বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বেকারদের নিয়ে ফের ছেলেখেলা

পনেরো বছর ও তার বেশি বয়সি যেসব মানুষ চাকরি করছেন এবং বেকার কিন্তু সক্রিয়ভাবে চাকরির খোঁজে রয়েছেন, তাঁদের একত্রে লেবার ফোর্স বা শ্রমশক্তি বলা হয়। জনসংখ্যার শ্রমশক্তি হিসেবে চিহ্নিত অংশটি নিয়েই লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (এলএফপিআর) ঠিক করা হয়। ভারতের বর্তমান এলএফপিআর ৪০ শতাংশ। এই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক চিত্রটি মিলিয়ে দেখা যায়, সারা পৃথিবীর বর্তমান এলএফপিআর ৬০ শতাংশ। ভারতে এলএফপিআর দুর্বল হয়েছে গত একদশকে। তার মধ্যে আটবছর চলেছে নরেন্দ্র মোদির শাসন। সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বনিম্ন এলএফপিআর চিহ্নিত হয় ২০১৬ সালে—৪৭ শতাংশ, সেটাই ২০২১-এর ডিসেম্বরে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। আরও দুর্ভাগ্য এই যে, মেয়েদের বেশি হারে শিক্ষিত করা সত্ত্বেও মহিলাদের এলএফপিআর ভয়ানক রকমের কম—৯.৪ শতাংশ! এই ছবি থেকে এটাই পরিষ্কার হয় যে, ভারতে নির্দিষ্ট বয়সি কর্মক্ষম জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হয় কাজ করছেন না অথবা চূড়ান্ত হতাশা থেকে চাকরির সন্ধান ছেড়েই দিয়েছেন। এটাও লক্ষ করার মতো যে, সারা দেশে বেকারত্বের হার এখনও ভয়াবহ। সিএমআইই-র হিসেবে মে, ২০২২-এ বেকারত্বের হার ছিল ৭.১২ শতাংশ। তার মধ্যে শহরাঞ্চলের হার আরও বেশি—৮.২১ শতাংশ। গ্রাম ভারতের বেকারত্বের হার ৬.৬২ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের এই ছবিটিও কোনওভাবেই স্বস্তি দেয় না আমাদের। 
অর্থনীতির পণ্ডিতরা মনে করেন, শ্রমশক্তির এইরূপ অতি নিম্ন অংশগ্রহণ নিয়ে আর যাই হোক, কোনও দেশই ইকনমিক পাওয়ার বা অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে না। তাহলে নরেন্দ্র মোদির একের পর এক ঘোষণা কি চুপসে যাওয়া ফানুস মাত্র! ২০১৯-এ তিনি দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালের ভিতরে ভারত ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতি এবং গ্লোবাল পাওয়ার হাউস বা বিশ্বগুরু হয়ে উঠবে। ২০২৪-এর ভোট যত কাছে আসছে সরকার বুঝতে পারছে, এবার অনিবার্য হয়ে উঠছে কিছু জবাব দেওয়ার প্রয়োজন। অতএব, গোলপোস্টও একটু একটু করে পিছচ্ছে শাসক। তবে মুখ খুলছেন না মোদি নিজে। তাঁর জায়গায় নামানো হয়েছে তাঁরই মন্ত্রিসভার এক জুনিয়র সদস্যকে। ১৩ জুন পুনেতে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর সুর পাল্টে বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই ৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হয়ে গিয়েছে, ৫ ট্রিলিয়ন অর্জন করবে ২০২৬ সালের ভিতরে। কথাটি বলার সময় মোদির প্রতিনিধি চীনের ছবিটা মনে রেখেছেন বলে মনে হয় না। তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনের অর্থনীতির বহরটি মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি—২০২১ সালে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে চীন। এই তুলনা জবরদস্তি নয়, এটাই স্বাভাবিক। মাওয়ের চীন স্বাধীনতা অর্জন করেছে ভারতেরও পরে। অথচ, তাদের শ্রীবৃদ্ধির পাশে ৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতকে কোনওভাবেই রাখা যাচ্ছে না। তাহলে ইকনমিক পাওয়ার কথাটি আওড়ানোর বিলাসিতা কী কারণে? 
ভোট যে সত্যিই ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে, ভিতরে ভিতরে ঘাবড়ে দিচ্ছে শাসককে, তা এবার পরিষ্কার হল প্রধানমন্ত্রীর অন্য-এক কথায়। মঙ্গলবার তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী দেড় বছরে তাঁর সরকার ১০ লক্ষ বেকারকে চাকরি দেবে! সংশ্লিষ্ট মহলের হিসেব, মোট শূন্যপদের থেকেও ১ লক্ষ বেশি চাকরির খোয়াব দেখিয়েছেন মোদি। তিনি নিশ্চয় মনে রাখেননি ২০১৩ সালে দেওয়া বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি। এও মনে করতে চান না, তাঁর সরকার দুই টার্মে কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলিতে কর্মী নিয়োগে মোটেই গা করেনি। তার ফলেই শূন্যপদ জমতে জমতে ৯ লক্ষ ছুঁয়েছে। এবার তার সঙ্গে আরও ১ লক্ষ যোগ করে, মোট ১০ লক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০২৩-এর ডিসেম্বর। খুব সোজা হিসেব, ২০২৪-এর গোড়ার দিকে ভোটের প্রচারে নামার আগে জুতসই হাতিয়ার তৈরিতে মন দিয়েছেন মোদি। বুঝে গিয়েছেন, রামমন্দির-সহ চূড়ান্ত মেরুকরণ নামক অস্ত্রের ধার ক্রমে ভোঁতা হয়ে আসছে। ভোটের বাজারে সুবিশাল বেকার বাহিনীর থেকে পরীক্ষিত বোড়ে আর কিছু হতে পারে না।

16th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ