বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ঘরে বাইরে নাজেহাল মোদি
 

অটলবিহারী বাজপেয়ি দিল্লির কুর্সি দখলের পরই বিজেপি নিজেকে চেনার চেষ্টা করে। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দলকে বোঝালেন যে শুধু কেন্দ্রীয় ক্ষমতা নয়, রাজ্যে রাজ্যেও বিজেপির পক্ষে ক্ষমতাসীন হওয়া সম্ভব। পূর্ণ কর্তৃত্ব ভোগের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলিতেও শাসনক্ষমতা পাওয়া জরুরি। মোদি ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ ভারত নির্মাণের আওয়াজ তুলে যেন অশ্বমেধের ঘোড়া ছেড়ে দিলেন। পুরাণের কাহিনি অনুসারে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজারা একবছরের জন্য অশ্বমেধের ঘোড়া ছেড়ে দিতেন। সঙ্গে ছুটত সেই পবিত্র ঘোড়াকে রক্ষা করার জন্য সৈন্যসামন্ত। চলার পথে অন্যকোনও রাজার বাহিনী ঘোড়ার গতিরোধ করার চেষ্টা করলে পূর্বোক্ত রাজার দলবল যুদ্ধে লিপ্ত হতো। এরপর ঘোড়াটিকে উদ্ধার করে সামনে এগিয়ে দিত তারা। এইভাবে ঘোড়াটি অক্ষত অবস্থায় রাজার দরবারে ফিরে এলে সংশ্লিষ্ট রাজা রাজচক্রবর্তী উপাধিতে ভূষিত হতেন। অবশেষে সেই ঘোড়াকে বলি দিয়ে সাঙ্গ করা হতো অশ্বমেধ যজ্ঞ। পুরাণ মতে, শতবার অশ্বমেধ যজ্ঞের দ্বারা ইন্দ্রত্ব লাভ করা যায়। তাই ইন্দ্র কখনও চাননি কোনও রা‌জা এই যজ্ঞ করুন। ঩ঠিক এই কারণে দিলীপ ও সগররাজের শতমেধ যজ্ঞে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর মোদি রাজ্যে রাজ্যে কোয়ালিশন নামক বারোভাজা জোট গড়ার কৌশল নেন। তাতে বিজেপি কোথাও এককভাবে, কোথাও জোট হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছিল। ক্ষমতা দখলের গতি কয়েক বছর অব্যাহত ছিল। ফলে, এই গেরুয়া কূটনীতি একটা সময় অব্দি দারুণ সফলই মনে হচ্ছিল। অনেকে ভাবছিলেন, বাকি রাজ্যগুলি গ্রাস করা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। 
দেশজুড়ে মানুষ বুঝতে চাইছিলেন, এই নজিরবিহীন সাফল্যের আসল কারিগর কে? নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের মধ্যে কাকে দেওয়া হবে ‘নয়া চাণক্য’ খেতাব? কিন্তু কৌশলটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হল যে কুশলীদের ভাবনার গোড়ায় অনেক গলদ ছিল। মনে রাখা দরকার ছিল যে বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নয়। কিছু দল আদৌ বন্ধু ছিল না, কৌশলগত কারণে অল্প সময়ের জন্য বন্ধুত্বের ভান করেছিল। তেলেজলে যেমন মিশ খায় না, ঠিক তেমনি বিজেপির সঙ্গে তাদেরও বন্ধুত্ব টেকেনি। আজকের বন্ধুটি কালই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। যেমন অকালি, শিবসেনা, এলজেপি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভৃতি হয়েছে। ফলে পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড-সহ কয়েকটি রাজ্যে এজন্য মোদি-শাহের পার্টিকে রামধাক্কা খেতে হয়েছে। সত্য প্রমাণিত হল মহাভারতের অমৃতকথা—‘রাজধর্মে ভ্রাতৃধর্ম বন্ধুধর্ম নাই।’ এর বাইরে রয়েছে আরও কিছু দল, যারা সোজাসাপ্টা প্রতিদ্বন্দ্বী, যাদের গেরুয়া শিবিরে শামিল করার চেষ্টার অধিক পণ্ডশ্রম কিছু নেই। যেমন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কিছু বামপন্থী দল। এবারের ভোটের মাধ্যমে বাংলা দখলের চেষ্টায় মোদিরা ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। এজন্য গোটা বিজেপি পার্টি এবং কেন্দ্রীয় সরকার যাকে বলে জান লড়িয়ে দিয়েছিল। মমতা-মোদি সেই দ্বৈরথে মোদি বস্তুত গোহারা হয়েছেন। কোনও সংশয় নেই, এরপর থেকে সারা দেশে বিজেপি পার্টি এবং মোদির রাজনৈতিক উচ্চতা অনেকখানি খাটো হয়ে গিয়েছে। 
এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিজেপির অভ্যন্তরেও। অন্দরের ঐক্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক বিধায়ক তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর—এমএলএ, এমপি মিলিয়ে আরও অনেকে বিজেপি ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়ে বয়েছেন—তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজসঙ্কেত পাওয়ার জন্য প্রহর গুনছেন। এমনকী, যেসব রাজ্যে ক্ষমতা খাতাকলমে ধরে রেখেছে বিজেপি, সেসব জায়গাতেও নিত্যনতুন অস্বস্তির ছবি প্রকট হচ্ছে। যেমন মোদি-শাহের রাজ্য গুজরাতের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী গদিচ্যুত হয়েছেন সদ্য। শনিবার আচমকা ইস্তফা দিয়েছেন বিজয় রুপানি। আগামী বছরই সেখানে বিধানসভার ভোট। তার আগেই এই কাণ্ড! গত বিধানসভা ভোটের আগে, ২০১৬-য়, ইস্তফা দিয়েছিলেন মোদির উত্তরসূরি মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেল। পাঁচবছরের ব্যবধানে সেই নাটকেরই যেন পুনরাভিনয় দেখল দেশ। এটাই প্রথম নয়, গত ছ’মাসে এই নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির পাঁচ পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রীর গদি টলে যেতে দেখলাম আমরা। জল্পনার অবকাশ নেই যে, এর এক ও একমাত্র কারণ অন্তর্দ্বন্দ্ব। আর এই ঝামেলার নেপথ্যে রাজ্য এবং দেশশাসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার নিয়ে চাপানউতোর। করোনা মোকাবিলার ব্যথর্তা, অনুন্নয়ন এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়েই নেতৃত্ব দলের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন। অশ্বমেধের ঘোড়াকে চুপি চুপি ঘরে ফিরিয়ে এনে নিজের গদি রক্ষায় আপাতত মনোযোগী হওয়া উচিত মোদির। মুহুর্মুহু হাততালি কুড়নোর ভ্রান্ত পথ ছেড়ে জনস্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করলেই তাঁর গদি আপাতত রক্ষা পেতে পারে। তার ভিত্তিতে মানুষ ঠিক করবে, চব্বিশের খেলায় তাঁকে কয়টি গোল হজম করতে হবে অথবা কয়টি গোল তিনি দেবেন।

13th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ