বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

কেন্দ্রের গরিব মারা রাজনীতি

২০৩০ সালের ভিতরে সুস্থায়ী উন্নয়ন (সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট) চাই। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ সব দেশের সামনে এই লক্ষ্যমাত্রা হাজির করে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মূল বক্তব্য হল, ২০৩০-এর পর এই গ্রহের একজনও মানুষ পিছিয়ে থাকবে না। অর্থাৎ প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়ায় বাঁচার মতোই বাঁচবে সবাই। সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) এজেন্ডায় রয়েছে ১৭টি বিষয়। তার এক নম্বরে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দু’নম্বরে সবার ক্ষুধা নিবৃত্তি। বাকি বিষয়গুলির কথা পরে ভাবা যাবে, প্রথম দুটি সমস্যা ভারতের ক্ষেত্রে কত বড় আমরা জানি। বর্তমান শতকের দু’দশক পেরনোর পরেও সমস্যা দুটি মারাত্মক। স্মরণ করা কঠিন নয় যে, এই শতকের গোড়ার দিকে ব্যাপারটা আরও কত ভয়াবহ ছিল। তাই, ইউপিএ সরকার সব গরিব পরিবারের জন্য বছরে অন্তত একশো দিনের কাজের ব্যবস্থা করতে ২০০৫ সালে এনআরইজি অ্যাক্ট তৈরি করে। এই আইনের উদ্দেশ্য, গ্রাম ভারতে বসবাসকারী মানুষের বেরোজগারির সমস্যা কমানো। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের হাতে টাকার জোগান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ানো। প্রথম দিকে সারা দেশের চিহ্নিত পিছিয়ে পড়া কিছু জেলা ও ব্লককে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। ধাপে ধাপে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয় দেশের সব জেলা। এবছরও ৭৩১টি জেলার ৭,১৫০টি ব্লকের ২,৬৯,৫৭১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এমজিএনআরইজিএ স্কিম চালু রয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনে বছরে একশো দিনের কাজের সংস্থান করার কথা বলা হলেও, এখনও পর্যন্ত কোনও বছর সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এজন্য এই প্রকল্প রূপায়ণে খামতির সমালোচনা করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও, একাধিকবার। ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত সামনে আনতে তারা বার বার বিহারের কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত পরিবার পিছু গড়ে প্রায় ৫০ দিনের কাজ দেওয়া গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষের এই পর্যন্ত সংখ্যাটি ২২দিন। সৃষ্ট শ্রমদিবসের ভিতরে মহিলা বেনিফিসিয়ারির সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্য। ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত ৫৩-৫৬ শতাংশ। ৫ কোটি ২৭ লক্ষ পরিবার কাজ পেয়েছিল ২০১৮-১৯ সালে। তারপর থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত কাজ পেয়েছে যথাক্রমে ৫ কোটি ৪৮ লক্ষ, ৭ কোটি ৫৫ লক্ষ, ৭ কোটি ২৬ লক্ষ পরিবার। 
এই চিত্র থেকে এটাই পরিষ্কার হয় যে, স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও প্রকল্পটির গুরুত্ব কোনওভাবেই লঘু করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। শুধু তাই নয়, এই স্কিমের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি মানুষের কাজ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিএমআইই-র হিসেবে, ১১ জুন, ২০২২ তারিখেও সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৪ শতাংশ, যার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৭.১ শতাংশ। অন্যদিকে, আলোচ্যমান প্রকল্পে পরিবার পিছু কাজ দেওয়ার হার ৫০ শতাংশের আশেপাশে। মানুষ আর কাজের দাবি করছে না, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং এটাই অধিক বিশ্বাসযোগ্য যে গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ কাজ চেয়েও পাচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কথা আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ রয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণে এই রাজ্য সারা দেশের শীর্ষে রয়েছে টানা আটবছর। বিশেষ করে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে করোনার মহামারীর দু’বছরে। পশ্চিম ও উত্তর ভারত থেকে প্রায় শূন্য হাতে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করেছিল। তার ফলে, যখন সারা দেশের অর্থনীতি ত্রাহি মধুসূদন আর্তনাদ করছিল, তখনও বাংলায় বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের থেকে কম ছিল এবং বেশি ছিল পণ্যের চাহিদা ও আর্থিক বৃদ্ধির হার। 
ভালো কাজের জন্য পুরস্কার প্রদানই রীতি। তাই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বাংলার জন্য আরও বড় মাপের বাজেট অনুমোদনই কাম্য ছিল। পরিবর্তে, বাংলার জন্য শ্রমদিবসের বরাদ্দ স্রেফ শূন্যে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্র! অন্যদিকে, আটকে রাখা হয়েছে রাজ্যের একান্ত উদ্যোগে সম্পাদিত কাজের দরুন প্রাপ্য আট হাজার কোটি টাকার পেমেন্ট। অথচ, একই সময়ে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি বিজেপি শাসিত রাজ্যের প্রতি মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এর ঠিক উল্টো। ওইসব রাজ্যের জন্য শ্রমদিবসের বরাদ্দ যথারীতি বেশি। এর দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকার কী বোঝাতে চায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গ্রামবাংলা সম্পূর্ণরূপে বেকারত্বমুক্ত  হয়ে গিয়েছে? মোদি সরকারের অর্থনীতির সৌজন্যে এ এক কষ্টকল্পনা, কারণ বাংলা বিকল্প পথে হাঁটলেও ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি অঙ্গরাজ্য মাত্র; হাজার যোগ্যতা ও আন্তরিকতা থাকলেও কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়া একটি রাজ্যের পক্ষে খুব বেশি দূর অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। একশো দিনের কাজের ব্যাপারে মোদি সরকারের যে ভূমিকা সামনে এসেছে, তা নির্ভেজাল এক সঙ্কীর্ণ রাজনীতি। এই কদর্য রাজনীতির আশু অবসান জরুরি।

13th     June,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ