বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

কেন্দ্রের পঙ্গু অর্থনীতি

ছবিটা শরতের আকাশের মতোই ঝকঝকে পরিষ্কার। গত আগস্ট মাসেই দেশে বেকারের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ কোটি ৬০ লক্ষে। দেশের প্রতি দশ জন স্নাতক বা তার বেশি শিক্ষিত ছেলেমেয়ের মধ্যে ছ’জনই বেকার। বেকারত্বের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার দেড় গুণ। মোদি জমানায় ‘উন্নত’ ভারতের এই পরিস্থিতি। তবে এতেও শাসক কুম্ভকর্মের ঘুম ভাঙছে না। বরং তাদের বাজনদাররা সাফল্যের ঢাক পিটিয়েই চলেছে! সরকারি পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফলে এক্ষেত্রে ভারতের ভাবমূর্তিটিও ম্লান হতে বসেছে। বারবার ঋণ সর্বস্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অর্থনীতির বেহাল পরিস্থিতি ঢাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল-জুন মাসের প্রথম ত্রৈমাসিকে তার আগের বছরের ঠিক ওই সময়ের তুলনায় দেশে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ২.১ লক্ষ কোটি টাকা। মুখ থুবড়ে পড়া বেহাল অর্থনীতি আরও দেখাচ্ছে, করোনার সময়কালে সংগঠিত ক্ষেত্রের অর্ধেক কর্মী অসংগঠিত ক্ষেত্রে চলে গিয়েছেন। কলকারখানার শ্রমিকরা পেটের দায়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চাষের কাজে ফিরে গিয়েছেন। এহেন পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবেই মোদি সরকার দায়ী। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান যে বাড়ানো দরকার সে কথা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বললেও কেন্দ্র কর্ণপাত করেনি। তার ফল ভুগছে আমজনতা। শুধু তাই নয়, পেট্রল-ডিজেল-গ্যাসের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির সৌজন্যে সর্বস্তরে মূল্যবৃদ্ধির বাড়বাড়ন্ত। এর জেরে কেনাকাটা কমে যাওয়ায় বাজারে চলছে মন্দা। এমন এক পঙ্গু চেহারার অর্থনীতির যাবতীয় দায় অবশ্যই নরেন্দ্র মোদি, নির্মলা সীতারামনদের নিতে হবে। এই সরকার বাজারে চাহিদা তৈরির বদলে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার যে নীতি গ্রহণ করেছিল তা যে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না সেটা বিনিয়োগ কমার সরকারি পরিসংখ্যানেই ধরা পড়েছে। বাজারে চাহিদা না বাড়লে শিল্পমহল লগ্নি করার আত্মবিশ্বাস যে পাবে না, আর চাহিদা বাড়ানোর জন্য দরকার নগদের জোগান— এই সহজ সত্যটিকে অগ্রাহ্য করে সরকার যে বিপরীত পন্থা নিয়েছিল তার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কেন্দ্রের ব্যর্থতায় মানুষের দুর্গতি বেড়েই চলেছে।
অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের কথা শুনলে দেশের এমন হাল হতো না। অতিমারী শুরুর পরেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেক তাবড় বিশেষজ্ঞ, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রসহ অনেকেই বলেছিলেন, মানুষের হাতে নগদ পৌঁছে দেওয়া জরুরি। তাঁদের নীতিটা ছিল পরিষ্কার। করোনাকালে আয় কমেছে মানুষের। তাই হাতে নগদ না থাকলে তাঁরা কেনাকাটা করবেন কীভাবে? হাতে নগদ থাকলেই বাজারে চাহিদা তৈরি হবে। আর তাতেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নির্মলা সীতারামন ঠিক এর উল্টো পথে হেঁটেছেন। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে তাঁর দাওয়াই ছিল ঋণসর্বস্ব প্যাকেজ। ব্যাঙ্কের ঋণ পেতে উৎসাহ দেওয়া, কর্পোরেট করে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এর ফল হয়েছে উল্টো। কেন্দ্রের এই নীতি সুপার ফ্লপ। পরিণতিতে কেনাকাটার উৎসাহ ঠেকেছে তলানিতে, বেড়েছে বেকারত্ব। সঙ্গত কারণেই কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রের নীতিকে পুরোপুরি ব্যর্থ ও ভুল বলে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন। দিল্লির সরকারের অবশ্য তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। উল্টে এপ্রিল-জুনের ত্রৈমাসিকে জিডিপি ২০ শতাংশ বৃদ্ধির হার নিয়ে হইচই শুরু করেছে নির্লজ্জ গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রের কোনটা সত্যি আর কোনটা অসত্য তা নিয়েই কটাক্ষ করে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলছেন, গত বছরের এই সময় জিডিপি ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল। তার থেকে এবারের উন্নতির ছবিটা তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন নরেন্দ্র মোদিরা। প্রকৃত সত্য হল, জিডিপি আগের জায়গায় ফেরেনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চোখে আঙুল দিয়ে অমিত মিত্র দেখিয়েছেন, ২০১৯-২০’র তুলনায় জিডিপি ৭.৭৯ শতাংশ কম অর্থাৎ এখানেও কেন্দ্রের সেই মিথ্যার ফানুস ওড়ানোর খেলাটি ধরা পড়েছে।
দেশের অর্থনীতির যখন এই অবস্থা, কর্মহীন ৩ কোটির উপর, বিনিয়োগ কমেছে ২ লক্ষ কোটি তখন গেরুয়া বাহিনী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭১তম জন্মদিন পালনে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে! অস্বচ্ছ নানা তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রের গুণগানেই তারা ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণই নেই দেশশাসকের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ব্যতিক্রম। আর্থিক অবস্থা ফেরাতে মানুষের হাতে নগদ টাকা নানা প্রকল্পের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার যে তাগিদ তিনি আন্তরিকভাবে অনুভব করেছেন তা মাথাতেও আনেননি ভারতেশ্বর। তাই গোটা দেশে সার্বিকভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেগেটিভ হলেও বাংলায় তা পজেটিভ। এক্ষেত্রেও বাংলাই পথ দেখাল। হেলদোল নেই কেন্দ্রের। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্য প্রকাশ পাবেই। যেমন সামনে এল বিনিয়োগ কমা আর ভয়াবহ বেকারত্বের প্রকৃত তথ্য। যা আড়াল করতেও নরেন্দ্র মোদিরা ব্যর্থ হলেন। 

12th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ