বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ডাহা ফেল

একজন নরেন্দ্র মোদি, আরেকজন যোগী আদিত্যনাথ। প্রথমজন দেশের প্রধানমন্ত্রী, দ্বিতীয়জন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। গো-বলয়ের বৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ভোটের দিন ঘোষণা হতে পারে যে কোনওদিন। তাই সময় নষ্ট না করে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী যুগলকে প্রকল্পের শিলান্যাস থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে একসঙ্গে। যোগীর আশা, মন্দির রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এবারেও তাঁর বৈতরণী পার করে দেবেন ‘ফকির’ বাবা মোদি। যদিও সেখানকার বহু মানুষ ক্ষমতাসীন প্রশাসনকে চরম অপদার্থ বলে মনে করলেও যোগীতেই চরম ভরসা মোদির। তাই ভোটের উত্তরপ্রদেশে এই যুগলবন্দির ফ্রেমবন্দি ছবি চর্চার কেন্দ্রে চলে এসেছে। বিজেপি’র এই দুই পোস্টার বয়কে এক বন্ধনীতে এনে দিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। ২০২১-এ নারী নির্যাতনে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানটি দখল করে নিয়েছে যোগীর উত্তরপ্রদেশ। একই রকম ‘কৃতিত্ব’ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে দেশের ‘অগ্রগতির’ ছবিটা হল, ২০২০-র তুলনায় ২০২১-এ দেশে নারী নির্যাতন বেড়েছে ৩০ শতাংশ। কমিশনের তথ্য সমৃদ্ধ রিপোর্ট বলছে, ২০২১-এ দেশে নারী নির্যাতনের প্রায় ৩১ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর অর্ধেকই এসেছে উত্তরপ্রদেশ অর্থাৎ যোগীর রাজ্য থেকে। যাঁর উপর আবার মোদির ভীষণ ভরসা! বোঝাই যাচ্ছে, মোদি জমানায় দেশে নারীরা সুরক্ষিত নন। এ তো শুধু নথিভুক্ত অভিযোগ। নারী নির্যাতনের এমন বহু ঘটনা আছে যেসব ক্ষেত্রে অভিযোগ জমাই পড়েনি বা অভিযোগ জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ হামেশাই শোনা যায়। কিছুটা আতঙ্কে, কিছুটা লোকলজ্জার ভয়ে বহু মহিলা অভিযোগই দায়ের করেন না। নীরবে সহ্য করেন শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার। তবে যে রিপোর্টটি সামনে এসেছে তাতেই স্পষ্ট হয়েছে, বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যেই নারী নির্যাতনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। তবু ‘সুশাসনের’ নিদর্শন হিসেবে এই উত্তরপ্রদেশকেই মডেল বানাচ্ছেন মোদি! যে রাজ্যটি নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে ডাহা ফেল। অবশ্য শুধু নারী নির্যাতনের কথাই-বা বলা কেন? স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও মোদির ‘উত্তম’ প্রদেশের করুণ ছবিটা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। সেক্ষেত্রেও উত্তরপ্রদেশের স্থান সবার নীচে। আর প্রাথমিক শিক্ষায়? উত্তরপ্রদেশ জায়গা করে নিয়েছে পিছনের সারিতে। জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্টে, নারী নির্যাতনে উত্তরপ্রদেশ সবার উপরে থাকলেও লাজলজ্জার মাথা খেয়ে নির্বাচনী প্রচারে সেই যোগী রাজ্যকেই সুশাসনের নমুনা হিসেবে তুলে ধরছে গেরুয়া শিবির! একেই বলে দু’কান কাটা!
উত্তরপ্রদেশের এই বেআব্রু কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়লেও গোটা দেশেই মোদি জমানায় নারী নির্যাতনের চিত্রটা হতাশই করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম বছর ২০১৪ তে নারী নির্যাতনের খতিয়ান ছিল এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বাধিক। প্রায় ৩৪ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার সাত বছর পর সংখ্যাটা ফের তার কাছাকাছি পৌঁছাল। মোদি-যোগীর রাজত্বে যাঁরা এমন নির্মম পরিণতির শিকার সেই মহিলারাই আবার উত্তরপ্রদেশের ভোটে মহার্ঘ হয়ে উঠেছেন। দুর্ভাগ্যজনক যে, সেই রাজ্যে গিয়েই মোদি বলছেন, মহিলাদেরই নিশ্চিত করতে হবে যাতে বিরোধীরা ক্ষমতায় না আসে। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস! কারণ এই রাজ্যে গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে দেখা গিয়েছে মহিলা ভোটারের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি। অতএব মেয়েরা ‘মায়ের জাত’ বলে এখন প্রচারে ভাসিয়ে দিচ্ছে গেরুয়া বাহিনীর বড়-মেজো-ছোট নেতারা। মোদির সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়ন বাড়াতে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’, পিএম জনধন, উজ্জ্বলা যোজনা, সুকন্যা সমৃদ্ধির মতো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অধিকাংশই চূড়ান্ত ফ্লপ। অথচ উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রাক্কালে তা নিয়েই গর্বের প্রচার চালাচ্ছে পদ্মশিবির। অথচ সেই রাজ্যেই মহিলারা নিরাপদ নন। ধর্ষণ করে হত্যা, শ্লীলতাহানি, গার্হস্থ্য হিংসা ইত্যাদি ঘটনায় ডবল ইঞ্জিনের সরকার উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে।
একদিকে মহিলা নির্যাতনের বাড়বাড়ন্ত, অন্যদিকে মহিলাদের জন্য প্রকল্প, ক্ষমতায়নের অসত্য অর্ধসত্য প্রচার চালিয়ে উত্তরপ্রদেশে সব ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। ঘটনা হল, এসব করতে গিয়ে বারবার বেআব্রু হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ। অপ্রিয় সত্যগুলি সামনে আসছে। একের পর এক রিপোর্টে মুখ পুড়ছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের। অস্বস্তি বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের। তাই প্রশ্ন উঠছে, এরপরও কি শেষরক্ষা হবে? সিঁদুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে। কারণ শনিবারই উত্তরপ্রদেশে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার দীর্ঘ কাটআউট ভেঙেচুরে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখা গেছে মহিলাদের। বিজেপি মহিলাদের উন্নয়নে কত কী করেছে তার ফিরিস্তি দিয়ে নাড্ডার ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের হাপুরে যে ঘটনাটি ঘটল তা গেরুয়া বাহিনীর কাছে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়। জ্বালানির জন্য পোস্টার ব্যানারের কাঠামো মহিলারা লুট করবে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। হেঁশেলের সুখ কেড়ে নিলে বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে মহিলারা যে বিজেপি’র সব অঙ্ক ওলটপালট করে দিতে পারেন, এ যেন তারই ইঙ্গিত। বিজেপি’র কাছে যা অশনিসঙ্কেত।

3rd     January,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ