বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

সতর্কতার কড়া বেড়ি

করোনার দ্রুত সংক্রমণে রাশ টানতে কী করণীয়? তবে আগের মতো পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের পথে হাঁটতে চাইছে না দেশের অধিকাংশ রাজ্য। বক্তব্যের সপক্ষে তারা যে যুক্তি দিয়েছে তা হেলাফেলা করার মতো নয়। লকডাউনের জেরে গরিব মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশার দিনগুলিকে এখনও ভোলা যায়নি। বেকারত্বের হার বেড়েছে, বিরূপ প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং অর্থনীতিতে। দেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে এখনই মুক্তি নেই। তাই অদৃশ্যপ্রায় এই শত্রুকে সঙ্গী করেই বাঁচার কৌশল ঠিক করতে হবে। লকডাউন করে জীবন জীবিকায় আঘাত হেনে এই সমস্যার সমাধানের পথে হাঁটা অনুচিত। তাই করোনায় সঙ্গে লড়াই করতে হলে যতটা সম্ভব জীবনজীবিকা স্বাভাবিক রেখেই এর মোকাবিলা করা দরকার। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সেটা জরুরি। একথা ঠিক, ভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের সংক্রমণ অতি দ্রুত ছড়ায় বলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেই তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করতে হবে প্রশাসনকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের সে কথাই শিখিয়েছে। প্রথমে করোনা মোকাবিলায় আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। তারপর দফায় দফায় তার সময় বাড়ানো হয়। সেই লকডাউনের সিদ্ধান্তে ছিল যথাযথ পরিকল্পনার অভাব। যার ফলে দেশের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় বড় রকমের ধস নেমে এসেছিল। সবথেকে বিপদে পড়েছিল দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ এবং ছোট মাঝারি শিল্পক্ষেত্র। এক ধাক্কায় উৎপাদন কমে যায় অনেকটাই। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় গরিব মানুষের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার প্রয়োজনের কথা জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা সোচ্চার হন। কিন্তু মোদি সরকার তাকে মান্যতা না দিয়ে অমানবিকতারই নিদর্শন রেখেছে। সেই কঠিন ও ভয়াবহ অবস্থা আবার ফিরে আসুক তা চায় না রাজ্যগুলি। এবার অবশ্য অতীতের মতো করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির উপর চাপিয়ে দিতে চায়নি কেন্দ্র। তাই তারা রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে হেঁটেছে। কারণ অতীতে কেন্দ্রের একাধিক হঠকারী সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হয়েছে রাজ্যকে। এবার সঙ্গতকারণেই পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের পথে না গিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র রাজ্য উভয়েই।
লকডাউনের পর আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছিল বলেই বাজারে কেনাকাটা বেড়েছে। খুলেছিল কলকারখানার দরজা। রাজস্ব আদায়ও অনেকটাই বেড়েছে। দেশে কোথাও কোথাও করোনার তৃতীয় ঢেউ এলেও এই স্বাভাবিক হয়ে ওঠা পরিস্থিতির গলায় ফের পূর্ণ লকডাউনের বেড়ি পরিয়ে দিতে চায় না অধিকাংশ রাজ্য। কারণ পূর্ণাঙ্গ লকডাউন হলে ফের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়বে। ফিরে আসবে সেই অন্ধকারের সময়। রাজ্যের বাস্তববাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা বুঝে অনেক আগে থেকেই বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি সংক্রমণে লাগাম টানতে জোর দিয়েছেন কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ করার উপর। টিকাকরণেও জোর দেওয়া হয়েছে। যদিও টিকাকরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এখনও ভারতের সব প্রাপ্ত বয়স্ককে দুটি ডোজ টিকা দিয়েই উঠতে পারেনি মোদি সরকার। অথচ জনস্বাস্থ্য রক্ষার এই দায়িত্বটি তাদেরই। ২০২১-এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার দুটি ডোজ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি কেন্দ্র দিয়েছিল তা তারা পালন করেনি। দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, কেন্দ্রে প্রচারসর্বস্ব আত্মতুষ্ট এমন একটি সরকার চলছে যাদের কথায় ও কাজে মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনও দেশে ১৮ ঊর্ধ্ব এমন বহু নাগরিক আছেন যাঁরা প্রথম ডোজটিও পাননি। বলা যায়, সরকার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। যেহেতু ফের করোনা লালচোখ দেখাচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে, এবার অন্তত কেন্দ্র লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে টিকাকরণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করুন। 
ওমিক্রনের সংক্রমণের মাত্রা বেশি। তবে এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন ধারে ও ভারে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির মতো এটা বিপজ্জনক নয়। সেই কারণেই মাস্ক, স্যানিটাইজার, দূরত্ববিধি এবং স্থানীয় স্তরে কনটেইনমেন্ট জোন করে পরিস্থিতি মোকাবিলার উপর জোর দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বিধিনিষেধ মানার কথা বহুল প্রচারিত হলেও এখনও বহু মানুষ বেপরোয়া। সে কারণেই সরকারকে কঠোর হতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নিয়ম মানাতে অর্থাৎ সবক শেখাতে পুলিসকে আরও কঠোর হতে হবে। অর্থাৎ আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে ধস নামিয়ে দেওয়া লকডাউনে নয়, কড়া বিধিনিষেধের কাঁধে ভর করেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে সরকার। তাই ত্রস্ত না হয়ে সতর্ক হন। মানুষকে পুরো বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেই হবে। না হলে দরকারে আরও কড়া হবে সরকার। এ বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার।

8th     January,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ