বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা

ভারতে গণতন্ত্রের সুরক্ষায় স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাজটা যোগ্যতার সঙ্গে সামলাতে পারলেই ভোটাররা কমিশনকে সাধুবাদ জানায়। ভোট ঘোষণার পর কমিশনের বিধি ও নির্দেশ মেনেই চলেন সবাই। স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাই পারে মানুষের ভরসা বাড়াতে। সেইসঙ্গে তাঁদের প্রাথমিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে। বাংলার ভোটেও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের সমর্থন ও আশীর্বাদ নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু শুরু থেকেই মমতার সরকারকে ম্যালাইন করার রাজনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বাংলার উপনির্বাচন নিয়েও টালবাহানা কম হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ১ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যে বকেয়া উপনির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। না হলে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষত ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচিত হয়ে আসার প্রসঙ্গও জড়িয়ে আছে। অবশেষে নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুরের উপনির্বাচন ও দুটি বিধানসভা কেন্দ্রের সাধারণ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করায় সেই জটিলতা কাটল বলেই মনে করা হচ্ছে। চলতি সেপ্টেম্বরেই ভোটগ্রহণ করে ফেলার উপযুক্ত সময় বলে সঙ্গত কারণ দেখিয়ে তৃণমূল আগেই কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল। তৃণমূলের দেওয়া যুক্তি যে অকাট্য ছিল তা ফের প্রমাণিত হল। কিছুটা হলেও মান্যতা পেল তাদের বক্তব্য।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠক কোনও অজানা কারণে বাতিল হয়ে যাওয়ায় বাংলার নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। কিন্তু শনিবারই ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচন ও দুটি কেন্দ্রের সাধারণ নির্বাচনের দিন ঘোষিত হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেল রাজ্যের শাসক দল। তবে ভবানীপুর ছাড়া বাকি চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষিত না হওয়ায় কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল চেয়েছিল বকেয়া সব ভোটই এই সেপ্টেম্বর মাসেই হয়ে যাক। কারণ এখন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিস ও ভোটকর্মীদের দু’ডোজের টিকাকরণও শেষ হয়েছে। বর্ষার সমস্যাও নেই। অতএব ভোটের উপযুক্ত সময় হতে পারে এ মাসই। অথচ বিজেপি যেন ভোট আটকাতেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের অনেকের অদ্ভুত যুক্তি ছিল, এখন ভোট না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ ভোট হলে প্রচারে লোক সমাগম হবে। করোনা সংক্রমণ বাড়বে। সন্দেহ নেই, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বিজেপি’র কেউ কেউ এই খেলো যুক্তি দিচ্ছেন। কারণ অনেক দাবি ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করেই গত মার্চ, এপ্রিল মাসে নজিরবিহীনভাবে আট দফায় যখন ভোট করেছিল কমিশন তখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আছড়ে পড়েছিল। প্রায় দু’মাস ধরে চলা নির্বাচনের সময়কালে ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে ‘নিশ্চিত’ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা একাধিকবার রাজ্যে এসে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আর সংক্রমণ বেড়েছে হু হু করে। তখন শত আপত্তি সত্ত্বেও কমিশন কোনও কথা কানে তোলেনি। এখন অবশ্য কমিশন বলছে, রাজ্যের বিশেষ অনুরোধে সাংবিধানিক প্রয়োজনে একটি কেন্দ্রের (ভবানীপুর) উপনির্বাচন ৩০ সেপ্টেম্বর হবে। বাকি চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন কবে হবে তা তারা জানায়নি। প্রশ্ন হল, তাহলে কি বাকি চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজেপি’র ছেঁদো যুক্তি অর্থাৎ করোনার বিষয়টাই প্রাধান্য পেল? তবে ভোটের ব্যাপারে টালবাহানা হলে ভোটাররা যে তা ভালোভাবে মেনে নেন না তা জলের মতো পরিষ্কার। কারণ গত প্রায় ছ’মাস ধরে রাজ্যের সাতটি কেন্দ্রে কোনও নির্বাচিত বিধায়ক নেই। সেখানকার ভোটাররা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। অথচ সেই অধিকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুনিশ্চিত করাই কমিশনের সবচেয়ে জরুরি কাজ। কমিশন সেই দায়িত্বটিই পালন করুক। 
রাজ্যে অক্টোবর মাসটা পুজোপার্বণের ছুটিতেই কেটে যাবে। রাজ্যের ভোটাররাও চেয়েছেন শারদোৎসবের ছুটির আগেই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব ভোটপর্বটি মিটে যাক। কিন্তু শুক্রবার কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠক বাতিল হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল শারদোৎসবের আগে বকেয়া নির্বাচনের কাজ সম্পূর্ণ হবে তো? আশঙ্কার কারণটি হল, নরেন্দ্র মোদির জমানায় স্বশাসিত নানা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বহু নজির আছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকানোই বিজেপি’র মূল উদ্দেশ্য। কমিশনের ঘোষণায় অনিশ্চয়তা কাটল। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে ভোটকে কেন্দ্র করে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছিল তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না বঙ্গবাসী। নিন্দুকদের অভিযোগ ছিল, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবহার করার চেষ্টা করে। এমন অভিযোগ যাতে কোনওভাবেই আর না উঠতে পারে তার নিশ্চয়তা দিক কমিশন। আশা করা যায়—জনগণ, গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কমিশন তার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যটি পালন করবে। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন যেন তাদের কথার কথা না হয়। আরও ভাবা দরকার বাকি চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন জানতেও অধীর অপেক্ষায় আছেন সেখানকার ভোটাররা।

5th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ