র কুমার। 
ছোট ও মাঝারি বেসরকারি সংস্থায় সারাজীবন চাকরি করে যাঁরা অবসর নেন, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ। এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশনে (ইপিএফও) সমগ্র কর্মজীবনে তাঁদের নামে নিয়মিত কিছু অর্থ জমা হয়। তার ভিত্তিতেই বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মাসে মাসে কিছু টাকা দেওয়া হয়। তার পরিমাণ ১০০০ টাকা কিংবা আর একটু বেশি। পেনশনের নামে প্রহসনের এর চেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট বয়স্ক ব্যক্তিরা এই অনাচার বন্ধের দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ সরব। বিষয়টি তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সংসদের শ্রম বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এবং বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদেরও গোচরে এনেছেন। তাঁদের দাবি, প্রতি মাসে ন্যূনতম সাড়ে সাত হাজার টাকা পেনশন দিতে হবে। ওই সঙ্গে দিতে হবে ডিএ এবং স্বামী ও স্ত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবার নিশ্চয়তা। ২০১৮ সালে এই লাগাতার আন্দোলনের সূত্রপাত মহারাষ্ট্রের বুলদানা থেকে। বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনীর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি দল অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সংসদীয় কমিটি আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে। একাধিকবার আশ্বস্ত করেছে শ্রমমন্ত্রক। কিন্তু অর্থমন্ত্রক স্পিকটি নট! 
ফলে প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের আন্দোলন পথে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। বুধবার রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের ২০০টি শহরে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। তবে এতেও সরকারের হৃদয় এতটুকু কাঁদবে কি না, ঘটনা পরম্পরাতে রয়েছে সেই সংশয়। এরপর যদি একজন নাগরিক ‘আপনা হাত জগন্নাথ’ প্রবচনের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি ভারতের আইনসভাতেই খুঁজে পান, তাকে কি ভুল বলা যাবে? সংবিধান, জনগণ ও গণতন্ত্রকে সামনে রেখে যে অদ্ভুত ব্যবস্থাটি এদেশে কায়েম হয়েছে, সেটা নিঃসন্দেহে আইনসভার সুপ্রিমেসি! তার ফলে কৌশলে ব্রাত্য গণ্য হয়েছে জনগণ। জনসেবার দোহাই দিয়ে অনেকাংশে নিজেদেরই রসেবসে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন আইনসভার সদস্যরা। বিপরীতে, জনগণের কথা তাঁরা কতটা ভাবছেন, সেই প্রশ্নটি তাঁদের বিবেকের কাছেই রাখা যেতে পারে।  আঙুল এখন আর শুধু শাসকের দিকে রাখার অবকাশ নেই। ভিয়েতনাম, প্যালেস্তাইন, ইরাক প্রভৃতি দূর দূর দেশের জনগণের দুঃখে যাঁদের বুক ভাসে সর্বক্ষণ, মুখে অগ্নিবর্ষণ করেন যাঁরা অহরহ, ভারতের নিম্ন আয়ের কর্মীদের পেনশন-বঞ্চনা নিয়ে তাঁরা ব্যাকুল কতটুকু? রামধনু জোটের এর চেয়ে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত ভারতবাসী আর দেখবে না!

16th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ