বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

নজরে কালাধন 

ভোট এলেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে খবরটা। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর ভোট শেষ হলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে উঠে আসা তথ্য জানান দেয়, সংশ্লিষ্ট সেই নির্বাচনে কতটা কালো টাকার খেলা হল, কত কালো টাকা বাজেয়াপ্ত হল ইত্যাদি। এই ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। তবু একথা ঠিক যে কালো টাকার ব্যবহার আটকাতে কমিশনকে উদ্যোগী হতেই হবে। না-হলে লাগামছাড়া হবে কালো টাকার রমরমা। তাই কালো টাকার ব্যবহার রুখতে এবারেও উদ্যোগী কমিশন। ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাসহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের দামামা বাজতেই কমিশনের নির্দেশে আসরে নেমেছে আয়কর দপ্তর। ‘ইলেকশন এক্সপেন্ডিচার মনিটরিং সেল’—এই নামে কমিশনের চালু করা সেলের মূল দায়িত্বও থাকে আয়কর দপ্তরের উপর। এবার টোল ফ্রি নম্বর, ই-মেল, ফ্যাক্স নম্বর ও হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দিয়ে জনগণের সাহায্য চেয়েছে আয়কর দপ্তর। অর্থাৎ কোথাও কালো টাকার লেনদেন হচ্ছে জানতে পারলে তাঁর নাম ঠিকানা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সেকথা আয়কর দপ্তরকে জানানোর আবেদন। নিঃসন্দেহে সাধু উদ্যোগ। কারণ কোনও প্রশাসনেরই একার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই জনগণের তরফে এক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা পেলে এই কাজে সফল হওয়া সম্ভব।
ভোট প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের খরচ বেঁধে দেয় নির্বাচন কমিশন। তাতে আবার নানা ভাগ থাকে। নিয়ম হল, এই বেঁধে দেওয়া অর্থ দিয়েই একটি দল বা প্রার্থী প্রচারসহ যাবতীয় কাজ করবেন। ভোটের পর সব প্রার্থীকেই হিসেব নিকেশ লিখিতভাবে জানাতেও হয়। প্রার্থী ও দলগুলি নিয়ম মেনে চলছে কি না তা দেখার জন্য আলাদা পর্যবেক্ষকও নিয়োগ করে কমিশন। এসবই অবশ্য আদর্শ আচরণবিধির কথা। অনেকটা সদা সত্য কথা বলিবার মতো। কিন্তু ক’টি দল বা ক’জন প্রার্থী অক্ষরে অক্ষরে তা মেনে চলেন? ভোটে রাজনৈতিক দলকে এবং প্রার্থীদের ‘সাহায্য’ করতে টাকার ঝোলা নিয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়ীদের অনেকে। এরসঙ্গে অবশ্যই তাঁদের বিশেষ স্বার্থ জড়িত থাকে। তাই এই বিষয়টি আর এখন অভিযোগ নয়, একেবারেই সত্য ঘটনা। ভোট যেন অনেকের সামনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এনে দেয়। বিগত একাধিক নির্বাচনে টাকা বোঝাই গাড়ি বা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হানা দিয়ে প্রচুর কালো টাকা বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। ওই টাকাগুলি কোন ‘সাধু’ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হতো তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশের বহু মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে। ভয় দেখিয়ে বা টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার বিষয়টি খুব একটা কষ্টসাধ্য নয় কোনও প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের কাছে। ভোটারকে প্রভাবিত করার এমন অপচেষ্টা রুখতেই নির্বাচন কমিশন এবং আয়কর দপ্তরের কড়া পদক্ষেপ জরুরি। যাতে নগদে কিংবা অন্য কোনও উপায়ে অবৈধ লেনদেন বন্ধ করা যায়। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ যাতে কালো টাকা বা বেআইনি লেনদেনের হদিশ দিতে পারেন সেজন্য ইনভেস্টিগেশন উইং আয়কর দপ্তরে অস্থায়ী সেল চালু করেছে, যা ২ মে ভোট গণনা পর্যন্ত চালু থাকবে। উদ্যোগকে স্বাগত। তবে সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে এ কাজে এগিয়ে আসতে পারেন তার জন্য তাঁদের নিরাপত্তার দিকটিতেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেই ভরসাটুকু দিক নির্বাচন কমিশন।
গণতন্ত্রে ভোটারদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত হন, অন্য প্রার্থী হন পরাজিত। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করলে ভোটারের আস্থা নিঃসন্দেহে অনেকখানি বেড়ে যায়। যে-কোনও দায়িত্বশীল নাগরিকই চান ভোটে কালো টাকার রমরমা বন্ধ হোক। বন্ধ হোক ভোটারকে প্রলোভিত করার যাবতীয় অপপ্রচেষ্টা। নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তাই পারে ভোটে কালো টাকার ব্যবহার রুখতে। আশা করা যায়, ভোটকেন্দ্রিক খরচের উপর কড়া নজরদারি চালিয়ে কমিশন মানুষের মনে এ ব্যাপারে জেগে ওঠা যাবতীয় সংশয়ের অবসান ঘটাবে। মানুষ চায় না অতীতের কয়েকটি নির্বাচনের মতো এবারেও কালো টাকার ‘খেলা’ হোক। সাধারণ মানুষ ভোটে টাকার বেআইনি লেনদেনের হদিশ দিতে তখনই আগ্রহী হবেন যখন তাঁরা দেখবেন তাঁদের নিরাপত্তার জন্য নিশ্ছিদ্র প্রহরার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। না-হলে যাবতীয় ভালো উদ্যোগ মাঠে মারা যাবে। 

2nd     March,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ