বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

মুক্তো ছড়ানো হচ্ছে উলুবনে

সিএমআইই-র সর্বশেষ (৫ জুন, ২০২১ তারিখের ৩০ দিনের চলমান গড়) রিপোর্ট অনুসারে ভারতের বেকারত্বের হার ১২.৭ শতাংশ। বেকারত্বের হার শহরের মানুষের মধ্যে ১৫.৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ মানুষের মধ্যে ১১.৫ শতাংশ। অথচ ২০২১ ক্যালেন্ডার বর্ষের প্রথম মাস জানুয়ারিতেও সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৫২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের শেষ দু’মাসে—ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও এই সংখ্যাটা ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। সংখ্যাটা ওই দু’মাসে ছিল যথাক্রমে ৬.৮৯ ও ৬.৫০ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি শুরু হয়েছে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম মাস বা এপ্রিল থেকে। ওই মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৯৭ শতাংশ। মে মাসে একলাফে হয়ে গেল ১১.৯০ শতাংশ! ২ জুন থেকে ১২ শতাংশ ছাড়াতে শুরু করেছে। ২ জুন বেকারত্বের হার নথিভুক্ত হয় ১২.১৪ শতাংশ। পর পর দু’দিন বিপদের দৈনিক বৃদ্ধি ঘটেছে যথাক্রমে ১২.৩৮ ও ১২.৫৮ শতাংশ হারে। বলা বাহুল্য, বেকারত্বের প্রতিটি সংখ্যার ভিতরে গ্রামের থেকে শহরের তুলনামূলক ছবিটা বেশি মন খারাপ করে দেওয়া। 
হ্যাঁ, এই ছবিটার জন্য করোনা পরিস্থিতি বেলাগাম হয়ে ওঠা সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু সেটাই বোধহয় সব নয়। অন্য একটা বড় কারণ তেলের দাম। তেলের দাম শুধু মে মাসেই বাড়ানো হয়েছে ১৭ বার! আন্তর্জাতিক বাজারদাম কিংবা ভারতে দামের ওঠানামার নিয়ম-রীতির তোয়াক্কা না-করেই এই কাণ্ডটা ঘটানো হচ্ছে। শুধু মে মাসের হিসেব বলছে, পেট্রল-ডিজেলের চাহিদা ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যার অন্যতম কারণ অগ্নিমূল্য। আজকের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে পেট্রল-ডিজেলের চাহিদার দিকটা। পেট্রল-ডিজেলের চাহিদা হ্রাস বা তার বিক্রি কমে যাওয়া অর্থনীতির বিপরীত গতি নির্দেশ করে। বুঝিয়ে দেয়, ভগ্নস্বাস্থ্য অর্থনীতি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে চলেছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহণের তাগিদ যে কমে গিয়েছে সেটা পরিষ্কার হয়। যখন চাহিদা এবং উৎপাদন যুগপৎ হ্রাস পায় পণ্য পরিবহণের প্রয়োজন কমে যায় তখনই। আমরা জানি, নানা ধরনের পণ্যের উৎপাদন এবং বণ্টন প্রক্রিয়াই হল কর্মসংস্থানের চাবিকাঠি। ফলে পরিবহণ শিল্প শ্লথগতি হয়ে পড়ার একটামাত্র ঘটনা অর্থনীতির নানাদিক উন্মোচন করে। এবার ওর সঙ্গে আরও ধরতে হবে শুধুমাত্র পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু শ্রমিকের কাজ হারাবার বাস্তবটা। 
এই লেখা শুরু হয়েছিল দেশের সাম্প্রতিক উদ্বগজনক বেকারত্বের হার বিশ্লেষণ দিয়ে। এবার সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যায়, খেয়ালখুশি মতো তেলের দাম বাড়ানোর মোদি-নীতি কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক অর্থনীতির কতটা ক্ষতি করে চলেছে। দেশের বেশিরভাগ রাজ্যই পুরো/আংশিক লকডাউনের কবলে। লোকাল ট্রেন পুরো বন্ধ। আমাদের দেশে সব্জি, ফলমূল, দুধ ও দুগ্ধজাত অন্যান্য পণ্য, মাছ, মাংসসহ বহু প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস লোকাল ট্রেনেই বাজারে পৌঁছয়। তাই যখন লোকাল ট্রেন বন্ধ তখন তেলের দাম সাধ্যের মধ্যে রাখাটা জরুরি ছিল। তার পরিবর্তে তেলের দাম হু হু করে বাড়ানো হচ্ছে! এর ফলে বহু জিনিসের দাম অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে। কোনও কোনওটা হয়ে গিয়েছে চতুর্গুণ! যখন ৯০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গিয়েছে এবং বহু কোটি মানুষ দেনার দায়ে জর্জরিত, তখন জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য মানুষকে ভয়ানক অসহায় করে তুলেছে। এতে যার পর নাই ক্ষুব্ধ নাগরিকরা। এর বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা। তেলের দামে সমতা আনার পরামর্শ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। কিন্তু এখনও কোনও লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে নীতি আয়োগ। তারা মনে করছে, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জেতার জন্য সরকারের কাছে নীতি আয়োগের আর্জি, তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবা হোক। দামটা সাধ্যের মধ্যে রাখতে মোদি সরকার কিছু একটা করুক। পরামর্শদাতা হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং নীতি আয়োগের এই ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু, ডান হাত ঠকলেও বাম হাতের কাছে কবুল করতে যে সরকারের ইগোয় বাধে, হাজার বিপদেও যে অন্যের সৎ পরামর্শ নেয় না, সে কি এসব গ্রহণ করবে? মনে হয়, সবাই মিলে উলুবনেই মুক্ত ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ভারতবাসীর আজ সত্যিই ছুঁচো গেলার অবস্থা! 

7th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ