বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

তালিবান সরকার ও ভারত 

একদিকে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান লেঃ জেঃ ফৈয়জ আহমেদ তালিবান সরকার গঠনের ব্যাপারে কাবুলে অতি সক্রিয়। কোনও সন্দেহ নেই, তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামর জাভেদ বাজওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিনিধি হিসেবেই এই ভূমিকায় অবতীর্ণ। ইমরান আগেই ঘোষণা করেছেন, তালিবানের সুযোগ্য নেতৃত্বে আফগানিস্তানের ‘দাসত্বমুক্তি’ ঘটেছে। এবার পরিষ্কার কণ্ঠ শোনা গেল বাজওয়ার। তাঁর দাবি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী নজিরবিহীন সাফল্য পেয়েছে। শুনুন, যে-দেশটি বাস্তবে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘর, সন্ত্রাসবাদ রপ্তানিই যে-দেশের দীর্ঘদিনের শিল্প-বাণিজ্য সেই দেশের এক নায়কের অমৃতবাণী! সোমবার রাওয়ালপিণ্ডিতে অনুষ্ঠিত শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে বাজওয়া দাবি করেন, গোটা জাতি সেনা বাহিনীর পিছনে ছিল বলেই এই অসম্ভব সম্ভব করা গিয়েছে এবং পাকিস্তানে শান্তি ফিরেছে। পাক সেনা এবং জনগণের বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ় বলেই মাতৃভূমির বিরুদ্ধে শত্রুর গোপন কৌশলগুলি ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। এখানে শত্রু বলতে পাক সেনাধ্যক্ষ যে ভারতকেই ইঙ্গিত করেছেন তা বুঝতে বাকি থাকে না। তারপরই তিনি টেনে এনেছেন আফগানিস্তান প্রসঙ্গ। বাজওয়ার বক্তব্য, দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে যে-কোনও সেনা বাহিনী বালির বাঁধ মাত্র—প্রতিবেশী দেশে (আফগানিস্তান) সেটাই দেখলাম আমরা। তাঁর প্রত্যাশা, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ভাগ্য ফেরানোর মতো একটি ‘ইনক্লুসিভ সেট-আপ’ সেখানে গড়ে উঠবে। 
সারা পৃথিবী জানে, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের ইতিবাচক ভূমিকার কথা। আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণে ভারতের দীর্ঘ ত্যাগের কথা। আফগানিস্তানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারেও ভারত যতরকম পদক্ষেপ করেছে তার তুলনা নেই। উল্টোদিকে, পাকিস্তান লাগাতার মদত জুগিয়ে গিয়েছে তালিবান জঙ্গিদের। তালিবান কী বস্তু, সেটা সবচেয়ে ভালো জানে আফগান নারীসমাজ। দু-দশক আগের তালিবান জমানায় নারীকে শাসক শ্রেণি পুরুষের সম্পত্তির অধিক গুরুত্ব দেয়নি। তালিবান পুরুষদের হাতের ফাঁক দিয়ে নারীর জন্য যতটুকু ‘স্বাধীনতা’ গলে পড়ত ঠিক ততটুকুই ভোগ করতেন তাঁরা। গত ১৫ আগস্ট তালিবানের কাছে কাবুলের পরাজয় ঘটতেই বিশ সাল পিছনে ফেলে আসা সেই কালরাত্রির ছবিগুলিই জ্যান্ত হয়ে উঠছে। মেয়েরা কোন রঙের কী পোশাক পরবেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কার কাছে পড়বেন, কাদের সঙ্গে বসবেন অথবা বসতে পারবেন না, রাস্তাঘাটে কার সঙ্গে কতক্ষণ চলাফেরা করবেন প্রভৃতি অবশ্যমান্য বিধান হিসেবে জারি করা হচ্ছে। ইসলামে ‘নিষিদ্ধ’ বিষয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছে সঙ্গীত ইতিমধ্যেই। মূর্তি এবং অন্যধর্মের প্রতীক সম্পর্কে তালিবানের নীতি কতটা হীন ও হিংস্র তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রূপে দাঁড়িয়ে আছে বামিয়ান। সব মিলিয়ে শান্তিকামী, বৈষম্যহীন সমাজ এবং মানবাধিকারে বিশ্বাসী আফগানদের মন ভালো নেই। সামান্য কিছু ভাগ্যবান আফগান ভূমি ছেড়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। আর কিছু মানুষ এখনও লড়াই জারি রেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম পঞ্জশির। তালিবান-বিরোধী একের পর নেতা এবং সেনার প্রাণ গিয়েছে। তবু, নত হতে জানেন না তাঁরা। একদিকে, চলছে প্রতিরোধ বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং অসম প্রতিরোধ। অন্যদিকে, পাকিস্তান আর্মি ও গোয়েন্দাদের পূর্ণ সহায়তা নিয়ে তালিবান জঙ্গিরা দুরমুশ চালিয়ে যাচ্ছে তাঁদের উপর যাঁরা মানবাধিকারের দাবি উত্থাপন করেছেন। 
পাকিস্তানের এই অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে অবশেষে সরব হয়েছে ইরান। তবে, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন সঙ্গে থাকায় পাকিস্তান বাড়তি মনোবল নিয়ে কাবুলে সরকার গঠনের প্রধান কারিগর হয়ে উঠতে মরিয়া। তারা এও ঘোষণা করেছে, আফগানিস্তানকে নাকি তারা সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘর হয়ে উঠতে দেবে না। কোন পাকিস্তান? যে-দেশটির এক এবং একমাত্র লক্ষ্য ভারতের সর্বনাশ দেখা। কোন চীন? যে-দেশটি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের এই স্বপ্নপূরণের সঙ্গী। কোন রাশিয়া? সোভিয়েতের পতনের পর থেকে যে-রাশিয়ার বিদেশনীতি ভারতের জন্য আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। অস্ত্র রপ্তানির নেশায় রাশিয়ার একনায়ক পুতিন এখন সাপের মুখেই বেশি চুমু খেয়ে থাকেন। আগামী কাল, বৃহস্পতিবার ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ব্রিকস সম্মেলন। গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে থাকবেন রাশিয়া এবং চীনের প্রেসিডেন্টরা। নরেন্দ্র মোদির উচিত, এই বৃহৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের মনোভাবটি দৃঢ়ভাবে খোলসা করা। আফগানিস্তানে যদি শেষমেশ পাকিস্তানেরই ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তবে ভারতকে তার থেকে সহস্র হাত দূরেই থাকতে হবে। মানবাধিকার এবং সভ্যসমাজের রীতি লঙ্ঘনের ‘ঐতিহ্য’ যদি তালিবান এখনই ত্যাগ না করে তবে ভারতের জনগণ কোনও দিন তাদের পাশে থাকতে পারবে না। কারণ মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং বৈষম্যহীন সমাজই ভারতের মূল মন্ত্র। পাকিস্তান নামক নিকৃষ্টতম শক্তিকে তোল্লা দেওয়ার পরিণাম সম্পর্কেও সতর্ক করা কর্তব্য নয়া অক্ষশক্তির বাকি সদস্যদের।

8th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ