বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

অসমে ফের এনআরসি বিতর্ক

ফের মুখোশ খুলে পড়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত অসমের এনআরসি খসড়া তালিকাই চূড়ান্ত। এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ৩ কোটি ১১ লক্ষের বেশি মানুষের নাম রয়েছে চূড়ান্ত খসড়ায়। ১৯ লক্ষ অসমবাসী বাদ পড়েছেন, যার মধ্যে হিন্দু রয়েছেন ১২ লক্ষ, বাঙালি ২ লক্ষ। এই খসড়া তালিকা যখন প্রকাশিত হয় তখনই তার যথার্থতা নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে। ভারতীয় নাগরিকের যথাযথ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বহু ভাষাভাষী মানুষ, এমনকী অসমিয়াদের অনেকের নাম বাদ পড়ার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। ওই তালিকা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের রাজ্যটি। অসমের আজকের মুখ্যমন্ত্রী, সেই সময় বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও ওই তালিকা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে অসম সরকারও। তাদের দাবি, খসড়া তালিকা সংশোধন করা প্রয়োজন। আদালত অবশ্য এখনই কোনও নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল খসড়া তালিকাকে চূড়ান্ত বলে জানিয়ে দেওয়ায় ফের একদফা জটিলতা ও অস্থিরতা তৈরি হল উত্তর-পূর্বের এই অঙ্গরাজ্যে। ট্রাইব্যুনালের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আইন মেনে তালিকা তৈরি হয়েছে। তাই এটাই চূড়ান্ত। এই ঘটনা আরও একবার বিজেপির মুখ ও মুখোশকে সামনে তুলে ধরল। কারণ এনআরসি করা নিয়ে সবচেয়ে মাতামাতি করেছিল বিজেপি। এখন ট্রাইব্যুনাল তার বক্তব্য জানিয়ে দেওয়ায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজছে। কারণ তালিকা সংশোধনের ধোঁকা দিয়েই ফের অসমে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। তাই মুখ রক্ষায় নরেন্দ্র মোদি সরকার এখনও খসড়া তালিকায় অনুমোদন না দিয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছে। আর চরম আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তালিকায় বাদ যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ, যার মধ্যে ২ লক্ষ বাঙালি রয়েছে।
অসমে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্ক পঞ্চাশ বছর আগে থেকে। সে রাজ্যে সত্তরের দশকে অসমের ছাত্র সংগঠন ‘আসু’র নেতৃত্বে ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলনও শুরু হয়। সেই ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কাছে মাথা নত করতে হয় তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকারকে। তারা ‘বিদেশি’ বিতাড়নের জন্য এনআরসির দাবি মেনে নেয়। আসুর হাত ধরে জঙ্গি আন্দোলন তখন বাঙালি বিতাড়নের দাবি করলেও হিন্দু-মুসলমান ধর্মীয় মেরুকরণের প্রশ্ন ওঠেনি। বিজেপি সেটাই চেয়ে এনআরসির সলতেতে আগুন দিয়েছে। কিন্তু খসড়ায় পরিষ্কার, বাদ পড়ার তালিকায় হিন্দু-মুসলমান, অসমিয়া-বাঙালি কেউ ছাড় পায়নি। আসলে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে এনআরসি ‘আপডেট’ করার কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর তালিকার একটি অংশ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই খসড়া প্রকাশিত হয়। এরপর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট। এনআরসি তালিকায় নাম না-থাকা মানে, দশকের পর দশক ধরে বসবাসকারী মানুষকে এক কলমের খোঁচায় ‘বিদেশি’ বলে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়া। বিজেপি চায় প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ‘বিতাড়িত’ বা অন্য কারণে আসা হিন্দু শরণার্থীদের এদেশে নাগরিকত্ব দিতে। বিনিময়ে নানা বজ্র আঁটুনি তৈরি করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ‘দেশছাড়া’ করতে। বিজেপির বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়েই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। 
বাদ পড়ছে বিপুল সংখ্যক হিন্দু বাঙালি। যাঁরা প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অসমে পদ্ম ফোটাতে গত নির্বাচনেও বিজেপি এনআরসি তাস খেলে বাজিমাত করেছে। এখন তাই ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বিজেপির চাপ বাড়ল আর অনিশ্চিত হয়ে পড়ল দু’লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি। বিজেপির মতলববাজির কারণেই নিজভূমে পরবাসী হওয়ার যন্ত্রণায় বিদ্ধ লক্ষ লক্ষ অসমবাসী। বিজেপির হাত শক্ত করার ফল কী মারাত্মক হতে পারে তা তাঁরা এখন সম্ভবত বুঝতে পারছেন।
কিন্তু বঙ্গবাসী বিজেপিওয়ালাদের ধাপ্পাবাজিতে বিশ্বাস করেনি। তাঁরা অসমবাসীর মতো অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে চাননি। আগেভাগেই কড়া আপত্তির কথা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা—রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র নিয়ে যাঁরা যুগযুগ ধরে বাংলায় বসবাস করছেন তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার কোনও চক্রান্ত মানা হবে না। তাই এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এনআরসি তাস খেলেও বাজিমাত করতে পারেনি বিজেপি। ফলে বাংলায় এনআরসি ইস্যু নিয়ে এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন মোদি-শাহরা। কিন্তু প্রতিবেশী অসম রাজ্যের বিষয়টি বাংলার মানুষকেও এখন ভাবাচ্ছে। এই মুহূর্তে মোদি সরকারের উচিত, কোনওরকম ধোঁয়াশা না-রেখে অসমের খসড়া তালিকার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। যাতে মানুষের মনের যাবতীয় সংশয় দূর হয়ে যায়। তাঁরা নিশ্চিন্তবোধ করতে পারেন।

22nd     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ