বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

নজরদারির জমিদারি

দেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে অনেককাল আগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আচার-আচরণ দেখলে মনে হয় নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে দেশে আবার জমিদারি ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। স্বাধীন ভারতের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার কথা বলা আছে। এই ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির দায়িত্ব, ক্ষমতা, এক্তিয়ারের কথা সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট রাজ্যের এক্তিয়ারে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মোদি জমানার অভিজ্ঞতা হল, সংবিধান নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের হুকুমনামাই শেষ কথা। একদলীয় শাসনের ব্লুপ্রিন্ট হাতে নিয়ে রীতিমতো জমিদারি স্টাইলে দেশ চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। অথচ আইনের নির্দেশ তো বটেই, স্বাভাবিক সৌজন্য বলে, অন্যের ঘরে উঁকিও মারতে নেই। কিন্তু আইন, ঔচিত্যের প্রশ্নকে পাশে সরিয়ে রেখে ইচ্ছেমতো রাজ্যের এক্তিয়ারে নাক গলাচ্ছে কেন্দ্রের গেরুয়া শিবির—বিরোধীদের অভিযোগ তাই। এতদিন দেখা গিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় হলেও তার অবনতির ‘অজুহাতে’ রাজ্যের উপর খবরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্র। এও দেখা গিয়েছে শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে মোদি সরকার। এমন অনেক সামাজিক প্রকল্প আছে যা কেন্দ্র রাজ্য উভয়পক্ষের টাকাতেই চলে। এসব প্রকল্প নিয়েও কেন্দ্রের তুঘলকি আচরণের নজির রয়েছে ভূরি ভূরি। যেমন মিড ডে মিল, গ্রাম সড়ক যোজনা, পাইপ লাইনের মাধ্যম ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প। কিন্তু আদ্যোপান্ত কোনও রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পে কেন্দ্রের ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ হয়ে নাক গলানো, নজরদারি চালানোর মতো চূড়ান্ত অসংসদীয় কাজের নজির আগে কখনও দেখা যায়নি। মোদি সরকারের সৌজন্যে এবার সেটাও দেখবে রাজ্যবাসী।
এমন যে হতে পারে সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনিই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুলাই মাসে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের এক অনুষ্ঠানে রাজ্যগুলির ‘দান-খয়রাতি’ বিলির তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, কিছু সুবিধা পাইয়ে দিয়ে এটা ভোট কেনার সংস্কৃতি, যা বিপজ্জনক। মোদির ভাষায় ‘রেওড়ি সংস্কৃতি’। ঘটনা হল, তাঁর এই ‘সুবচনের’ পর গুজরাত সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জিততে দানখয়রাতি বিলানোর প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। মোদির এই ‘রেওড়ি’ সংস্কৃতির সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির নিজস্ব সামাজিক প্রকল্পে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধরা যাক, কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মমতা সরকারের বহুল প্রচারিত ও সফল দুটি সামাজিক প্রকল্প। এইসব প্রকল্পের জন্য খরচের একশো শতাংশই ব্যয় করে রাজ্য সরকার। দুটি প্রকল্পেই উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সাহায্যের অর্থ পৌঁছে যায়। রাজ্যের এইসব জনস্বার্থবাহী প্রকল্পে কেন্দ্রের এক পয়সাও অনুদান বা সাহায্য নেই। তাই এইসব প্রকল্পের সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে দিল্লির কোনও মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তবু এইসব প্রকল্পের যাবতীয় হিসাবনিকাশ জানাতে হবে বলে ফরমান জারি করেছে কেন্দ্র। কেন? দিল্লির কর্তাদের সাফাই, এইসব প্রকল্প চালানোর জন্য রাজ্যের ঘাড়ে কতটাকা ঋণের বোঝা চেপেছে বা চাপতে পারে তার স্পষ্ট আভাস পেতেই নাকি কেন্দ্র হিসাবনিকাশ জানতে চেয়েছে। কিন্তু রাজ্য যে ঋণ নেয় তা সামগ্রিকভাবে সরকার চালানোর ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করা হয়। ঋণের অর্থ শুধুমাত্র সামাজিক প্রকল্পের জন্য ব্যয় নাও হতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা হল, রাজ্যের হিসাবনিকাশ চাওয়ার অর্থ হল তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, এক্তিয়ারে নাক গলানো। তাই সঠিকভাবেই রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই নয়া নজরদারি নির্দেশিকার তীব্র নিন্দা করেছেন।
তবু খানিকটা বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের এই অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ মেনে নিতে হচ্ছে নবান্নকে। কারণ, বিভিন্ন খাতে এই মুহূর্তে কেন্দ্রের কাছে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাওনা হয়েছে রাজ্যের। দিল্লিতে প্রায় প্রতিদিন দরবার চলছে। এই হকের টাকা না মেলায় প্রবল আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় কেন্দ্রের হাতে নতুন করে কোনও ‘অস্ত্র’ তুলে দিতে চায় না নবান্ন। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে রাজ্যের প্রকল্পগুলির হিসাবনিকাশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইসব তথ্য জেনে কেন্দ্রের কী লাভ? ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা, আবার হয়তো কোনও শর্ত চাপানো হবে। জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির উপর আবার হয়তো কোনও খাঁড়া নেমে আসবে। সবই জমিদারের ইচ্ছা।

12th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ