বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

সঙ্কীর্ণতাই উন্নয়নের শত্রু 

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলির সম্মেলনে ১৯৩টি সদস্য-দেশ সুস্থায়ী উন্নয়নের সঙ্কল্প গ্রহণ করে। সেটি ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকরী ধরা হয় এবং লক্ষ্যপূরণের জন্য সময়সীমা ধার্য করা হয় ২০৩০ সাল। পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার এই সঙ্কল্পে ১৭টি প্রধান (এসডিজি) এবং ১৬৯টি অপ্রধান লক্ষ্য স্থির করে দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী গৃহীত এই অ্যাজেন্ডার মূল সুর হল—‘লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড’ বা ‘কাউকে পিছনে ফেলে রেখো না’। এই ছোট্ট অনুজ্ঞার নিহিতার্থ হল—দেশ রাজ্য জাতি ধর্ম সংস্কৃতি বয়স লিঙ্গ এবং আয়-সম্পদের বহর নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে তার বেঁচে থাকার উপযোগী ন্যূনতম পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আ‌ই঩নে প্রতিটি ব্যক্তিকে যে সকল অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়েছে, সেগুলিরও অধিকারী হবে সবাই। অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর জন্য গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকলকেই নানাভাবে শামিল করতে হবে। তার মধ্যে অগ্রাধিকার পাবে এখনও পিছিয়ে থাকা মানুষগুলি। তাদের অগ্রণী শ্রেণির স্তরে তুলে আনার জন্য ইতিমধ্যেই রয়ে যাওয়া বিরাট গ্যাপ বা ফাঁকটা পূরণ করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। 
এই সুসংহত পরিকল্পনা শুধুমাত্র আর্থিক অগ্রগতির ঘোষণা দিয়ে দায় সারেনি, সংগত কারণেই তার চেয়ে বেশি জোর দিয়েছে সামাজিক বৈষম্য দূর করার উপরে। সামাজিক স্তরে শান্তিস্থাপনের জন্য ব্যক্তিজীবনে নিরাপত্তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। এই সুস্থায়ী উন্নয়ন সঙ্কল্পে স্বাক্ষর প্রদানকারী গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে সামনের সারিতেই রয়েছে ভারত। মনুষ্যজাতির ছয়ভাগের একভাগের (বা ভারতবাসীর) সুস্থায়ী উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সালে তিনি মন্তব্য করেন, ভারতের এই সম্ভাব্য সাফল্য সুন্দর পৃথিবী রচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে চিহ্নিত হবে। সঙ্কল্প গ্রহণের পর আটবছর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। ২০২৩ সালকে ধরে বাকি থাকছে আর আটবছর। লক্ষ্যপূরণে সফল হওয়ার জন্য নিরপেক্ষ আত্মসমীক্ষার এটাই উপযুক্ত সময়। এই প্রশ্নে ২০২২ সালে ভারত তিনধাপ (১১৭ থেকে ১২০) নেমে গিয়েছিল। তার ফলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে পাকিস্তান (১২৯) ছাড়া আর সব দেশই এগিয়ে ছিল ভারতের চেয়ে। আরও পরিতাপের বিষয় হল, ২০২০ এবং ২০২১ সালেও এই প্রশ্নে ভারতের ক্রমাবনতি নথিভুক্ত হয়েছে। গত একবছরে সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রশ্নে ভারতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে—২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট ভাষণে এমনটাই দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু রাতারাতি এমন উন্নতি হয়নি যে ভারতের সব মানুষের জীবনযাপনের যাবতীয় দুঃখকষ্ট দূর হয়ে গিয়েছে। বরং এটাই সত্যি যে, লক্ষ লক্ষ মানুষের মাথার উপর ছাদ নেই। খিদের জ্বালা এবং অপুষ্টির সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়নি। কর্মসংস্থানের সুযোগ দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং বাড়ছে বেকারত্ব। ভগ্নস্বাস্থ্য এবং উপযুক্ত শিক্ষার অভাব ভারতের সুবিশাল জনগোষ্ঠীর যথার্থ মানবসম্পদ হয়ে ওঠার পক্ষে অন্তরায়। 
আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ভারত এবার জি-২০ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্রের চেহারাটি এমন নড়বড়ে হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল না। গত আটবছরে, ভিতর থেকে মজবুত এক ভারত নির্মাণ হওয়াই ছিল কাম্য। কিন্তু তার জন্য জরুরি ছিল মুক্ত মনে কাজে মনোনিবেশ করার নীতিগ্রহণ। ভারত যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চলে, তাই রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা এবং প্রাদেশিক বৈষম্য পরিহার করার দরকার ছিল সবার আগে। পরিবর্তে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা প্রাণিত করছে বৈষম্য বৃদ্ধির ব্যাধিকে। যেমন আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষগুলির সঙ্গে লাগাতার বঞ্চনা করা হচ্ছে। দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির বলি হচ্ছে বাংলা, নানাভাবে। বিজেপি-বিরোধী অন্য রাজ্যগুলিও কমবেশি ভ্রান্ত গেরুয়া নীতির শিকার। এইভাবে আর যাই হোক, ভারত অমৃতকালে প্রবেশ করতে পারবে না এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণেও পিছিয়ে থাকবে সহস্র যোজন। 

6th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ