বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

এ কোন মেক ইন ইন্ডিয়া?

ভারত কীভাবে দ্রুত গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে উঠবে? ভারতের পলিসি মেকারদের মধ্যে এটা ছিল দীর্ঘ দিনের এক বিতর্ক। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। মোদি সরকারের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের অল্পকাল পর, ওই দিন নরেন্দ্র মোদি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সূচনা করলেন। তিনি সেদিন দাবি করলেন, শিল্পে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অতীতের সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটবে এবার। নতুন সরকারের এই কর্মসূচি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারত সম্পর্কে উৎসাহিত করবে। এরপর থেকে তাঁরা ভারতের মাটিতেই বিনিয়োগ করে নিজ নিজ পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদন করবেন। অচিরে ভারতই হয়ে উঠবে বিদেশি বিনিয়োগের সেরা পীঠস্থান। মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে ভর দিয়েই মোদির ভারত বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো দুই মহারথীকে পিছনে ফেলে দেওয়ার সঙ্কল্প করেছিল। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল, নির্দিষ্ট ২৫টা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে ধরে দেশজুড়ে নতুন নতুন চাকরির ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক-কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নেওয়া। অনুমান করা যায়, ২০১৪ সালে ভোটের প্রচারে গেরুয়া শিবিরের প্রধান মুখ মোদি হয়তো এই প্ল্যান মাথায় রেখেই বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আরও নানারকম স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। যেমন—ভারত পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে উন্নীত হবে, ভারতই হয়ে উঠবে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতির বৃহৎ অর্থনীতি, আগামী দিনের বিশ্বগুরুর (ওয়ার্ল্ড লিডার) নামও ভারত প্রভৃতি। 
কিন্তু সাতবছর পর আজ দেশবাসীর ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে, মোদির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কি একথা এখনও অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন? আজকের নির্মম বাস্তবটা এই: আর্থিক বৃদ্ধির হার ভয়ঙ্করভাবে মুখ থবুড়ে পড়েছে। লেবার পার্টিসিপেশন রেট নিম্নমুখী। সাম্প্রতিক অতীতের অধিকাংশ ত্রৈমাসিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গিয়েছে বেকারত্বের হার। বিরাট ধাক্কা খেয়েছে রাজস্ব সংগ্রহ। রাজকোষ ঘাটতি সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে সর্বাধিক। তার ফলে রাজ্যগুলির অনেক ন্যায্য প্রাপ্য মেটাতে পারছে না মোদি সরকার। বিশেষ করে জিএসটির ক্ষতিপূরণ মেটাতে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে গিয়েছে নির্মলার কোষাগারের। বিপুল পরিমাণ ধারদেনা করেও থই মিলছে না। যেমন শুধু পশ্চিমবঙ্গই জানিয়েছে, তাদের দশমাসের পাওনা আটকে রেখেছেন নির্মলা, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এরপর আরও যে বড় মানবিক দিকটা অবহেলিত হচ্ছে তা হল, দেশবাসীর সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার সংগতি কেন্দ্রের নেই। এমনকী, করোনা ভ্যাকসিনকেও করমুক্ত করার অবস্থায় নেই এই সরকার। যেখানে কেন্দ্রের খয়রাতি পৌঁছবে না সেখানে রাজ্যগুলোকে চড়া দামে এই ভ্যাকসিন কিনতে হবে। আবার যাঁরা কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারেরই কৃপালাভে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের এই ভ্যাকসিন গাঁটের কড়ি খরচা করেই কিনে নিতে হবে। দেশের বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এখনও একটা ডোজ পাননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসেব: ২২ কোটি ৭৮ লক্ষ ৬০ হাজার ৩১৭ ডোজ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জন প্রতি দু’টো ডোজের হিসেবে সাড়ে ১১ কোটি মানুষেরও টিকাকরণ শনিবার পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। সরকারের হিসেবে, ১৮ ঊর্ধ্ব নাগরিকের মোট সংখ্যা ১০১ কোটি ৭০ লক্ষ। 
এর থেকেই অনুমান করা যায় যে ভারতে টিকাকরণ কর্মসূচি এখনও অথৈ জলে। সমস্ত বাস্তববাদী এবং বিবেকসম্পন্ন দেশ করোনা টিকাকরণকে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাদের দেশের সকলের টিকাকরণই এই মুহূর্তে সব দেশের এক নম্বর অগ্রাধিকার। সেখানে ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, এমনকী ছোট ছোট প্রতিবেশীদের থেকেও, দু’টো কারণে: অদূরদর্শী নেতৃত্ব এবং মানবিকতার ভয়ানক অভাব। এই সরকারের বাস্তববোধ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী কত ন্যূন তা টের পাওয়া গেল, আরও একটি পদক্ষেপে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা মেগা সাবমেরিন প্রকল্প অনুমোদন করল মোদি সরকার। একঝাঁক ডুবো জাহাজ নির্মাণ খাতে শুক্রবার ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল! ওইদিন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকের পর নৌবাহিনীর প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারের দাবি, স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রকল্প। দূর ভবিষ্যতে জলপথে বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার মতো সামরিক প্রস্তুতি নিশ্চয় থাকবে। কিন্তু সেটা কখনওই নাগরিকদের এই মুহূর্তের চরম বিপদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সামান্য ভ্যাকসিনের অভাবে যখন দেশে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে, যাঁদের মধ্যে আছে কত সম্ভাবনাময় প্রতিভাও, তখন এই সামরিক প্রকল্পের জন্য সরকারের অতি তৎপরতা আমাদের দুঃখিত করে। সব মিলিয়ে দেশকে বিরাট আতান্তরেই ঠেলে দিয়েছেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তথা ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উদ্গাতা নরেন্দ্র মোদি। 

6th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ