বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

পরিকল্পিত পুলিসি হামলা

তাণ্ডবের আর এক নাম দিল্লি পুলিস। রাজধানীর বুকে বারবার অত্যাচারীর ভূমিকায় দিল্লি পুলিসের আবির্ভাব। তাদের আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বিরোধী দলের কার্যালয়, বিরোধী নেতা-নেত্রী ও তাঁদের বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পড়ুয়া আন্দোলনকারী এবং সাধারণ মানুষ। কিছুদিন আগে দিল্লির উপকণ্ঠে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর নির্বিচার পুলিসি আক্রমণের সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের উপর যে জঘন্য আক্রমণ চালিয়েছিল দিল্লি পুলিস তার ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও চাক্ষুষও করেছে তামাম দুনিয়া। অথবা সিএএ-র বিরুদ্ধে শাহিনবাগের চলতে থাকা আন্দোলন ভাঙতে অমিত শাহের পুলিসের ‘বাড়াবাড়ি’ দেখেছে মানুষ। এবার ফের বীরপুঙ্গবদের দাপাদাপি দেখা গেল। রাজধানীর ২৪ আকবর রোডে শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেস ভবনের ভিতরে ঢুকে পুলিসকে অতর্কিত হানা দিতে দেখল রাজধানীবাসী। এই পুলিস দিল্লির সরকার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পুলিস নয়। এই পুলিস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। যারা মোদি জমানায় ‘সবার উপরে অমিত শাহ সত্য’ ধারণার বশবর্তী হয়ে বিরোধী স্বর শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পুলিসের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই শাসকদলের ‘দলদাসে’ পরিণত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এবার সেই অভিযোগও ছাপিয়ে গিয়ে এক নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটাল দিল্লি পুলিস। প্রভুদের তুষ্ট করতে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের উপর চড়াও হয়ে যেভাবে তারা গায়ের জোর ফলাল তা কোনও সভ্য সমাজে হয় কি না সন্দেহ। পুলিসের এই বাড়াবাড়িরকম হানাদারিকে অনেকেই রাজনৈতিক কাজকর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন। উর্দিধারীদের এমন ভূমিকা গণতন্ত্রের পক্ষেও বিপজ্জনক। অবশ্য দায় এড়াতে দিল্লি পুলিসের কর্তারা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বহু পুরনো ন্যাশনাল হেরান্ড পত্রিকা কাণ্ডে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে জেরা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। এতেও তাদের প্রশ্ন শেষ হয়নি। শুক্রবার রাহুলকে ফের মুখোমুখি হতে হবে ইডির। কংগ্রেস দলের এই আইকনিক নেতাকে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করার প্রতিবাদে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। সোমবার এমনই এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অপরাধে পুলিসের মারে পাঁজরের হাড়ে চিড় ধরেছে প্রবীণ এক নেতার। তার রেশ না কাটতেই বুধবার আকবর রোডে এআইসিসির সদর দপ্তরে ঢুকে বর্গী হানার মতো হামলা চালিয়েছে অমিত শাহের পুলিস! একথা ঠিক, আইন আইনের পক্ষে চলবে। কেউ আইন ভাঙলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও যেতে পারে। কিন্তু সবকিছুরই একটা নিয়মনীতি পদ্ধতি আছে। পুলিস নামধারী কিছু মাসলম্যানের দাপাদাপি সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। খবরে প্রকাশ, কংগ্রেস অফিসে তখন অধীর চৌধুরী-সহ কয়েকজন নেতা ছিলেন। পুলিস তাঁদেরও রেয়াত করেনি। নিয়মের তোয়াক্কা না করে ওয়ারেন্ট ছাড়াই দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে বলে পুলিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ। নেতাদের অনেককে মারধর, হেনস্তা করা হয়েছে। টেনে হিঁচড়ে পার্টি অফিস থেকে কাউকে কাউকে বের করে আনার দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। এঁরা কেউ জঙ্গি বা সমাজবিরোধী নন। তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ শুধু অশোভনই নয়, অন্যায়ও। লোহার ব্যারিকেড আর আধা সেনা-পুলিস দিয়ে মানবপ্রাচীর তৈরি করে এই ‘পরিকল্পিত’ হামলা হয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। সাংবাদিকরাও পুলিসের হাত থেকে রেহাই পাননি।
আসলে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী স্বরকে দমিয়ে রাখতে সব পথ খোলা রেখেছে বিজেপি সরকার। ইডি, সিবিআই, আয়কর হানা, পুলিস—সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধীদের জব্দ করতে সব অস্ত্রকে নগ্নভাবে ব্যবহার করছেন মোদি-শাহরা। গোটা দেশেই ছবিটা এক। ভোটের আগে বা বড় কোনও ইস্যু সামনে এলে সিবিআই-ইডি-পুলিসের তৎপরতা বেড়ে যায়। তাদের লেলিয়ে দিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চায় মোদি সরকার। জেরার নাম হেনস্তা করার ঘটনার উদাহরণ বহু আছে। রাজ্যে রাজ্যে এই একই জুজু দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি। এর বিরুদ্ধে বিরোধীরা জোরালো প্রতিবাদও করছে। বুধবারই দিল্লিতে বিরোধী ১৭টি দলের এক বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সব নেতাই এর বিরুদ্ধে সবর হন। কিন্তু সরকার বিরোধী কোনও প্রতিবাদ রাস্তায় নামলেই তা ভাঙতে নেমে আসছে অমিত শাহের পুলিস। সীমা লঙ্ঘন করতেও অনেক সময় তাদের বাধছে না, যা প্রকারান্তরে গুন্ডামির রূপ নিচ্ছে! বুধবার দিল্লির কংগ্রেস দপ্তরে মোদি-শাহের পুলিসের এমনই এক অত্যাচারের দৃশ্য দেখল দেশবাসী। সঙ্গত কারণেই অভিযুক্ত পুলিস অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠল। কিন্তু অতীতের মতোই এক্ষেত্রেও কৌশলগত কারণে মোদি-শাহরা নীরব নির্বিকার!

17th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ