বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

হয়রানি ও দুর্নীতি কমবে

দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। এটাই প্রাচীনতম ব্যাধি। রাষ্ট্রব্যবস্থার গা থেকে দুর্নীতির কাদা ধুয়ে ফেলার জন্য নিরন্তর গবেষণা ও চেষ্টা করে চলেছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশগুলি। পরিতাপের বিষয় হল, গালভরা বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত এখনও এই বন্ধনীতে জায়গা পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। এর আলাদা কোনও প্রমাণ পেশের প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ নাগরিকের নিত্যদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। তবু এই পোড়ার দেশ বিদেশের সার্টিফিকেট হাতে না নিয়ে কোনও কিছু মেনে নিতে অভ্যস্ত নয়। তাদের জ্ঞাতার্থে জানানো যায় যে, করাপশান পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) ভারতের র‌্যাঙ্ক ৮৫। আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালে স্বচ্ছতা/অস্বচ্ছতার প্রশ্নে ১৮০টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করে। গত জানুয়ারির শেষদিকে প্রকাশিত ওই তালিকাতেই ভারতের এই কদর্য চেহারা পুনঃপ্রকাশিত হল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক সমীক্ষায় প্রকাশ, নাগরিকের প্রাপ্য সরকারি পরিষেবা পেতেই ৬২ শতাংশ ভারতবাসীকে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের হাতে ঘুষের টাকা গুনে দিতে হয়! আর একটি রিপোর্টের বক্তব্য, সরকারি পরিষেবা গ্রহণের আগে ভারতের ৫০ শতাংশ নাগরিকের সরাসরি ঘুষ দেওয়ার অথবা ‘মামা’ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে! কোনও গবেষণা ছাড়াই বলে দেওয়া যায় যে, এই ক্রনিক ব্যাধি রাতারাতি নিরাময়ের নয়। 
মানুষের হয়রানির সূত্র অনেকটাই প্রচলিত অনুসৃত আইন ও বিধির ভিতরে নিহিত। বেশিরভাগ আইন ও বিধি ঔপনিবেশিক সরকারের তৈরি, তাদের স্বার্থপূরণের তাগিদে। স্বাধীন ভারত ৭৫ বছরে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে বদল আনলেও তা কোনওভাবেই যথেষ্ট ও সময়োপযোগী নয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা পদে পদে আঁকড়ে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতা, দিনের শেষে নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ ভয়াবহ দৌরাত্ম্য। এসবই হল বেশিরভাগ দুর্নীতির উৎস। জমির খাজনা থেকে বাড়ির প্ল্যান, ট্রেড লাইসেন্স থেকে আয়কর, সম্পদ কর, বিদেশ গমনের অনুমতি—এমন একটি বিষয়ের উল্লেখ করা যাবে না যেখানে মানুষ স্বস্তিতে পার পেতে পারে। বিশেষ করে শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জটিলতা এদেশে মারাত্মক। বিনিয়োগের লক্ষ্মীছাড়া দশার এ এক বড় কারণ। কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি কিছু সংস্কার-পদক্ষেপ করার পরেও যত সমস্যা রয়ে গিয়েছে তা পাহাড়প্রমাণ। শিল্প-বাণিজ্যমহল বার বার তা কেন্দ্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সুরাহা এখনও অধরাই। 
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারেরও করণীয় আছে স্থানীয় কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শুরু থেকেই সেই সংস্কারগুলি করার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়েছে। যেমন বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যানের সামান্য হেরফের হয়ে থাকে। কোনও মালিক তাঁর কারখানার শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়ে সামান্য ভুলচুক করে ফেলেন। এরকম বহু ছোটখাট বিষয় আইনের চোখে অপরাধ হলেও তা দ্রুত সংশোধনযোগ্য। সংশোধন করা গেলে তাতে সরকার, শ্রমিক, মালিক সবাই উপকৃত হতে পারেন। তা সত্ত্বেও এসবের জন্য এখনও বলবৎ রয়েছে ‘ক্রিমিনাল পেনাল্টি’-র ব্যবস্থা। তাতে একমাস পর্যন্ত হাজতবাসও হয়ে থাকে। কিন্তু আদালতের  মাধ্যমে এসবের নিষ্পত্তি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার। নাগরিকদের কী যে হয়রানি হয় তা কহতব্য নয়। দেশের বেশিরভাগ প্রান্তেরই অভিজ্ঞতা অভিন্ন। তাই একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এ-সমস্ত ক্ষেত্রে ফৌজদারি শাস্তিবিধানের বদলে শুধুমাত্র আর্থিক জরিমানা করতে চায় রাজ্য। তৃণমূল সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে ইজ অব ডুইং বিজনেসের (ইওডিবি) উপর জোর দিয়েছে আগেই। ওইসঙ্গে একেবারে নতুন কনসেপ্ট ‘ইজ অব লিভিং’ প্রচলনেও উদ্যোগী হয়েছে নবান্ন। তারই প্রথম ধাপে রয়েছে অকারণে হয়রানি বন্ধ করা। তাই ফৌজদারি শাস্তির বদলে আর্থিক শাস্তিদানের বা জরিমানা ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যাটিতে দ্রুত ইতি টানা সম্ভব হবে এবং  অপরাধীও বেকসুর পার পাবেন না। নয়া পদ্ধতিটি সমর্থনযোগ্য ও প্রশংসনীয়। এই বিষয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ইতিমধ্যেই নবান্নে সমস্ত দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। বাংলায় ইজ অব লিভিং বিষয়ে অগ্রগতির সূচনা সেখানেই। প্রতিটি দপ্তরের এই সংক্রান্ত নিজস্ব আইন/নিয়মের বিস্তারিত তালিকা চেয়েছে নবান্ন। দপ্তরগুলি প্রয়োজনে আইন দপ্তরের সাহায্য নেবে। তবে, তালিকা জুলাইয়ের মধ্যেই জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কতটা আন্তরিক ও সময়োপযোগী ভাবনায় অভ্যস্ত নবান্নের এই নির্দেশে তা পরিষ্কার। উদ্যোগটি সফল হলে রাজ্যের পক্ষে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ রূপেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এতে মানুষের হয়রানি ও দুর্নীতি যেমন কমবে, তেমিন ফিরবে কোষাগারের স্বাস্থ্য। পদক্ষেপটি কেন্দ্র এবং অন্য রাজ্যগুলির সামনেও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে চলেছে।

27th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ