বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

সহজ পণ্য 

দুর্নীতি হল আদিমতম এক সামাজিক ব্যাধি। দুর্নীতির পিছনে কাজ করে অধিক ভোগের মনোবৃত্তি। অধিক ভোগ কেন? প্রয়োজনটা মোটেই জরুরি নয়, নিতান্তই, অন্যদের থেকে বেশি ভালো থাকার প্রয়াস; ব্যক্তি-শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের তাগিদ। অধিক ভোগ কীভাবে সম্ভব? একার দ্বারা অর্জিত সম্পদে এই বাসনা বা স্বপ্ন পূরণ হওয়া অসম্ভব। তখনই মানুষ অন্যের অর্জিত বা প্রাপ্য সম্পদের দিকে হাত বাড়াতে মনঃস্থ করে। মানুষের ভিতরে এই চাহিদার উন্মেষ আজকের নয়, জেগেছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগেই, যখন বাঁচার জন্য শুধু খাদ্যকেই নির্বাচন করত তারা। প্রাচীন মানুষ অন্যের শিকার করা বা সংগৃহীত খাদ্য চুরি করত, প্রয়োজনে ছিনিয়েই নিত। সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে মানুষের চাহিদা, প্রকরণ। নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। রামায়ণ, মহাভারতের মতো ভারতীয় মহাকাব্য, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে গ্রিক পুরাণ পর্যন্ত অসংখ্য প্রাচীন গ্রন্থ এই সত্যের সাক্ষ্যে ভরা। দুর্নীতির আজকের যে সর্বগ্রাসী চেহারা, সমগ্রভাবে এসবই তার ভিত্তিভূমি। পরিস্থিতি এমনই যে তথাকিথত সভ্য কিছু নরনারীর সম্পদ-লালসার শিকার হয়েছেন তাঁদের প্রতিবেশী বন্ধু আত্মীয়, এমনকী ভাই বোন বাবা মা অব্দি যে-কেউ! চরম হিংসা বা নরহত্যা পর্যন্ত গড়িয়েছে বহু ঘটনা।
সমাজ যখন এতটা নীচে নেমে যেতে কুণ্ঠিত হয় না, তখন রাজনীতি সেই বৃত্তের বাইরে থাকে কোন যুক্তিতে? কারণ, রাজনীতির উৎস, লক্ষ্য—দুটিই মানুষ। তারা প্রত্যেকেই সমাজের উৎপাদন ও উপকরণ। তাই যখন কোনও রাজনৈতিক দল একতরফাভাবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে, তখন তার অসারতাও স্বতঃসিদ্ধ। ভারতের প্রসঙ্গে বলা যায়, সব দলই বিরোধী অবস্থান থেকে ক্ষমতার আসনের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে রাখে। যেমন এখন, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দল বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম-সহ রকমারি বামপন্থী দল। এই দলগুলি সব ব্যাপারেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে আঙুল তোলে। সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি হইচই হচ্ছে চাকরি দুর্নীতি নিয়ে। মমতার সরকার শুরু থেকেই কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। নানাবিধ মামলা এবং আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে প্রকাশ যে, নিয়োগের অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের ঘোষিত নীতি ও সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি, লঙ্ঘিত হয়েছে সরকারি নিয়ম-কানুন। বহু অযোগ্য প্রার্থী চাকরি পাওয়ায় স্বভাবতই বঞ্চিত হন সমসংখ্যক যোগ্য প্রার্থীরা। এই বিচ্যুতি কোনওভাবেই কাম্য ও সমর্থনযোগ্য নয়। বেশিরভাগ নিয়োগ মামলাই এখন বিচারাধীন। তাই বিষয়গুলিতে চূড়ান্ত পদক্ষেপের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এই বিষয়ে আমরাও কোনও মন্তব্য বা মতামত ব্যক্ত করতে পারি না।
এই প্রসঙ্গে, এটাই মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, নিয়োগ দুর্নীতি তৃণমূল জমানার কোনও ইউনিক ফিচার বা মৌলিক লক্ষণ নয়। ২০০৮ সালে হরিয়ানার ওমপ্রকাশ চৌতালা সরকার (লোক দল) তিন হাজারের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়। তদন্ত করে সেই অভিযোগের অকাট্য প্রমাণ আদালতে পেশ করে সিবিআই। ওই প্রেক্ষিতে আদালতের রায় আজও এক শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং চাকরিতে নিয়োগ মিলিয়ে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ দুর্নীতির নাম ‘ব্যাপম’। মধ্যপ্রদেশের এই কীর্তির কাদায় মাখামাখি হয়ে রয়েছে যে দলটি তার নাম বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, বিহারেও নিয়োগ কেলেঙ্কারির ছড়াছড়ি! এরপরও নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডাদের ‘নীতির রাজনীতি’-র বড়াই এবং সুচের দিকে আঙুল তুলে চালুনির আস্ফালন দিব্য জারি রয়েছে। একই পাঠশালার আর এক পড়ুয়ার নাম সিপিএম। ২০০৮-১০ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার নিয়ম ভেঙে খাদ্যদপ্তরে গ্রুপ ডি পদে ৬১৪ জনকে চাকরি দিয়েছিল। সম্প্রতি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) রায়ে সমস্ত চাকরিই বাতিল ঘোষিত হয়েছে। বাম জমানায় রাইটার্স আর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বড় বাড়ির আনাচে-কানাচে কান পাতলেও শোনা যেত—সেচ, বন, শিক্ষা, সমবায় প্রভৃতি নানা সরকারি দপ্তরে কত ক্যাডারকে চোরাপথে পাকা চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। অন্যান্য দুর্নীতির কথা না-হয় ছেড়েই দেওয়া গেল। ঘটনা পরম্পরা এটাই বিবৃত করে যে স্বাধীন ভারতের সর্ববৃহৎ সমস্যার নাম বেকারত্ব। একটি চাকরির নামে সবাই অসহায়। শিক্ষিত অতিশয় বুদ্ধিমান একজন ব্যক্তিকেও চাকরির টোপ দিয়ে সহজেই পণ্য করে তোলা যায়। ভারতীয় রাজনীতি এই সুযোগের সদ্ব্যবহারে আজ ভীষণই নির্মম। রাজনীতি-তাড়িত রাষ্ট্রব্যবস্থা এই কানাগলি থেকে যতদিন না বেরয় ততদিন যুবসমাজের মুক্তির আশা নেই।           

24th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ