বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ক্ষুধার্ত শিশুর সঙ্গে বঞ্চনা

১৫ আগস্ট, ১৯৯৫। ভারতের ইতিহাসে একটা উজ্জ্বল দিন। কেন্দ্রীয় সরকার ওইদিন চালু করেছিল ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ নিউট্রিশনাল সাপোর্ট টু প্রাইমারি এডুকেশন। জাতীয় এই কর্মসূচিটার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল শিক্ষার বিস্তারে সহায়তা করা। বিশেষ করে যেসব ছোট ছেলেমেয়ে প্রাথমিক স্কুলে যায় তাদের খিদে ও পুষ্টির ঘাটতি দূর করা। প্রাথমিকভাবে সারা দেশের ২,৪০৮টা ব্লককে যুক্ত করা হয়। সরকারি, সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত এবং পুরসভা প্রভৃতি লোকাল বডির মাধ্যমে যেসব স্কুল চলে, তাদের প্রথম-পঞ্চম শ্রেণির বাচ্চাদের দুপুরের খাবার দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হল। দু’বছরের মধ্যে—১৯৯৭-৯৮ সালে প্রকল্পটি সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছিল, এই কর্মসূচির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিশুদের দৈনিক ৩০০ ক্যালোরি এবং ১২ গ্রাম প্রোটিনের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। ২০০৭ সালে পরিধি আরও বাড়ানো হল। যুক্ত হল ৩,৪৭৯টা পিছিয়ে পড়া ব্লকের ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদেরও। পাল্টে ফেলা হল কর্মসূচিটার নামও—ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ মিড ডে মিলস ইন স্কুলস। উল্লেখ্য যে, এই মানবিক ও শিক্ষানুরাগী কর্মসূচিটার সঙ্গে মাদ্রাজের একটা সম্পর্ক রয়েছে। ১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসন মাদ্রাজ কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রথম মিড ডে মিল চালু করেছিল। স্বাধীন ভারতে, ১৯৬২-৬৩ সালে তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারই প্রকল্পটা পুনরায় গ্রহণ করে। তখন মুখ্যমন্ত্রী কে কামরাজ। তিনি মাদ্রাজ (আজকের চেন্নাই) শহর দিয়ে শুরু করে সারা তামিলনাড়ুতে এর সুফল ছড়িয়ে দেন। শিক্ষার বিস্তারে প্রকল্পটার ম্যাজিকের মতো প্রভাব নিয়ে তারপর দেশজুড়ে চর্চা শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে কেরল সরকার তাদের রাজ্যেও প্রকল্পটি গ্রহণ করে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে বারোটি রাজ্য সরকার নিজ নিজ কোষাগার থেকে প্রকল্পটা চালাবার সিদ্ধান্ত নিল। আর পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও রাজস্থানের মতো কয়েকটা রাজ্য মিড ডে মিল কর্মসূচি চালাতে লাগল বিদেশি বা আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর নির্ভর করে। ১৯৯৭ সালে একটু অন্যভাবে এগিয়ে এল কর্ণাটক রাজ্য সরকার। 
অবশেষে এল ১৯৯৫ সালের সেই স্বাধীনতা দিবস। যেদিন কেন্দ্রীয় সরকার সারা ভারতের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের পুষ্টি বিধানের দায়িত্ব স্বীকার করে নিল। আমরা জানি, মিড ডে মিল একটা জাতীয় কর্মসূচি। সারা দেশের নানা ধরনের ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ১২ কোটির বেশি ছেলেমেয়েকে এখন পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কথা। এখন এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্যারান্টি স্কিম। শিক্ষার অধিকার, শিশুর অধিকার এবং খাদ্যের অধিকার রক্ষার মতো তিনটে জাতীয় সুরক্ষা আইনের রক্ষাকবচ দ্বারা মিড ডে মিল সুরক্ষিত। আইনটার আজকের যে বিশাল ব্যাপ্তি এর পিছনে নাগরিক আন্দোলন এবং শীর্ষ আদালতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে সারা পৃথিবী জেনেছে যে, দারিদ্রই হল সবচেয়ে বড় অভিশাপ। আবার দারিদ্রের কারণ অশিক্ষা ও ভগ্নস্বাস্থ্য। আর এই তিনে মিলে একটা দুষ্টচক্র। ইংরেজিতে যাকে বলে ভিশ্যাস সার্কেল। একটা শয়তান অন্যটাকে আঁকশির কায়দায় আটকে রাখে। আমাদের দেশের গরিবিটা এমন স্তরের যে কয়েক কোটি ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করার বয়সে আয় রোজগারের ধান্দায় নেমে যেত হতো। স্কুলে পাঠানো দূরে থাক, বাবা-মা তাদের সকলকে পেট ভরে খেতে দিতে পারত না। আট-দশ বছর বয়সে তারাই বরং বেরিয়ে পড়ত নিজের খিদের অন্ন জোগাড় করতে। পরিবারের আয়ের সঙ্গে অল্পস্বল্প টাকা যোগ করার দায়িত্বও পড়ত তাদের উপর। এই বাচ্চারা শুধু শ্রম বেচত না, কিছু বিপজ্জক কাজেও জড়িয়ে পড়ত। গত দু’-তিন দশকে শিক্ষার হার অনেকটা বেড়েছে। কমেছে স্কুলছুটের হার। শিশু শ্রমিকও অনেক কমানো গিয়েছে। 
এই তিন সাফল্যের জন্য মিড ডে মিল কর্মসূচিকে বিরাট কৃতিত্ব দিতেই হয়। তবে মনে রাখতে হবে, পূর্ণসাক্ষর হওয়ার থেকে ভারত এখনও (২০১১ জনগণার হিসেব অনুসারে) বহু যোজন দূরে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নারী শিক্ষার। সার্বিক সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ। সাক্ষরতার হার পুরুষের মধ্যে ৮২.১৪ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে ৬৫.৪৬ শতাংশ। স্কুলছুট এবং শিশুশ্রম নির্মূল করাই ভারতের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। মিড ডে মিল স্কিমের আরও বিস্তার এবং দ্রুত উন্নতি বিধানই দেশকে ওই লক্ষ্যে উন্নীত করতে পারে। সেখানে স্কিমটার রূপায়ণে গাফলতি এবং নানা ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি চিহ্নিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ এবং খোদ কলকাতাকেও খুঁজে পাওয়া যায় তার মধ্যে। দুর্বল ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার এই পৈশাচিকতার জন্য কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়। দেশীয় আইনে চরমতম সাজাই এদের প্রাপ্য। দারিদ্রমুক্ত ভারতের বীজ নিহিত এমনই কঠোর মানবিক পদক্ষেপগুলোর অন্দরে।  

5th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ