বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বিপজ্জনক খেলা

গণতন্ত্রের পক্ষে এক বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে গেরুয়া শিবির। নির্বাচিত সরকারকে অনৈতিক উপায়ে ফেলে দিতে ছলাকলা কৌশলের ত্রুটি রাখছে না। আবার সেই মহারাষ্ট্র। শিবসেনা বিধায়কদের একটি অংশকে ভাঙিয়ে সে রাজ্যের সরকারকে ফেলে দেওয়ার পুরনো খেলায় মাতলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের অন্যত্র সরিয়ে দিতেও পদ্মশিবিরের বাধেনি। খবরে প্রকাশ, তাঁরা রয়েছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে, শাসকদলের কড়া নজরে। শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপিকে নিয়ে তৈরি উদ্ধব থ্যাকারের মহারাষ্ট্র সরকারকে ‘অন্যায়ভাবে’ ফেলে দিতে আগেও অর্থাৎ গত আড়াই বছরে দু’বার গোপন অভিযান চালিয়েছে বিজেপি শিবির। দু’বারই রণে ভঙ্গ দিলেও এবার শিকে ছেঁড়ার ব্যাপারে অনেক আত্মবিশ্বাসী গেরুয়া শিবির। কারণ শিবসেনার পাশাপাশি সরকারের অন্যতম অংশীদার কংগ্রেসের ঘরেও অশান্তির কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। ঘোড়া কেনাবেচার খেলায় মোদি-শাহরা যে বেশ দক্ষ তার প্রমাণ অতীতে একাধিকবার মিলেছে। এ খেলায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফল হলেও কাজটি যেমন নিন্দনীয়, ঠিক তেমনই মানুষের রায়কে অগ্রাহ্য করারই নজির।
অতীতটা দেখা যাক। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সরকার গঠনের জন্য দরকার ছিল ১৪৫টি আসন। সেখানে বিজেপি শিবসেনা মিলিয়ে ১৬১টি আসন থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার নিয়ে দু’দলের তীব্র অশান্তি হয়। তখন কংগ্রেস এবং এনসিপিকে সঙ্গী করে সরকার গঠন করে শিবসেনা। এরপর থেকেই যাবতীয় মূল্যবোধ, উচিত-অনুচিত বোধকে দূরে ঠেলে মহারাষ্ট্র সরকার দখলকে পাখির চোখ করে হিংস্র বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি। ভাঙন ধরাতে চেষ্টা করে প্রথমে এনসিপি, এখন শিবসেনায়। ভোটারদের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, নির্বাচিত বিধায়কদের যেকোনও মূল্যে কিনে নিয়ে সরকার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে অন্য দলের বিধায়ক ভাঙিয়ে আনাই এখন যেন রাজনীতিতে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হয়ে উঠেছে। দলবদলের লগ্নে বিধায়কদের দামি হোটেল বা রিসর্টে কয়েক রাত আটকে রেখে, দেদার টাকা ছড়িয়ে কাজ হাসিল করতে পারলেই মেলে ‘চাণক্য’ তকমা। টিম মোদিতে এই তকমায় ভূষিত যেমন শাহ। কিন্তু রাজনীতিতে এই প্রবণতা কতটা বিপজ্জনক এবং ক্ষতিকর তা সম্ভবত আঁচ করতে পারছে না শাসক শিবির। এই ‘ঘোড়া’ কেনাবেচার নির্লজ্জ খেলা চালিয়েও কেন্দ্রের শাসকদলের কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। কোনও সমালোচনা, নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়াই তাদের গায়ে লাগে না! মোদির স্বপ্নের ‘দুর্নীতিমুক্ত’ ভারতেই হচ্ছে ‘ঘোড়া’ কেনাবেচা, পেশিশক্তির আস্ফালন এবং দেদার অর্থব্যয়। এক্ষেত্রে গেরুয়া শিবির যে অন্যদের টেক্কা দিয়ে অনেক এগিয়ে তার একাধিক প্রমাণও রেখেছে।
এদেশের কোনও নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ফেলে দেওয়ার ইতিহাস দীর্ঘ। কখনও ৩৫৬ ধারা বলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে কর্তৃত্ব স্থাপন, বা বিধায়ক কিনে সরকার ফেলে দেওয়ার ঘটনা অনেকবারই দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস আমলেও তা হয়েছে। তবে সেদিক থেকে নরেন্দ্র মোদি জমানা যেন অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে অবিজেপি সরকার ফেলা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে একেবারে নগ্নভাবে। মহারাষ্ট্রেও থাবা বসিয়েছে বিজেপি। সেখানে সঙ্কট তীব্র হয়েছে। মোদির আমলে গোয়া, অরুণাচল প্রদেশ, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশেও অনৈতিকভাবে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ আছে। এই কেনাবেচায় বিজেপির জুড়ি মেলা ভার। আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত সম্পদশালী অর্থাৎ ধনী রাজনৈতিক দল বিজেপি। কেন্দ্রে তাদের সরকার। সেই সুযোগে এবং অর্থবলে বলীয়ান হওয়ার সুবাদে সমস্ত নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতা দলের যে উন্মত্ততায় তারা মেতে উঠেছে এর শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। কিন্তু প্রশ্নটা হল, কোন ইতিহাস তারা তৈরি করছে? প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত বিধায়কদের অনেকে এখন আলু, পেঁয়াজের মতো বাজারি পণ্য হয়ে উঠেছেন! কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে তাঁরা যাবতীয় শিষ্টাচার, মূল্যবোধ বিকিয়ে দিচ্ছেন! তাঁদের প্রতি আস্থা রেখে, বিশ্বাস করে যাঁরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের সঙ্গেই প্রতারণা করে বিকিয়ে দিচ্ছেন নিজেদের! এ অন্যায়। তাঁরা একবারও ভেবে দেখছেন না ভোটাররা কি তাঁদের ক্ষমা করবেন? বিজেপি অবশ্য কোনও ভালো কথাই কানে না তুলে দখলের লক্ষ্যে অবিচল। মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ডেও শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে বিজেপির। সেখানেও এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। পিছিয়ে নেই রাজস্থান। শুধু বিজেপি সুবিধা করতে পারেনি এই বাংলায়। বিভিন্ন অছিলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের জুজু দেখিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছনোর স্বপ্ন বঙ্গবিজেপি দেখলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জনপ্রিয়তা আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। কিন্তু অন্য অবিজেপি শাসিত রাজ্যে যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা বিজেপি শুরু করেছে তা ভারতের গণতন্ত্রের সুনামের পরিপন্থী। এমন বিপজ্জনক খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। নির্বাচিত সরকার ফেলার গেরুয়া প্রয়াস মোদি জমানার কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েই থাকবে।

23rd     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ