বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল

সবার উপরে পত পত করে উড়ছে ৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা। তার নীচে ঘোষণা—‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। একই সারিতে উজ্জ্বল উপস্থিতি জাতীয় প্রতিরক্ষার তিন বাহিনীর লোগো এবং অশোকস্তম্ভ। মাঝখানে শহিদ স্তম্ভের ছবির নীচে হিন্দিতে লেখা ‘অমর জওয়ান’। ১৫ জুন, বুধবার এই ছিল সারা দেশের প্রথম সারির কাগজগুলিতে পাতাজোড়া একটি রঙিন বিজ্ঞাপনের ভূমিকা। বিজ্ঞাপনদাতা অন্য কেউ নয়, স্বয়ং ভারত সরকার। সাড়া ফেলে দেওয়া এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছে ‘অগ্নিপথ যোজনা’। সেনা বাহিনীতে ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ এই বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য। বিজ্ঞাপন প্রকাশের আগের দিন, মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিনব সরকারি প্রকল্পটি ঘোষণা করেন। সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যোজনাটির ছয়টি প্রধান বৈশিষ্ট্য, আবেদনের বয়স ইত্যাদি। দেশের অধিকাংশ পরিবারে এক বা একাধিক বেকার। যুব শ্রেণির মধ্যে মানসিক অবসাদ বৃদ্ধি, পারিবারিক সুস্থিতির বিনষ্টি, সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আর্থিক বৃদ্ধির নিম্নহার প্রভৃতির নেপথ্যে বেরোজগারির ভূমিকা লঘু করে দেখার সুযোগ নেই। সমস্যাগুলি করোনা মহামারীর দু’বছরে আরও বেড়েছে। মহামারী স্তিমিত হলেও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে বলা যাবে না। অর্থনীতির পণ্ডিত এবং সমাজবিজ্ঞানীদের এই মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণের বিষয় হল বেকারত্বের হার। বলা বাহুল্য, একদশক যাবৎ বেকারত্বের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী, সাম্প্রতিক হারটিও বেশ হতাশাজনক। রাজনীতির কারবারিরাও মত্ত এই পরিসংখ্যান নিয়ে। বিশেষ করে বিরোধীরা প্রতিদিনই সরকারকে চেপে ধরছে। সারা দেশে দুর্নীতি-বিরোধী যত আন্দোলন এবং তদন্ত চলছে তার একটি বড় অংশ চাকরি সংক্রান্ত। কোনও সন্দেহ নেই যে প্রতিটি পরিবারের প্রথম চাহিদা একটি চাকরি। 
আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ‘অগ্নিপথ যোজনা’ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। তাই দেশজুড়ে ধন্য ধন্য পড়ে যাওয়ার কথা ছিল। স্বাভাবিক ছিল যুব শ্রেণির মন খুশিতে মন ভরে যাওয়া। পরিবারগুলিও বহুদিন পর স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারত এই ঘটনায়। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত প্রতিক্রিয়াই দেখছে দেশ! তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। বুধবার বিহার দিয়ে শুরু। পরে তা সংক্রামিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি ও জম্মুতে। কোথাও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ট্রেনে, আবার কোথাও হয়েছে রাস্তা অবরোধ-সহ বিক্ষোভ। পুলিসের গাড়ি, বিজেপি পার্টি অফিস, ট্রাক অথবা রেল স্টেশনেও আগুন ধরানো হয়েছে অনেক স্থানে। হরিয়ানায় প্রতিবাদী এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। সব জায়গায় ‘অগ্নিপথ যোজনা’-র বিরোধিতা করে চলছে মোদি সরকারের মুণ্ডপাত। লক্ষণীয় যে এই রাজ্যগুলি মূলত বিজেপি/এনডিএ শাসিত। প্রতিবাদীদের হাতে বিজেপি বিধায়ক নিগ্রহের মতো ঘটনাও বাদ যায়নি। ছাত্র-পুলিস সংঘর্ষ হয়েছে হরিয়ানা, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে। জম্মুতে দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে বৃহস্পতিবার। বাদ যায়নি বাংলায় উত্তর শহরতলির ভাটপাড়াও। 
আন্দোলনের আঁচে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, মোদি সরকারের চাকরির ‘মাস্টারস্ট্রোক’ মুহূর্তের মধ্যে ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। নিজের তৈরি অস্ত্রে আর-একবার কোণঠাসা মোদি সরকার—রেলের পরীক্ষার নিয়ম বদল এবং কৃষি আইন বিষয়ে পিছু হঠার পরে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামানো হয়েছে প্রতিরক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রককে। কিন্তু ছেলে ভোলানো ছড়ায় ভুলতে নারাজ প্রতিবাদীরা। তাঁদের আশঙ্কা, কেন্দ্রের ঘোষণা অনুসারেই চুক্তিভিত্তিক গালভরা অগ্নিবীরদের ভবিষ্যৎ বলে বাস্তবে কিছু নেই। যথেষ্ট কম বেতনে (এমনকী পিএফ-পেনশন ছাড়াই) চারবছর চাকরি শেষে বেশিরভাগেরই জন্য বরাদ্দ হবে কাঠ বেকারত্ব! সরকারের বোঝা উচিত, সবকিছু মাস্টারস্ট্রোক বা সস্তায় বাজিমাত করার বিষয় নয়। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে একটি আপসের নাম ‘অগ্নিপথ যোজনা’—বিরোধীরা এই মারাত্মক অভিযোগ তুলেছে। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে তর্জনী উঁচু হয়েছে বিজেপিরও অন্দরে। যোজনাটি কার্যকর করার আগেই সব প্রশ্ন ও সংশয়ের নিরসন হওয়া উচিত। মোদি সরকার অবিলম্বে সেনা, প্রাক্তন সেনা এবং বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনায় বসুক। মনে রাখতে হবে, এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উপর বিশেষভাবে নজর রাখছে সুযোগসন্ধানী দেশগুলিও।

18th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ